এক মাসেই ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে তিনগুণের বেশি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০০ এএম

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর এই সংখ্যা চতুর্থ সর্বোচ্চ। ছবি : সংগৃহীত
গত এক মাসের ব্যবধানে সারাদেশে মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত এবং মৃত্যু বেড়েছে। হাসপাতালেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। ডেঙ্গুর এই দাপট এ বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
১ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশের হাসপাতালে দৈনিক নতুন এবং হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত কয়েকদিন রোগী বেড়েছে কয়েকগুণ। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সারাদেশের হাসপাতালে ২৩৬৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। ওই সাতদিন দৈনিক গড়ে ৩৩৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। সেপ্টেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহে রোগী ভর্তি হয়েছে ৫৪৫৭ জন, দৈনিক গড়ে ৭৭৯ জনের বেশি।
আর ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে রোগী ভর্তি হয়েছে ৫৫৫৬ জন, দৈনিক ভর্তি রোগীর গড় ১১১১ জনের বেশি। সে হিসাবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে দৈনিক ৭৭৩ জনের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে।
১ সেপ্টেম্বর সারাদেশের হাসপাতালে ভর্তি ছিল ১৪১৭ জন ডেঙ্গু রোগী। এক মাস পর অক্টোবরের ১ তারিখে হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৩৪৯৫ জন। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৮৪২ জন, দৈনিক গড়ে ১৪০৬ জন। সেখানে ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি আছে ১৭ হাজার ২৫৫ জন, দৈনিক গড়ে হাসপাতালে ছিলেন ৩৪৫১ জন।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৪ হাজার ৪৩৮ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর এই সংখ্যা চতুর্থ সর্বোচ্চ।
বৃহস্পতিবার ঢাকার জাতীয় শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের ডেঙ্গু কর্নারে ৩৭টি শিশু ভর্তি ছিল। এছাড়া ওই হাসপাতালের বহির্বিভাগে অনেক শিশু চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। রোগীর চাপ বাড়ায় শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, গত কয়েকদিন ডেঙ্গু নিয়ে আসা শিশুর সংখ্যা আরো বেড়েছে। হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্নার শুরুতে ১৬ শয্যার করা হলেও পরে শয্যা বাড়িয়ে ২৪টি, বৃহস্পতিবার ৩৪টি করা হয়েছে। এর বাইরে অন্য ওয়ার্ডে ভর্তি আছে তিনটি শিশু।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুরা জ্বরের পাশাপাশি অন্যান্য জটিলতা নিয়েও আসছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের অনেকের ফুসফুসে পানি, হার্টে পানি জমছে। কারো প্রস্রাব কমে যাওয়া, পেটব্যথা হচ্ছে। বাচ্চারা হঠাৎ শকে চলে যাচ্ছে, এটাই আমাদের জন্য উদ্বেগের। আজও তিনটা বাচ্চা শকে চলে গেছে। তাদের আইসিইউতে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মহাখালীতে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে ১৫৩ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন। ঠিক এক মাস আগে ৩ সেপ্টেম্বর ভর্তি ছিলেন ৩৭ জন রোগী।
সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার মিরপুরে বেসরকারি এম আর খান শিশু হাসপাতালে ২৫টি শিশু ভর্তি ছিল।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু প্রতিরোধে নানা কার্যক্রমে নেয়ার কথা বললেও প্রতিদিনই বিভিন্ন অভিযানে পাওয়া যাচ্ছে এইডিস মশার লার্ভা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রতিদিন ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালায়। ডিএনসিসির তথ্যে দেখা গেছে, প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন স্থাপনায় এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে।
ডিএনসিসি বলছে, ১ অক্টোবর ৬২৭৮টি স্পট পরিদর্শন করে ৪১টিতে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। ২ অক্টোবর ৬৩৮২টি স্পট পরিদর্শন করে ৫১টি এবং ৩ অক্টোবর ৪১৮৯টি স্পট পরিদর্শন করে ২৩টি জায়গায় মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশা নিয়ন্ত্রণ কিংবা নিধন কর্মসূচি সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে এ সময় ঢাকায় এইডিস মশার বিস্তার বাড়ার আশঙ্কা আগে থেকেই করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত মশার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। চুক্তির বাধ্যবাধকতা থাকায় ওই জরিপের ফলাফল জানাননি কবিরুল বাশার। তবে তিনি বলেছেন, ঢাকার সব এলাকায় মশার ঘনত্ব ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রার একক ব্রুটো ইনডেক্স অনেক বেশি।
২০২৩ সালে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন, ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন এবং ২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৭৭ জনের। বাংলাদেশে এর আগে ২০২৩ সালে ২৮১ জন, ২০১৯ সালে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। সে হিসাবে এ বছর শেষ হওয়ার আগেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখল বাংলাদেশ। এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়। অক্টোবরের প্রথম চারদিনেই মারা গেছে ১৪ জন।
এর আগে জানুয়ারি মাসে ১৪ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩ জন, মার্চ মাসে ৫ জন, এপ্রিল মাসে ২ জন, মে মাসে ১২ জন, জুন মাসে ৮ জন, জুলাই মাসে ১২ জন এবং অগাস্ট মাসে ২৭ জনের মৃত্যু হয় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে।
আরো পড়ুন : ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরো ৩১৭, নেই মৃত্যু