দুটি সিএনজি পাম্পে গ্যাসের সঙ্গে বাতাস যায়, স্বীকার করলেন মালিকরা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২২ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের দুটি সিএনজি গ্যাস পাম্পে গাড়িতে গ্যাসের সঙ্গে বাতাস ভরে দিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগে ফুঁসে উঠেছেন ড্রাইভার শ্রমিকরা। ড্রাইভার শ্রমিকদের জিম্মি করে গ্যাসের সঙ্গে ৩০ ভাগ বাতাস দিয়ে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠছেন সিএনজি গ্যাস পাম্পের মালিকরা। এমন অভিযোগে ড্রাইভার শ্রমিকরা করছেন প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে।
চালকরা অভিযোগ করে বলেন, শ্রীমঙ্গল শহরতলীর হবিগঞ্জ সড়কস্থ সখিনা সিএনজি ফিলিং স্টেশন থেকে ও উপজেলার মৌলভীবাজার সড়কস্থ কালাপুর মেরিগোল্ড ফিলিং স্টেশনের গ্যাস রিফিল করলে পাম্প দুটি গ্যাসের সঙ্গে বাতাস দিয়ে প্রতারণা করে আসছে বছরের পর বছর ধরে।
শ্রীমঙ্গল কাালিঘাট রোড সিএনজি চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুমন হোসেন জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ তারা এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়ে আসছেন। তিনি বলেন, বিগত সরকার দলের সঙ্গে আঁতাত করে তারা ওজনে গ্যাস কম দিয়ে বাতাস ভরে তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে আসছেন। এতে গরিব সিএনজি চালকরা দিন শেষে বাজারের খরচের টাকা রোজি করতে পারেন না। তিনি বলেন, প্রায় সময় শতকরা ৫০ ভাগ গ্যাস কম দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে মাইক্রো চালক মো. নাসির উদ্দিন এবং সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সিএনজি পাম্প দুটি থেকে ১ হাজার টাকার গ্যাস ভরলে ৩০০ টাকার গ্যাসের হিসাব মিলে না। জেলার অন্য পাম্প থেকে গ্যাস ভরলে শ্রীমঙ্গলের পাম্প থেকে ভরা গ্যাসের সঙ্গে ৩০০ টাকার গরমিল পাওয়া যায়। তারা বলেন এখন কোনো রাজনৈতিক সরকার নয় । অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন চাপ নেই। তাই এই সরকারের কাছে তারা এ পুকুর চুরির দুর্নীতি বন্ধ করার দাবি জানান।
আরো পড়ুন: নোয়াখালীতে তীব্র খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল বিষামনী সড়কের সিএনজি চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সামসুদ্দিন বলেন, উল্লিখিত বিষয়ে তার সমিতির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, দ্রুত এই দুর্নীতি বন্ধ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই অভিযোগ শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আরো লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শ্রীমঙ্গল হবিগঞ্জ রোড সিএনজি চালক সমিতি ও শ্রীমঙ্গল কাালিঘাট রোড সিএনজিচালক সমিতি।
অন্যদিকে শ্রীমঙ্গল কার-মাইক্রো স্ট্যান্ডে কার মাইক্রো চালকরা শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত দুটি ফিলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে এর সুষ্ঠু সমাধানের জন্য শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা মো. মহসিন মিয়া মধু এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারা পাম্প দুটির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান এবং প্রতারণার বিচার দাবি করেন।
মৌলভীবাজার সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন ১২২৩ এর সাবেক নেতা খায়রুজ্জামান কামাল বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ শ্রীমঙ্গলের দুটি গ্যাস পাম্প থেকে চালকরা গ্যাস নিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে আসছেন। পাম্পে গ্যাস কম দেয়াতে চালকরা মালিকের কাছে চোর সাজতে হচ্ছে। তিনি বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সখিনা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিক শের আলী হেলাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এমন অভিযোগে গত ২৮ ও ২৯ আগস্ট পৃথক দুই দিন সিলেট জালালাবাদ গ্যাসের ভিজিলিস্ট টিম তাদের পাম্প পরীক্ষা করে কোন অনিয়ম পাননি বলে মন্তব্য খাতায় লিখে গেছেন।
এসময় জালালাবাদ গ্যাসের ভিজিলিস্ট টিম এর ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত লিখিত মন্তব্যে দেখা যায়, অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ গ্যাস পাইপলাইনের অবস্থা ঠিক আছে ও আরএমএস এর অবস্থা সুবিধাজনক। তবে পেশার গ্যাস পরিবর্তন করতে হবে।
সখিনা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিক শের আলী হেলাল বলেন, ভিজিলিস্ট টিম এর পরামর্শ অনুযায়ী তাদের পেশার গ্যাসের দুটি মিটার পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেন, এর জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন এবং ভিজিলিস্ট টিমই দুটি পেশার গ্যাসের দুটি মিটার পরিবর্তন করে সিলগালা করে দিয়ে গেছেন।
এ সময় বাস্তবতা নিরিখে গণমাধ্যম কমীর্রাও তার পাম্প থেকে গ্যাস নিয়ে দেখেছেন তাদের পাম্প থেকে গ্যাস নিলে অন্য পাম্পের চেয়ে খরচ বেশি হয় এ বিষয়ে জানতে চাইলে শের আলী হেলাল বলেন, তাদের লাইনটি শ্রীমঙ্গল আবাসিক লাইনের সাথে যে কারণে তারা পেশার কম পান এবং এতে বাতাস প্রবেশ করে। এ বিষয়টি তিনি জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
তবে শ্রীমঙ্গল মেরিগোল্ড সিএনজি পাম্পের মালিক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, তাদের সংযোগ মেইন লাইন থেকে শুধু মাত্র গাড়ির লম্বা লাইন হলে পেশার কমে যায়। এটা মাঝে মধ্যে হয় সবসময় না। তারও দাবি আমাদেরটা পরীক্ষা করে দেখা হোক।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধু বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগটি উপজেলা প্রশাসনের কাছে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যেভাবেই হয় এতে ড্রাইভার শ্রমিক ও গাড়ির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব জানান, তিনি পৃথক অভিযোগ পেয়েছেন তবে শ্রীমঙ্গল থেকে এটি পরীক্ষা করার কোন এক্সপার্ট টিম নেই। এর জন্য পেট্রলিয়াম করপোরেশন বা সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ করার পরামর্স দিয়েছেন তিনি।