ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন প্রবীর মিত্র, দাফন নিয়ে যে সিদ্ধান্ত

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৩ এএম

২০১৮ সালে আজীবন সম্মাননা বিভাগে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়। ছবি : সংগৃহীত
বাংলা সিনেমার খ্যাতমান অভিনেতা প্রবীর মিত্রের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের শোবিজ অঙ্গনসহ তার ভক্ত-অনুরাগীদের মধ্যে। রবিবার (৫ জানুয়ারি) রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ৮১ বছর বয়সী এই কিংবদন্তী অভিনেতার।
অভিনেতার পরিবারের পক্ষ থেকে তার জানাজা ও দাফন নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন প্রবীর মিত্র। তাই দাফন নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে, তা নিয়ে ছিল অনেকের প্রশ্ন। সে বিষয়ে আগেই খোলাসা করেছিলেন অভিনেতা মিশা সওদাগর। তিনি জানিয়েছেন, প্রবীর মিত্র ভাই মুসলামনই ছিলেন। ধর্মমতে তার জানাজা হবে এবং দাফন হবে।
দাফন নিয়ে অভিনেতার ছেলে মিঠুন মিত্র রবিবার রাতে জানান, রাতে গোসল শেষে ফ্রিজার গাড়িতে প্রবীর মিত্রের লাশ ধানমন্ডির বাসায় রাখা হবে। সোমবার বাদ যোহর এফডিসিতে প্রথম জানাজা হবে। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে চ্যানেল আইতে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।
জানা গেছে, বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা নিয়ে ১৩ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শরীরে অক্সিজেন–স্বল্পতাসহ বেশ কিছু অসুস্থতায় গত ২২ ডিসেম্বর তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।
আরো পড়ুন : শক্তিমান অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই
প্রবীর মিত্রর পারিবারের সদস্যরাই জানিয়েছেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর প্রবীর মিত্রের নাম পরিবর্তন করা রাখা হয়েছিল হাসান ইমাম। কিন্তু সে নামে পরিচিতি পাননি তিনি। আমৃত্যু প্রবীর মিত্র হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত এই অভিনেতা।
এক সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্র নিজে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। সেই সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্রকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তো কনভার্ট হয়েই ওর মাকে (স্ত্রী) বিয়ে করেছিলাম। তখন মুসলমান হয়েছিলাম। তখন প্রয়োজন হয়েছিল মুসলমান হওয়া, এখনো সে ধর্মেই আছি।’
১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। তার পুরো নাম প্রবীর কুমার মিত্র। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন। স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম প্রবীর মিত্র ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। যদিও চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করেও তিনি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন।
‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয়–পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’সহ চার শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
৯৮২ সালে তিনি বড় ভাল লোক ছিল চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৮ সালে আজীবন সম্মাননা বিভাগে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়।