জেসিআই বাংলাদেশ
স্বৈরাচারের দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ এএম

জেসিআই বাংলাদেশ। গ্রাফিক্স: ভোরের কাগজ
৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তবে দীর্ঘ প্রায় চার মাস পার হলেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে আওয়ামী লীগের দোসররা। এমনকি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নির্বিচারে ছাত্র হত্যায় নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের নেতারাও রয়েছে বহাল তবিয়তে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অন্য কর্মকর্তারাদের মাঝে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্বৈরাচারের দোসররা এখনো সক্রিয় এমন একটি প্রতিষ্ঠানের নাম জেসিআই নামক একটি প্রতিষ্ঠান।
গেল ২৩ নভেম্বর এই সংগঠনটির কর্মকর্তারা ড. ইউনুস সরকারকে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বরাবর দেওয়া সেই চিঠিটি দেওয়া হয়। চিঠিতে তারা স্বৈরাচারের দোসরদেরকে দ্রুত অপসারণের দাবি করেছেন। এতো দিনেও ফ্যাসিবাদের দোসরদের উচ্চ পদে টিকে থাকাটা দু:খজনক বলে উল্লেখ করেন তারা।
সেই খোলা চিঠিতে আরও জানা যায়, অবৈধভাবে জেসিআই এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যন করা হয় নিয়াজ মোরশেদ এলিটকে। যিনি এখনো যুব লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। একই সাথে তিনি নগদেরও ইডি। জুলাই হত্যাকাণ্ড মামলার আসামীও তিনি। ছাত্র হত্যায় সমর্থন ও অর্থ দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গাজিপুরে মামলা হয়েছে।
ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে কাজ করা জেসিআই সদস্যদের এই সংগঠন থেকে বের করে দেন এলিট। এই সংগঠনের বাকি ট্রাষ্ট্রিরাও আওয়ামী লীগের দোসর। যারা এখনো স্বপদে বহাল আছেন।
জেসিআই একটি আন্তর্জাতিক মানের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং অর্গানাইজেশন। বিশ্ব জুড়ে ১২৭ টি দেশে এই সংগঠনের শাখা আছে। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এর ট্রাস্টি বোর্ড নেই। কিন্তু বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নিজেদের হাত শক্ত করতে এই সংগঠনটিকে অঙ্গ সংগঠনে পরিনত করে। অন্য দেশে এই সংগঠনের ট্রাস্টি বোর্ড না থাকলেও শেখ হাসিনার নিদের্শে এ দেশে ট্রাষ্টি বোর্ড গঠন করা হয়।
এই সংগঠনের ট্রেজারার জিয়াউল হক। তিনি একই সাথে সংগঠনটির নির্বাচন কমিশনারও। আওয়ামী লীগের সময়কার সুবিধা ভোগীদের একজন তিনি। ট্রাস্টি বোর্ড কোন ইলেকশন দেয়না। গত ৪ বছর ধরে সিলেকশন করে চালাচ্ছে।
জেসিআই এর বর্তমান সভাপতি ইমরান কাদের। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা। ইমরান কাদের জেসিআই এর কোন সদস্যকে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে দেননি।জেসিআই’র সদস্যদের চাঁদা থেকে প্রতিবছর আসে দেড় কোটি টাকা। এই আয়ের কোন হিসেব দেয়না বোর্ড। এছাড়াও সারা বছর ইভেন্ট থাকে ৭-৮ টা। যেগুলো স্পন্সর থাকে বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা। সেখান থেকে লাখ লাখ টাকা আয় করে জেসিআই। সে সবেরও কোন হিসেব দেয়না বোর্ড।
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ
জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল নিয়ে ভুল তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে আপনার গণমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে গতকাল। একজন পাঠক ও জেসিআই এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে এটি আমাদের গোচরে এসেছে। সংবাদটি যেমন প্রতিষ্ঠানটি সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছে; একই সাথে একটি স্বনামধন্য গণমাধ্যম হিসেবে আপনার প্রতিষ্ঠানের বস্তুনিষ্ঠতা পাঠকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে এই রিজয়েন্ডারটি পাঠাচ্ছি। আশা করি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ উদ্যোগ নেবেন।
একটি পেশাদার অলাভজনক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেজিআই গণমাধ্যমের অবদান ও স্বাধীনতা বিশ্বাস করে। একইসাথে জেসিআই মনে করে, বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক তথ্য বক্তব্য নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন তৈরি করা গণমাধ্যমের প্রধান নিয়ামক।
জেসেআই মনে করে মিথ্যা তথ্য ও অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে গণমাধ্যমের মাধ্যমে জেসিআইকে কলুষিত কারার চেষ্টা করছে। কারণ প্রতিবেদনটিতে উল্লিখিত অধিকাংশ তথ্যই মিথ্যা; একই সাথে যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ব্যবহার কার হয়েছে তাদের সাথে কথা না বলেই প্রতিবেদনটি ছাপা হয়েছে। যেটি সাংবাদিকতার নীতিরও পরিপন্থী।
তথ্য যাচাই করে, জেসিআই এর পরিচালনা পর্ষদের সাথে কথা বলে, সঠিক তথ্য ও বক্তব্য নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানাচ্ছি। একইসাথে মিথ্যা তথ্য সমৃদ্ধ সংবাদটি অনলাইন থেকে সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। উপরের বক্তব্যের পাশাপাশি কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় আপনার দৃষ্টিগোচর করতে চাই যা আপনার গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদটিতে মিথ্যাভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটির ব্যাখ্যা নিম্নরূপ।
