নদীর তলদেশ খনন না করে পাড় কেটে সমান করা হচ্ছে
ইজারাদারের লোক ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলন করছে বালু
হবিগঞ্জের মাধবপুরে সোনাই নদীর চৌমুহনী এলাকায় খনন কাজে চলছে ব্যাপক অনিয়ম। নদীর তলদেশ খনন না করে নদীর পাড় কেটে পাড়েই মাটি ফেলে লোক দেখানো খনন কাজ করছেন ঠিকাদার। এভাবে কাজ করায় নদী খননের আসল উদ্দেশ্য যেমন পুরণ হচেছ না। অন্যদিকে, সরকারের অর্থ অপচয় হচ্ছে।
তাছাড়া নদীর অনেক জায়গা খনন না করা ও নদী খননের ঠিকাদারের লোক নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবে পাড় বাঁধার কারণে বৃষ্টি হলে পাড় ভেঙ্গে আবার নদীতে মাটি চলে যাবে বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন। সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নদী খনন কাজ শুরু করেছিল।
এর ধারাবাহিকতায় হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সোনাই ও খাষ্টি নদী খনন করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড টেন্ডার আহ্বান করলে ৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খাষ্টি ও সোনাই নদী খনন কাজ পায়। খাষ্টি নদী ও সোনাই নদী খনন কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ৩৪ কোটি টাকা। বহরা রাবার ড্যাম থেকে চৌমুহনী (ভুড্ডা) এলাকা হয়ে বাংলাদেশের শেষ সীমানা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার নদী খনন করার কাজ পান মেসার্স খান এন্টার প্রাইজ–বশির উদ্দিন । ৮ কিলোমিটার কাজের ব্যয় ধরা হয় সাড়ে ৬ কোটি টাকা।
[caption id="attachment_388571" align="alignnone" width="1401"]

ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]
স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, নদী খননের নামে মানুষের গাছ, বাঁশ কাটছে। মানুষের ক্ষতি হচেছ। আমার মনে হয় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আতিকুল ইসলাম নামে অপর এক ব্যক্তি জানান, নদীর পাড়ের মাটি কাটছে, নদীর ভিতরের কোন মাটি কাটে নাই। নদীর পাড় থাকবে না, ভেঙ্গে পড়ে যাবে। বেশি হলে বছর খানেক থাকবে পাড়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান দুলু জানান, সোনাই নদীর খনন যে প্রকল্প এসেছে । কোটি কোটি টাকার যে প্রকল্প এসেছে , আমরা দেখেছি নদী থেকে তারা এক বেলছা মাটিও উত্তোলন করেনি। বরং তারা সবত পাড় কেটে শুধু লেভেল করেছে। আমার আকুল আবেদন কতৃপক্ষ যেন সটিক ভাবে তদন্ত করেন। চৌমুহনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান সোহাগ জানান, নদী খননের ব্যাপারে সে এসেছিল একদিন আমার সাথে দেখা করেছে। কিন্তু অফিসিয়ালি ভাবে কোন স্বাক্ষাত হয়নি। সে বলছে নদী খনন করবে। নদী খনন চলছে । এটা কি আইনগত ভাবে হইতেছে, সিডিউল মত হইতেছে কিনা আমি জানি না।
নদী খনন কাজের ঠিকাদারের নিযুক্ত ম্যানেজার শানু শিকদার জানান, নদী খনন নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে। আর বালু গুলো নদী থেকে উঠিয়ে পাড়ে রাখা হচেছ। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা এই গুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। রাতের আধারে বালু বিক্রি করা হচেছ এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এলাকার কিছু লোক রাতে বালু বিক্রি করে, নদী খনন কাজে ২/৩ জন লোক রয়েছে তারা তো বাধা দিতে পারবে না।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, নদীর তলদেশ যদি না কাটে তাহলে ঠিকাদারের ক্ষতি। ঠিকাদার তো বিল পাবে না। একটি নির্দিষ্ট পরিমান ডিজাইন আছে, ডিজাইনের মত যদি কাজ না করে তাহলে, মাটি না পেলে বিল পাবে না। আর এক্সেভেটর পানিতে নামানো যাবে না। এক্সেভেটর পানিতে ভাসে না। তারপর আমরা ফাইনালি একটি সার্ভে করব। তাদের ম্যাজারমেন্ট গুলো আমরা করি না। ঢাকা থেকে একটি টিম আসে। এটা করার সুযোগ নাই বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।