বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ ত্রিপুরার হোটেল, সড়কে বাঁশের বেড়া

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের পর আখাউড়া সীমান্ত অভিমুখে বিজেপি সমর্থকদের লংমার্চ কর্মসূচিকে ঘিরে সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় আখাউড়া সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এছাড়াও সীমান্তের ওপারে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে আগরতলায় কোনো বাংলাদেশি যাত্রীকে হোটেল ভাড়া দেয়া হচ্ছে না এবং আগে থেকে হোটেলে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের জোর করে বের করে দেয়া হচ্ছে। হয়রানি ও মারধরের অভিযোগও করেছে বাংলাদেশে আসা পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। এতে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিক্ষুব্ধরা। পরে মঙ্গলবার দুপুরে আখাউড়া সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিজেপি সমর্থক উগ্রবাদীরা; এরই পরিপ্রেক্ষিতে সকাল থেকে দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করায় উভয় দেশই সীমান্তে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সতর্কাবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
ভারত থেকে আসা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মুজিবুর রহমান, লাকসাম উপজেলার ফরিদ মিয়াসহ কয়েকজন বাংলাদেশি যাত্রী জানান, সোমবার যারা আগরতলায় গিয়েছেন তাদের শহরের ভেতরে কোনো হোটেল ভাড়া দেয়া হয়নি। অনেকেই বাধ্য হয়ে শহরের বাইরে গিয়ে কোনো স্বজনদের বাড়িতে উঠেছেন। এছাড়া মার্কেটে কেনাকাটা করতে গেলেও বাংলাদেশি পরিচয় পেলে কিছু বিক্রি করছে না, উল্টো হয়রানি করছেন। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশটিতে ভ্রমণরত বাংলাদেশিরা। এছাড়া আগরতলা ইমিগ্রেশনেও বাংলাদেশি যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বাংলাদেশি যাত্রীরা।
সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া সীমান্তের ওপারে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠন ও ভারতীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। উগ্র হিন্দুত্ববাদী মিছিলকারীরা ব্যানার-প্ল্যাকার্ডসহ মিছিল নিয়ে আখাউড়া-আগরতলা সড়ক হয়ে আগরতলা ইমিগ্রেশন সীমান্তে সমাবেশ করার কথা ছিল। তবে সীমান্তে ভারতীয় অতিরিক্ত বিএসএফ সদস্য ও রাজ্যের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সড়কে বাঁশের বেড়া দিয়ে কঠোর অবস্থানে ছিল। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত বিকাল ৪টায়ও কোনো মিছিল সীমান্তে আসতে খবর পাওয়া যায়নি।
যদিও ভারতীয় সীমান্তের পাশাপাশি বাংলাদেশ অংশে আখাউড়া সীমান্তেও কঠোর অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জওয়ানরা। পাসপোর্টধারী যাত্রীদের সংখ্যা সীমিত থাকলেও যাতায়াত স্বাভাবিক ছিল। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যও চলমান রয়েছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কথিত নির্যাতন এবং বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননার প্রতিবাদে এ ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন উগ্র হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় বিভিন্ন সংগঠন।
আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল আলম জানান, ভারতফেরত যাত্রীরা নানা অভিযোগ জানাচ্ছেন। তাদের হোটেল ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না এবং ইমিগ্রেশনেও হয়রানি করা হচ্ছে। এসব কারণে মঙ্গলবার যাত্রী পারাপার সীমিত ছিল। বিষয়গুলো আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বিজিবির ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এএম জাবের বিন জব্বার জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে সতর্কাবস্থায় রয়েছে বিজিবি।