১. নিয়াজ মোরশেদ এলিটকে ঘিরে মিথ্যা অভিযোগ
নিয়াজ মোরশেদ এলিটের জেসিআই বাংলাদেশের বর্তমান কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তার সভাপতির দায়িত্ব বহু বছর আগে শেষ হয়েছে এবং বর্তমানে তিনি সংগঠনের কোনো দায়িত্বে নেই। এই ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানো একটি প্রতারণামূলক প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে আমাদের নেতৃত্বকে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। আমরা কোনোভাবেই জেসিআই বাংলাদেশকে ব্যক্তি স্বার্থ কিংবা রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হতে দেব না।
২. সেয়েদ মোসাইয়েব আলম ও জিয়াউল হক ভুইয়ার বিরুদ্ধে অপপ্রচার
সেয়েদ মোসাইয়েব আলম এবং জিয়াউল হক ভুইয়ার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। এই দুই সম্মানিত সদস্য কখনোই কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিল না এবং তাদের কাজ সবসময়ই জেসিআই-এর মূল উদ্দেশ্য—যুব ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য নিবেদিত। তাদের নাম ব্যবহার করে উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার চালানো অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং দায়িত্বহীন এ ধরনের প্রচারণা অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।
৩. জাতীয় সভাপতি ইমরান কাদিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার
জাতীয় সভাপতি ইমরান কাদিরের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মানহানিকর। জেসিআই বাংলাদেশ একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, যা সব সময় রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে পরিচালিত হয়েছে। এর বিপরীত কোনো বক্তব্য শুধু বিভ্রান্তি তৈরি করতেই দেওয়া হচ্ছে। আমরা এসব ভিত্তিহীন দাবির অবিলম্বে প্রত্যাহার দাবি করছি।
৪. আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা
জেসিআই বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এর কোনো প্রমাণ নেই। আমাদের সংগঠনের আর্থিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, নিয়মিত নিরীক্ষিত হয় এবং সাধারণ সভায় পর্যালোচনা করা হয়। প্রতিটি অর্থনৈতিক লেনদেনের সঠিক হিসাব সংরক্ষিত হয়। যারা এই মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে, তাদের কাছে যথাযথ প্রমাণ চাওয়া হচ্ছে; অন্যথায় তাদের মানহানিকর কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
৫. সংবিধান সংশোধন ও ট্রাস্টের বিষয়ে পরিষ্কার বক্তব্য
২০২৩ সালের নভেম্বরে জেসিআই সংবিধানে সংশোধন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছিল এবং এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই অনুমোদিত হয়। এই সংশোধনের উদ্দেশ্য ছিল সংগঠনের কার্যক্রমকে আধুনিকায়ন ও শক্তিশালী করা। একইভাবে, জেসিআই ট্রাস্ট গঠিত হয়েছিল সংগঠনের আর্থিক এবং কার্যক্রমগত সহায়তা প্রদান করতে, যা সম্পূর্ণভাবে সংগঠনের নিয়ম এবং আইনের মধ্যে রয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুধুমাত্র সদস্যদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তকে অবমাননা করার শামিল।
৬. নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা
আগামী ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সাধারণ পরিষদ ও নির্বাচন একটি স্বতন্ত্র নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে অভিজ্ঞ ও সম্মানিত সাবেক সভাপতি রয়েছেন। নির্বাচনী প্রক্রিয়া সংবিধান ও উপবিধি অনুসারে সঠিকভাবে পরিচালিত হয়েছে, এবং প্রয়োজনীয় নোটিশ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অনুমোদিত হয়েছে। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর আঘাত।
৭. জেসিআই বাংলাদেশের গৌরবময় ঐতিহ্য
গত ২৫ বছর ধরে জেসিআই বাংলাদেশ দেশের যুব নেতৃত্ব ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলনের সময় শক্তি প্রদর্শন এবং জাতীয় সংগীত আয়োজনের মাধ্যমে সংগঠনটি তার দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা দেখিয়েছে। এই সংগঠনের মহৎ কাজকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে করা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমরা আরও ঐক্যবদ্ধ হব।
জেসিআই মনে করে এই মহৎ সংগঠনের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা। জেসিআই বাংলাদেশ একটি অরাজনৈতিক, স্বচ্ছ এবং আইন মেনে পরিচালিত সংগঠন। আমরা সংগঠনের সুনাম নষ্ট, নির্বাচন বাধাগ্রস্ত কিংবা আমাদের লক্ষ্যকে দুর্বল করার যেকোনো প্রয়াসের কঠোর নিন্দা জানাই।
আমরা আপনার মধ্যমে আমাদের সব সদস্য, অংশীদার এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি আহ্বান জানাই, যেন এই বিভাজনমূলক প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হন। জেসিআই বাংলাদেশ কোনো মিথ্যা অভিযোগ বা ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করবে না। আমরা যুব সমাজের ক্ষমতায়ন এবং সুষ্ঠু সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের যাত্রা অব্যাহত রাখব। জেসিআই বাংলাদেশের দৃঢ় চেতনা অক্ষুণ্ণ থাকবে। আমরা একসাথে মিথ্যাচারের অন্ধকারে আলোর বাতিঘর হিসেবে কাজ করব।
নিবেদক
ইমরান কাদির, প্রেসিডেন্ট, জেসিআই বাংলাদেশ