×

সারাদেশ

সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন, ১৫০ কোটি টাকা লুটপাট প্রকৌশলীর

Icon

মসিউর ফিরোজ, সাতক্ষীরা

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৩ পিএম

সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন, ১৫০ কোটি টাকা লুটপাট প্রকৌশলীর

ছবি: সংগৃহীত

   

বিভিন্ন প্রকল্প থেকে প্রায় দেড়’শ কোটি টাকা লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের এজেন্ডা বাস্তবায়নে টেন্ডারবাজ ব্যবসায়ী সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। জাহিদ ফারুকের কাছের মানুষ হওয়ায় তিনি কোনো চেইন অব কমান্ড মানেননি। মন্ত্রির সিডিউল ম্যানের যন্ত্রনায় পাউবোর সিনিয়র কর্মকর্তারা নাখোশ বলে অভিযোগ উঠেছে।

২০২৩ সালের শেষের দিকে সাতক্ষীরা খুলনা বাগেরহাট জেলার ঝুকিপূর্ণ জোন খুলনা সার্কেলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন সবিবুর রহমান। ইচ্ছেমত প্রকল্প বাস্তবায়ন, প্রটেকটিভ ওয়ার্ক ২ /৩ মাটির কাজে ৫/৮ শতাংশ নগদ অর্থ নিয়ে পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে লুটপাট করেছে কোটি কোটি টাকা। প্রতিটি বিলের অফিস পিসির নামে ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ (অবৈধ নিয়ম) বাধ্যতামুলক। বাপাউবো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল শর্ট পিচ ক্রিকেটে (ঠিকাদারদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে) ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে স্পন্সর। 

এবং তাদের কাছ থেকে (টুর্নামেন্টে খরচ বাবদ) চাঁদাবাজির ২৬ লাখ টাকা থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ করে ২০ লাখ টাকা বাণিজ্য করেন। এছাড়া মোটা অংকের কমিশনে কাজের প্রোগেরেজ দেখিয়ে অযাচিত বিল, ভেরিয়েশান বাণিজ্য অহরহ। মন্ত্রির কাছের মানুষ হওয়ায় এসব অপকর্ম করে লুটপাট করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ পর্যন্ত খুলনা সার্কেলে টেন্ডার সমাধান হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। সবগুলো টেন্ডার তিনি সমাধান করে (আলোচ্য শতাংশ) ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা হরিলুট করেছেন তিনি। তিনি মন্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে লাউড স্পিকারে কথা বলত। এর ফলে অফিসে আধিপত্য বিস্তার, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জিম্মি করতে সহজ হতো। বিগত দুই মাস মন্ত্রী নাই। কিন্তু সবিবুরের সৃষ্ট জিম্মি দশা থেকে আজও মুক্ত হতে পারেনি পানি কর্তৃপক্ষ। এখনো তার এই ঘৃর্ণিত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে বাংলাদেশ পাউবো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভয় পায় বলে সূত্র জানায় ।

সুত্র জানায়, ২০২৩ সালের প্রথমে পটুয়াখালী সার্কেলে বদলি করা হয় তাকে। পটুয়াখালীর দায়িত্ব গ্রহণের আগে খুলনা জোনে বদলি করা হয় সবিবুর রহমানকে। একই সময়কালে খুলনা ও পটুয়াখালী সার্কেলে টেন্ডার চলমান থাকায় খুলনার টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে (বদলির আদেশ সাময়িক স্থগিত করে) সবিবুর রহমানকে খুলনা জোনের পরিবর্তে পটুয়াখালী পাঠানো হয়। 

এবং খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর পদটি ( মন্ত্রি পদটি শুন্য রাখে সবিবুরের জন্য) শুন্য রাখা হয় প্রায় এক বছর। উক্ত সার্কেলে তিনি প্রতিমন্ত্রির আশির্বাদ পুষ্ট হয়ে প্রতিটি প্রকল্পে (আলোচ্য শতাংশ) নগদ অর্থ নিয়ে প্রায় ১৬শ কোটি টাকার টেন্ডার সমাধান করেন। এবং ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা হরিলুট করেন সিডিউল ম্যান।

