×

অপরাধ

২ স্কুলশিক্ষকের যৌন হয়রানিসহ দুর্নীতি, তদন্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ধামাচাপার অভিযোগ

Icon

সাধন দাস, রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০২ পিএম

২ স্কুলশিক্ষকের যৌন হয়রানিসহ দুর্নীতি, তদন্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ধামাচাপার অভিযোগ

ছবি: ভোরের কাগজ

   

নরসিংদীর রায়পুরায় বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের বাঁশগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধানশিক্ষক আফাজ উদ্দিন এবং সহকারী শিক্ষকের (গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান) বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শেষে রিপোর্ট দেয়া নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও তদন্ত কর্মকর্তাদের ওপর বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এর আগে গত ২০ অক্টোবর বাঁশগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকের কাছে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আলাদা অভিযোগপত্র দাখিল করে শিক্ষার্থীরা। আফাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রীদের গাঁ ঘেঁষে বসা, শরীরে হাত দেয়া, ছাত্রীদের ওড়না নিয়ে বাজে মন্তব্য করাসহ অশালীন ইঙ্গিতের অভিযোগ করা হয়। বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় প্রেমের জালে ফেলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। ২০১০ সালে মেয়েটি এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পরিবারের চাপে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কথাও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া যৌন নিপীড়নের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিকবার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা হলেও স্থায়ী সমাধান বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন করতে পারেনি। 

একই বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ক সহকারী শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে জানা গেছে, নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর তার গ্রন্থাগারে সার্টিফিকেট জাল করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক হওয়ার অভিযোগ উঠে। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষককে দোষারোপের পাশাপাশি হুমকি দেন। অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, গাইড বই, রঙ পেন্সিল, খাতা তৈরির নামে কাগজ বিক্রয়, শিক্ষার্থীদের ফেল করানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে কোচিং, ছাত্রীদের শরীরে হাত দিয়ে স্পর্শ করে শাসন করারও অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।

এজন্য ২০১৮ সালে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিচারে দোষী প্রমাণিত হয়ে শাস্তিস্বরূপ ১ মাসের জন্য কর্মবিরতি এবং এ স্কুলে শিক্ষক থাকা অবস্থায় ছাত্রীদের কোনো ক্লাস নিতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহনের কথা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। তবে সময়ের সঙ্গে বিষয়টিতে সবার চোখে ধূলো দিয়ে প্রতিনিয়তই মেয়েদের ক্লাস নিতেন জসিম মিয়া। এছাড়া সম্প্রতি এক মেয়ের সঙ্গে তার নগ্ন ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সামাজিক প্লাটফর্মে। বিষয়টি এলাকার সব বয়সী মানুষের দৃষ্টিগোচর হলে ওই শিক্ষককে নিয়ে পুরো স্কুলসহ ইউনিয়নজুড়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রধানশিক্ষকের কাছে আলাদা অভিযোগপত্রে বিদ্যালয়টির প্রায় অর্ধশতকের বেশি শিক্ষার্থী স্বাক্ষর প্রদান করে। ক্লাস ছেড়ে উভয় শিক্ষকের শিক্ষকতা বাতিলে মাঠে নেমে পড়ে শিক্ষার্থীরা। পরে তাৎক্ষণিক বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাতুল হাসান জাকির শিক্ষার্থীদের বিষয়টিতে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস জানিয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনেন। সেদিনই বিদ্যালয়ে কর্মরত ১২ জন শিক্ষক এবং ইউপি চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত এক নোটিশে শিক্ষক জসিম উদ্দিন ও আফাজ উদ্দিনকে সাময়িকভাবে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। 

ঘটনাটি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসলে গত ২২ অক্টোবর তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রশাসন। এতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সামালগীর আলমকে আহ্বায়ক এবং উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সৈয়দ ইয়াসিন ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জামাল উদ্দিনকে সদস্য করা হয়। আদেশ পাওয়ার পর ৭ নভেম্বর সরেজমিনে তদন্তে যান গঠিত ওই তদন্ত কমিটির সদস্যরা। সেখানে গিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং তদন্ত কমিটির প্রধান সামালগীর আলম অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বেতন পরিশোধের নির্দেশ দেন।

ফলে শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মাঝে চাপা ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়। কমিটি তদন্ত করে আসার দীর্ঘদিন অতিবহিত হলেও এখনও শিক্ষার্থীদের নজরে আসেনি কোনো প্রতিবেদন। এবার তদন্ত কমিটিকে নিয়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সমাজের সচেতন মহলে সৃষ্টি হয়েছে নানা আলোচনা। এলাকার চা স্টলগুলোতেও চায়ের কাপে সমালোচনার ধোয়া তুলছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে কিনা, এমন সংশয়ও তৈরি হচ্ছে জনমনে। বিষয়টিতে দ্রুত প্রতিকার চাচ্ছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ গ্রামবাসী।

এ ব্যাপারে বাঁশগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জসিম উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি তার ওপর আনা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, এসকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। বাঁশগাড়ির একটি চক্র এখানে শিক্ষার্থীদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে এসব করাচ্ছে। আরেক অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক আফাজ উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

এ প্রসঙ্গে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হাসান রাতুল বলেন, বিষয়টি এখন উপজেলা প্রশাসন দেখবে বলে জানিয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তদন্ত কমিটি রিপোর্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে দাখিল করার কথা শুনেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত রিপোর্ট সর্ম্পকে আমরা কিছুই জানতে পারিনি।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটির প্রধান সামালগীর আলমের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের রিপোর্ট ইউএনও'র কাছে জমা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের আগামী মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। অভিযোগের সত্যতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে শিক্ষার্থী ও এলাকার লোকজনের বক্তব্যে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App