অধিগ্রহণের খবর শুনে ইমারত নির্মাণের হিড়িক

এম নজরুল ইসলাম গাজীপুর
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২৫ পিএম

ছবি : ভোরের কাগজ
অধিগ্রহণের খবর পেয়ে সাপোর্ট টু জয়দেবপুর দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা-বাইপাস) পিপিপি প্রকল্প সড়কের পার্শ্বে নিয়মবহির্ভূতভাবে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। এটি বন্ধ করতে ইতোমধ্যে সওজের প্রকল্প পরিচালক স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকা ও অপসারণের জন্য নির্দেশনা না দিলেও তা আমলে নিচ্ছে না।
নির্দেশনা অমান্য করে নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণ চললাম থাকায় ইতোমধ্যে সওজ থেকে গাজীপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কালীগঞ্জ থানায় চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাপোর্ট টু জয়দেবপুর দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা-বাইপাস) পিপিপি প্রকল্পের অধীনে সড়কের উভয় পাশে ৩০ ফুট সার্ভিস লেন নির্মাণের জন্য উলুখোলা, সেনপাড়া, কুচিলাবাড়ী, রাথুরা ও গলান মৌজায় মোট ২ দশমিক ৫৫৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য গত ৭ নভেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবরে চিঠি দেয়া হয়। চিঠি দেয়ার পর থেকে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবিত এলাকায় কোথাও জমির মালিক, কোথাও জমির ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বেশি আদায় করার অসৎ লক্ষ্য নিয়ে ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। এসব স্থাপনা নির্মাণের জন্য কোন নকশা অনুমোদন বা কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। এসব বিষয় সজরে এলে ইতোমধ্যে সওজের প্রকল্প পরিচালক স্থাপনা নির্মাণকারী বিভিন্ন ব্যক্তিকে চিঠি দিয়ে নির্মাণ থেকে বিরত থাকার জন্য এবং নির্মিত এসব স্থাপনা অপসারণের জন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কালীগঞ্জ থানায় একাধিক চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু কেউ কোন কিছু মানছেন না। ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে জমির ক্ষতিপূরণ দেয়ার সময় সরকারের বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত খরচ করতে হতে পারে। এতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সওজের প্রকল্প ব্যবস্থাপকের ইস্যু করা চিঠিতে বলা হয়েছে, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ ভিত্তিতে ৪-লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান ২-লেন বিশিষ্ট জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা-বাইপাস)- সড়কটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ ভিত্তিতে উভয় দিকে সার্ভিস লেনসহ ৪-লেন প্রবেশ-নিয়ন্ত্রিত (এক্সেস কন্ট্রোল) সড়কে উন্নীত করা হচ্ছে। সম্প্রতি সড়ক পরিদর্শনকালে দেখা যায় যে, ভবন নির্মাণের জন্য সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভার নকশা অনুমোদন ব্যতিত এবং সড়কের প্রান্ত হতে যথাযথ দূরত্ব বজায় না রেখে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করেছে। যা মহাসড়ক আইন, ২০২১' এর ধারা ৯ এর ১১ উপধারা অনুযায়ী "মহাসড়কের সংরক্ষণ রেখার মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না" এবং ধারা ৯ এর ১৭ উপধারা অনুযায়ী মহাসড়কের উভয় পার্শ্বে ভূমির প্রান্তসীমা (right of way) হতে ১০ (দশ) মিটার সরকার কর্তৃক গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্ধারিত রেখা পর্যন্ত কোন স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এমতাবস্থায়, বিধি মোতাবেক অত্র প্রকল্পের সড়কের RoW এর পার্শ্বে ১০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকা ও ইতোমধ্যে নির্মিত স্থাপনা অপসারণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-বাইপাস সড়কের কালীগঞ্জ উপজেলার গরান এলাকায় অন্তত ১৫-২০টি ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এসব ভবন নির্মাণে কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না। দ্রুত সময়ে ভবন নির্মাণের জন্য নিম্নমানের ইটখোয়া ব্যবহার হচ্ছে। দিন-রাত টানা কাজ করে যাচ্ছে শ্রমিকরা। এসব স্থাপনায় ব্যবহার হচ্ছে ৬ থেকে আট মিলি রড। চায়ের দোকান, সেলুন, মুদি দোকানও ইটের গাঁথুনী ও সাদ পেটা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ২-৩ তলা ভবনের ওপর নতুন করে আরো কয়েক তলা করা হয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রী ও নির্মাণ ত্রুটির কারণে এসব ভবন যে কোনো ভেঙে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
চায়ের দোকানদার নাজমুল ইসলাম বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে এখানে চায়ের দোকান করি। নতুন করে এটি মেরামত করছি। সবাই করছে কিন্তু কেনো করছে জানি না।
গলান এলাকার বাসিন্দা খলিলুল্লাহ বলেন, অধিগ্রহণ হবে এমন খবরে সবাই ঘরবাড়ি নির্মাণ করছে। গত ১৫-২০ দিন ধরে তারা নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। ডিসি অফিসে কিছু দালাল রয়েছে তারা অধিগ্রহণের খবর এলাকায় ছড়িয়ে দেয়। এরপরেই তারা দ্রুত সময়ে কাজ শুরু করেছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুমন সিংহ বলেন, ঢাকার যানজট এড়িয়ে পণ্য ও যানবাহনের চলাচলের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। নিরাপদে স্থানীয় পরিবহণের জন্য সড়কের উভয়পাশে সার্ভিস লাইন নির্মাণ করতে জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন। আমরা প্রস্তাব দেয়ার পর কিছু অসাধু লোক বেশি ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য রাতারাতি অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছে। সরকারের অনাকাঙ্ক্ষিত বাড়তি খরচ বাঁচাতে আমরা এসব বন্ধ করা ও যেসব নির্মিত হয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।