রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে বিভিন্ন সময়ে একগুঁয়েমি সিদ্ধান্ত নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে রিমান্ডে থাকা সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেন। কিন্তু শেখ হাসিনা ওই সময় রাগ করে কোটা বাতিল করে দেন। এর মাধ্যমে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। কারণ, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, কোনো ধরনের রাগ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন না।

এসময় ডিবি কর্মকর্তা তাকে বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের একজন মন্ত্রী হিসাবে তিনি নিজেও এর দায় এড়াতে পারেন না। তাকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি কেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলেন। জবাবে তিনি বলেন, আমি একজন ভালো ক্রিমিনাল ল’ইয়ার। এ কারণেই শেখ হাসিনা আমাকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করেন।

আনিসুল হককে প্রশ্ন করা হয়, বিভিন্ন সময়ে আপনারা বিদেশিদের উদাহরণ দিয়েছেন। কিন্তু বিদেশি রাজনীতিবিদরা দেশের স্বার্থে প্রায়ই পদত্যাগ করেন। কিন্তু আপনারা কেন বারবার পদ আঁকড়ে থেকেছেন?’ 

আরো পড়ুন : শেখ মুজিবকে দেশের সম্পদ না বানানো বড় ভুল ছিল

এ সময় চুপ থাকেন তিনি। পরে তাকে প্রশ্ন করা হয়, আপনারা বলেছেন, দেশ সিঙ্গাপুর হয়ে গেছে। কিন্তু সামান্য অসুস্থ হলেই আপনারা বিদেশে চেকআপের জন্য যান কেন? এর জবাবে তিনি বলেন, ওটা বলার জন্য বলেছি।

ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে থাকা আসামিরা জানিয়েছেন, শেষের দিকে সেনাবাহিনীর প্রতি চরমভাবে ক্ষুব্ধ ছিলেন শেখ হাসিনা। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ খুব ভালো কাজ করছে। আর্মিরা পারছে না কেন?

উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপর থেকে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও মন্ত্রীদের নামে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলা হচ্ছে। এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। আদালত গ্রেপ্তারকৃতদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডও দিয়েছেন। বর্তমানে তারা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে রয়েছেন। সেখানেই তারা আওয়ামী লীগের শাসন আমলের বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন।

এই মুহূর্তে যারা ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে আছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান।

এছাড়াও সাবেক এমপি সাদেক খান, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ সোহায়েল, সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত প্রমুখ।