দুর্নীতি-অনিয়ম তদন্তে অডিটর নিয়োগ দিচ্ছে আইডিআরএ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৩১ পিএম

দেশের বিমা খাতে গত সাত বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে আয়-ব্যয়, ব্যবস্থাপনা ব্যয়সহ বিমা কোম্পানির অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে দ্বিতীয়বারের মতো অডিটর (বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান) নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
প্রায় দুবছর বন্ধ থাকার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতিক্রমে সরকারি-বেসরকারি মোট ৭৮টি কোম্পানির অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে অডিটর নিয়োগের উদ্যোগ নিচ্ছে এ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। সর্বশেষ বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যা পালনে শিগগিরই চিঠির মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেয়া হবে বলে আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রে জানা যায়, বিমা আইনে প্রতি বছর কোম্পানিগুলোকে আয়-ব্যয় খতিয়ে দেখতে বিশেষ অডিট করার নির্দেশ রয়েছে। তবে ২০০৭ সালের পর থেকে কোনো কোম্পানি অডিটর নিয়োগ করছে না। তাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতিক্রমে এ উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অডিট হলেই বিমা কোম্পানির প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে। এতে বিমা গ্রাহক ও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ উভয়ই লাভবান হবে। ফলে বিমা নিয়ে সাধারণ মানুষের নেতিবাচক ধারণার পরিবর্তন হবে।
আইডিআর সূত্রমতে, প্রথম পর্যায়ে মাত্রাতিরিক্ত অনিয়মের অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোতে নিরীক্ষা চালানো হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে সব কোম্পানিতেও অডিটর নিয়োগ হবে।
এ ব্যাপারে আইডিআরএর সদস্য ও মুখপাত্র গকুল চাঁদ দাস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিমা আইন অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন বিমা কোম্পানিগুলোতে নানা ধরনের অনিয়ম চলে আসছে। বিমা শিল্পের সংস্কার আনতেই আমাদের এ পদক্ষেপ।
বিমা আইনের ২৯ ধারা বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিমা ব্যবসা পরিচালনাকারী সব কোম্পানির বিমা সংক্রান্ত লেনদেন, রেকর্ডপত্র, দলিল প্রবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত এক বা একাধিক অডিটরের মাধ্যমে অডিট করবে। তবে শর্ত থাকে যে, এ ধারার অধীনে কোনো বছরের হিসাব অডিটের জন্য নিযুক্ত অডিটর এবং ধারা ২৮’র নিযুক্ত অডিটর একই ব্যক্তি হতে পারবেন না।
সূত্র আরো জানায়, বিশেষ নিরীক্ষায় কোম্পানির আয়-ব্যয়, ব্যবস্থাপনাসহ কোম্পানির অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হয়। এর ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কোম্পানির অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। তবে বিশেষ অডিট প্রায় এক যুগ ধরে বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কমিশন বাণিজ্যসহ নানা ধরনের অব্যবস্থাপনায় জড়িয়ে পড়েছে খাতটি।
২০১৬ সালে এম শেফাক আহমেদের নেতৃত্বাধীন আইডিআরএ কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ পাঁচ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। লাইফ-নন লাইফ মিলে প্রায় অর্ধশত কোম্পানিকে অডিটর নিয়োগের জন্য চিঠি দেয়া হয়। এর মধ্যে ৮টি কোম্পানি অডিটর নিয়োগ দেয়ার পর প্রতিবেদনও আইডিআরএতে জমা দেয়। এরপরই ২০১৭ সালের ফেব্রæয়ারিতে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বিধিমালা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স (সাধারণ বিমা) কোম্পানিতে বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান (অডিটর) নিয়োগ বন্ধে আইডিআরএকে নির্দেশ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। তার কিছুদিন পর লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোতে বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলা হয়। আইডিআরএ কর্তৃপক্ষও বিশেষ নিরীক্ষা বন্ধ করে দেয়।
এদিকে প্রায় দুবছর পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও বর্তমান আইডিআরএর চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর নেতৃত্বে অডিটর নিয়োগের উদ্যোগ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। কাজটি সঠিকভাবে করতে পারলে বিমা কোম্পানিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি অর্ধেক কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।