নরসুন্দায় অতিথি পাখি ‘অতিথি’ হয়ে থাকতে পারছে না

হারিছ আহমেদ, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০২ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
আমাদের গৃহে কোনো অতিথি এলে আমরা ভীষণ খুশিই হই। অতিথি সেবায় সাধ্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। আদর-আপ্যায়নে আমাদের কোনো কমতি থাকে না। তবে দুঃখজনকভাবে হলেও সত্য যে, কিশোরগঞ্জ শহরের মুক্তমঞ্চে আসা অতিথি পাখিদের সঙ্গে এর উল্টোটাই ঘটেছে।
ভিনদেশ থেকে আসা অতিথি পাখিদের অভ্যর্থনা কিংবা কোনো বরণ ডালার ব্যবস্থাতো দূরে থাক। নেই পাখিদের যত্ন-আথিত্যের কোনো আয়োজন। উল্টো নরসুন্দা নদীর দখল আর দূষণের কবলে পাখিদের অভয়ারণ্য আজ হুমকির মুখে।
প্রতিবছর শীত মৌসুমে কিশোরগঞ্জ শহরের মুক্তমঞ্চ এলাকায় দেখা মেলে বাহারি রকমের অতিথি পাখিদের। পাখিগুলো নরসুন্দা নদীর পাড়কে সারাক্ষণ মুখরিত করে রাখে। দলবেঁধে পাখিগুলো যখন আকাশে ওড়ে, তা দেখে মন ভরে যায় প্রকৃতিপ্রেমীদের।
অন্য বছরের ন্যায় এ বছর অতিথি পাখির সংখ্যা বাড়লেও নরসুন্দা নদী দখল আর দূষণে অভয়ারণ্য হারাতে বসেছে তার সৌন্দর্য। কচুরিপানার ভিড়ে আগের মতো অতিথি পাখিদের পরিস্কার পানিতে ডুব-সাঁতার কাটতে দেখা মিলছেনা। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিক রায়হান জামানের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, প্রতিবছর শীত মৌসুমে আমাদের জেলা শহরের মুক্তমঞ্চ এলকায় নরসুন্দা নদীর আশপাশে এই অতিথি পাখিদের বিচরণ দেখতে পাওয়া যায়। শীতের শুরুতেই ওরা আসে ঝাঁকে ঝাঁকে। নানা রংয়ের অতিথি পাখির কোলাহলে মুখরিত হয় নদীপাড়। কিন্তু নরসুন্দা নদী কচুরিপানার দখলে থাকায় পানি দূষণে ভিনদেশ থেকে আসা পাখিরা বিপাকে পড়েছে। তাই অতিথি পাখিদের আপ্যায়নে মুক্তমঞ্চের কিছুটা অংশ পরিস্কার করলে অতিথি পাখিদের ডুব-সাঁতার কাটতে সুবিধা হবে। প্রকৃতিপ্রেমীরাও পাখিদের ডুব-সাঁতার কাটা উপভোগ করতে পারবে।
এ বিষয়ে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও পরিবেশবাদী অধ্যাপক মো. রেহাস উদ্দিন জানান, পরিযায়ী পাখিদের এ অভয়ারণ্য রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। গত বছর আমি নিজ উদ্যোগে মুক্তমঞ্চের কিছু অংশ পরিস্কার করেছিলাম। সেখানে পাখিরা ডুব-সাঁতার কাটতে পারতো। এবার আর সেই ব্যবস্থা নেই। দখল ও দূষণমুক্ত করে অতিথি পাখিদের জন্য নরসুন্দাকে নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তোলতে প্রশাসনে কাছে দাবি জানাই।
গুরুদয়াল সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মোফাজ্জল হোসেন দাবি করেন অন্য বছরের তুলানায় অতিথি পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ কচুরিপানার কারণে অনেকেই বরশি ও জাল দিয়ে মাছ ধরতে আসতে পারতেছে না। তাই পাখিরাও ওই সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে কচুরিপানার থেকে খাবার গ্রহণ ও এখানেই ডিম পাড়তে পারছে। তবে মুক্তমঞ্চের কিছুটা অংশ পরিস্কার করলে অতিথি পাখিদের ডুব-সাঁতার কাটতে সুবিধা হবে। প্রকৃতিপ্রেমীরাও পাখিদের ডুব-সাঁতার কাটা দেখে উপভোগ করতে পারবে। অতিথি পাখিরা শুধু নরসুন্দার মুক্তমঞ্চের সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, নরসুন্দা নদী নিয়ে পরিকল্পনা ও সমীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। এ সমীক্ষার ভিত্তিতে খুব শিগগিরই প্রকল্প প্রস্তাবনা দাখিল করা হবে। আর ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নরসুন্দা নদীতে পানি প্রবাহ ফিরে আসবে।