মহাসড়কের জমি দখল করে বিএনপি নেতার অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ

গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৯ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টরকীতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীন বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছেন গৌরনদী উপজেলা বিএনপির নেতা আলহাজ আবুল হোসেন মিয়া। ঘটনাটি দেখেও প্রভাবশালী ওই বিএনপি নেতার ভয়ে নির্মাণ কাজে বাঁধা দিচ্ছেনা কেউ।
জানা গেছে, আইয়ুব খানের শাসন আমলে এ মহাসড়কটি নির্মিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় এ মহাসড়কের কোলঘেঁষে অবৈধ দোকান পাটসহ নানা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসা বাণিজ্যের পাশাপাশি বসবাস করে আসছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। নানা সময়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উদ্যোগে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ওই অবৈধ স্থাপনাগুলো ভেঙ্গে দেয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই অবৈধ দখলদাররা ভেঙ্গে দেয়া ওই জায়গাগুলোতে পুনরায় অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলে।
দীর্ঘদিন এভাবে চলে আসলেও গত ২/৩ বছর পূর্বে তৎকালীন সরকার এ মহাসড়কটিকে ফোরলেনে উন্নীত করার ঘোষণা দেয়ার পর মহাসড়কটির দু’পাশের সওজের জমিতে নতুন করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসন।
আরো পড়ুন: কক্সবাজারে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড বৃষ্টিপাত
কিন্তু জনরোষে শেখ হাসিনার সরকারের বিদায়ের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে গত প্রায় একমাস ধরে উপজেলার টরকী বন্দর সংলগ্ন নীলখোলা এলাকায় সওজের অধিগ্রহণকৃত বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের ঢালের জমিতে বালু ফেলে ভরাট করে সেখানে মহাসড়কটির কোলঘেঁষে একাধিক অবৈধ স্থাপনার নির্মাণ কাজ করাচ্ছেন গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আলহাজ আবুল হোসেন মিয়া।
ঘটনাটি দেখেও প্রভাবশালী ওই বিএনপি নেতার ভয়ে তার অবৈধ নির্মাণ কাজ ঠেকাতে নির্মাণ কাজে বাঁধা দিতে যাচ্ছেনা সওজের কোন কর্মকর্তা বা স্থানীয় প্রশাসনের কেউ।
নির্মাণকাজে নিয়োজিত রাজমিস্ত্রী রুহুল আমীন বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, বালু ভরাট থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রায় একমাস আমরা এখানে কাজ করছি এ সময়ে কেউ কাজ ঠেকাতে বা কাজে বাঁধা দিতে আসেনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আব্দুল্লাহ খান বলেন, জমিটি সড়ক বিভাগের। এটি তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও তাদের। সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে বলে তাদের পক্ষ থেকে কেউ এখনো আমাকে অবহিত করেনি। অবৈধ স্থাপনার নির্মাণ ঠেকাতে তারা যদি স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চায় তা হলে অবশ্যই আমরা তাদেরকে সহযোগিতা দেব।
আরো পড়ুন: মৌলভীবাজারে ৭ থানার ওসিকে একযোগে বদলি
ওই মহাসড়কটির বরিশাল থেকে ভুরঘাটা অংশের তদারকির দায়িত্বে থাকা সওজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী অরুণ কুমার বিশ্বাস বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, আমাদের কসবা অফিসের দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা গ্রিজার (ফেরি বিভাগের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী) আব্দুস সাত্তার হাওলাদার আজ সকালে আমাকে ঘটনাটি জানিয়েছেন। আমি আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে অথবা আগামীকাল (শুক্রবার) সকালে সার্ভেয়ার নিয়ে সেখানে যাবো। আমাদের সিমানা চিহ্নিত করতে। আমাদের সীমানার মধ্যে কেউ কোনো অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করলে কাজ বন্ধ করে দেব।
মহাসড়কের জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আলহাজ আবুল হোসেন মিয়া বলেন ওটাতো আমার নিজের জমি, আমার কাছে কাগজপত্র আছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ অধিগ্রহণের জন্য আমার জমি রিকুইজিশন দিতে চেয়েছিল আমি রাজি হইনি। ফলে তারা মহাসড়কের পাঁকা অংশের পশ্চিমপাশ দিয়ে অধিগ্রহণ করেছে। পাঁকা অংশের পূর্বপাশে তাদের কোন জমি নেই।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আলহাজ আবুল হোসেন মিয়ার এ বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সওজের এক কর্মকর্তা বলেন, ওনি সত্য বলেননি। পাকিস্তানি শাসন আমলে আইয়ুব খানের সরকার ওই এলাকার রাস্তার পাঁকা অংশের উভয় পাশের জমি অধিগ্রহণ করেছে। যার প্রমাণ সওজের হাতে রয়েছে। কর্মকর্তারা সাহস করে কাগজসহ সেখানে গিয়ে মাপ দিলেই আসল সত্য বেরিয়ে আসবে।