এর আগে ২০২১ সালের জুলাই মাসে সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর (জাহিদ ফারুক) আস্থাভাজন ছবিবুর বরিশাল সার্কেলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হিসাবে যোগদান করেন। তারপর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ইচ্ছেমত প্রকল্প বাস্তবায়ন, পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ, নগদ অর্থ গ্রহণ, অফিসে আধিপত্য বিস্তার, প্রকল্পের লুটপাট চালিয়ে মন্ত্রির পূর্ণ আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। তার পুরস্কার হিসেবে ২০২২ সালের মার্চে একই সার্কেলে পূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত করা হয়। এবং সে সময় তিনি প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে হাতিয়ে নেন ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা। এভাবে তিনি গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। শুধু পরিবার বর্গ ও নামে-বেনামের ব্যাংক হিসাব চেক করলে আলাদিনের প্রদীপ পাওয়া যাবে বলে বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে। 

সুত্র আরো জানায়, নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বকালে ২০১৯ সালের মার্চে কক্সবাজারে কর্তব্য অবহেলা ও প্রকল্পের দূর্নীতির সম্পৃক্ত থাকায় বরখাস্ত হয় সবিবুর। কিন্তু সে সময় মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী প্রতিমন্ত্রীর কাছের মানুষ হওয়ায় তার ওই আদেশ ক্ষণস্থায়ী হয়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে সুনামগঞ্জের ডিভিশন —১ নির্বাহী প্রকৌশলী দায়িত্ব দিয়ে বদলি করা হয় তাকে। ক্ষমতার দাম্ভিকতায় অন্ধ সবিবুর রহমান সব ভুলে আবার শুরু করেন তার অর্থলুটপাটের খেলা। ২০১৯—২০ অর্থবছরে গোলাম সারোয়ার ও অসীম সিং যে ভি লাইসেন্সে পার্টনারশিপে ১৬ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ করেন এই ব্যবসায়ী প্রকৌশলী। প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করায় অপর পাটনার সবিবুরের নামে মামলা করেন। পরে পার্টনারের হাত পায়ে ধরে মীমাংসা করে সবিবুর।

এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সবিবুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আমি আসলে বুঝতে পারছি না আপনি কি বলছেন। আপনি আমার অফিসে আসেন কথা বলি। মানুষতো মিটে যাবে। আলোচ্য বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কষ্ট করে এসব খোঁজ নেয়ার কি দরকার? অফিসে আসেন কথা বলি।

চলমান এসব দুর্নীতির বিষয়ে পাউবোর খুলনার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা বলেন, আমি এসব ব্যাপারে কিছু জানি না। মন্ত্রীর নাম বলে আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডার সমাধান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিও মন্ত্রীর কথা বলতাম। সেও বলত। সে অনেক প্রকল্পের পিডি। এরপর সবকিছু তো আপনি জানেন। এসব কি দরকার অফিসে আসবেন কফি খাবো একসঙ্গে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডে মহাপরিচালক মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা বলেন, আপনি তো জানেন আমাদের হাত পা বাঁধা ছিল। আমরা চাইলেও অনেক কিছু করতে পারিনি। এখন কোন বাঁধা নেই। কিছু কাজ দেশের জন্য করেন। আমি সবকিছু আপনার মাধ্যমে জেনেছি। একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সাতক্ষীরা খুলনা বাগেরহাট ঝুকিপূর্ণ জোনে টেন্ডারবাজ প্রকৌশলীর দায়িত্ব কীভাবে দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের হাতে কিছুই ছিল না। সব মন্ত্রী নিজ দায়িত্বে করতেন।

বাংলাদেশ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সচিব নাজমুল আহসান বলেন, আমি সবকিছু জেনেছি। মহাপরিচালক’র দিক নির্দেশা দিয়ে দিয়েছি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। আলোচ্য লুটপাট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব ঘৃর্ণীত কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বোর্ড ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App