রাজস্ব বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে আইআরডি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০৪:১৮ পিএম

আগামী ২০২১ সালের মধ্যে রাজস্ব আদায়ের ৫০ শতাংশ আয়কর খাত থেকে আহরণের চিন্তা চলছে। ফলে আয়কর খাত থেকে রাজস্ব আদায় বাড়াতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) কর আদায় ব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কারসহ বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। এই বিষয়ে ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
স¤প্রতি অর্থমন্ত্রীর জন্য একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে আইআরডি। এতে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের অব্যাহত অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পর্যাপ্ত রাজস্ব সংগ্রহ করা আবশ্যক।
উন্নয়ন অর্থায়নের জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পর্যাপ্ত রাজস্ব সংগ্রহকে টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট (এসডিজি)-এর অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের কর জিডিপির বর্তমান অনুপাত ১০ শতাংশের মতো। মধ্যমেয়াদি রাজস্ব কৌশলে কর-জিডিপি অনুপাত ১৬ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কর-জিডিপি অনুপাত ১৬ শতাংশে উন্নীত করতে হলে আগামী বছরগুলোতে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ হারে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন হবে।
এতে বলা হয়েছে, বাজার অর্থনীতির কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে আয় ও বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। আয় ও সম্পদ বৈষম্য নিয়ন্ত্রণে রেখে একটি ন্যায্য ও সুষম বন্টনভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য । আয়কর একটি আদর্শ প্রগ্রেসিভ কর ব্যবস্থা যেখানে অধিক সম্পদশালীদের কাছ থেকে অধিকহারে কর আদায় করা সম্ভব হয়। ফলে আয়করের মাধ্যমে এক সঙ্গে দুটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য পূরণ হয়, ১. রাজস্ব আহরণ এবং ২. সমাজে আয় ও সম্পদের বন্টন-বৈষম্য নিয়ন্ত্রণ। এ কারণে উন্নত দেশগুলো রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি আয়কর খাতে আদায় করে। উন্নত বিশ্বের মত বাংলাদেশও একটি আদর্শ ও বন্টন-সহায়ক কর ব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্য স্থির করেছে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেটে দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে মোট রাজস্বের ৫০ শতাংশ আয়কর খাতে আদায়ের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।
আইআরডি বলছে, বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশের আয়কর খাতে প্রবৃদ্ধি কাঙ্খিত মাত্রার চেয়ে কম হচ্ছে। দেশের কর ব্যবস্থা যুগোপযোগী না হওয়ায় তা কাঙ্খিত পর্যায়ে রাজস্ব সংগ্রহে সমর্থ হচ্ছে না। কর জিডিপি অনুপাত মধ্য মেয়াদে ১৬ শতাংশ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ২০ শতাংশে উন্নীত করতে হলে দেশের কর ব্যবস্থাকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী ও যুগোপযোগী করতে হবে। দেশে একটি সমৃদ্ধ কর সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে একদিকে কর সেবার সামর্থ্য বাড়াতে হবে, অন্যদিকে দক্ষ কর তথ্য ব্যবস্থাপনা ও জোরালো এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে কর ফাঁকির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। কর কাঠামোর সংস্কার সম্পর্কে বলা হয়েছে, কর বিভাগের সর্বশেষ কাঠামোগত সংস্কার সম্পন্ন হয়েছিল ২০১১ সালে। সে সময় আয়কর রিটার্ন দাখিলকারী করদাতার সংখ্যা ছিল মাত্র ৮ লাখ। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের শেষ নাগাদ এ সংখ্যা ২২ লক্ষ অতিক্রম করবে বলে আশা করা করা যায়।
অর্থাৎ এ কয়েক বছরে আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে, কিন্তু কর ইউনিট বা জনবলের আর কোন স¤প্রসারণ হয়নি। ফলে একই সংখ্যক ইউনিট ও জনবল নিয়ে বিপুল বর্ধিত সংখ্যক করদাতাকে করসেবা দেয়া ও তাদের কর পরিপালন নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে কর আদায়ের প্রবৃদ্ধির গতি কমছে এবং কর ফাঁকি বাড়ছে।