‘আমাদের সুপেয় পানি দেন, ত্রাণের দরকার নাই’

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৩৮ এএম

ছবি: সংগৃহীত
টানা অতি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে দেশের বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে ফেনী জেলায়। সোনাগাজী ও দাগনভূঞার অবস্থা ভয়াবহ। বন্যায় ফেনীর সদর উপজেলা থেকে শুরু করে ছয়টি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি। প্রতিদিনই খাবার আর পানি নিয়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে বানভাসিদের সহায়তায় ছুটে যাচ্ছেন মানুষ। কিন্তু চারদিকে থৈ থৈ পানি ভাসলেও এ জেলায় এখন সবচেয়ে বেশি অভাব সুপেয় পানির। ত্রাণ হিসেবে যে শুকনো খাবার ও পানি জেলায় পৌঁছাচ্ছে তাতে সুপেয় পানির চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না।
ফেনী সদরের ফাজিলপুর এলাকার বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন বলেন, বানের পানিতে পুরো গ্রাম তলিয়ে যাওয়ায় নিজের পরিবারকে রেখেছেন চট্টগ্রাম শহরে আত্মীয়ের বাসায়। দুর্যোগের এই সময়ে কয়েকজন সহযোগী নিয়ে তিনিও নেমেছেন ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে। প্রতিদিনই তিনি ছুটছেন দুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে, বানভাসিদের উদ্ধারে। তার সহায়তা কার্যক্রম ও ফেনীর বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে এক কথায় উত্তর, অনেক ত্রাণ যাচ্ছে। প্রতিদিনই ত্রাণ আসছে। কিন্তু বানবাসী মানুষগুলোর সবচেয়ে বেশি দরকার সুপেয় পানির।
অনেকেই সরাসরি বলছে আমাদের পানি দেন, ত্রাণের দরকার নাই। তাই আমরাও চেষ্টা করছি সবার কাছে অন্তত খাবার পানি আর স্যালাইনসহ প্রাথমিক ওষুধগুলো পৌঁছে দিতে। শাহাদাত আরো জানান, বানের পানিতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন নারীরা। তাদের নানা সমস্যার কথা তারা কাউকে বলতে পারেন না। স্যানিটারি ন্যাকপিনসহ তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো তারা কারো কাছে বলতেও পারছেন না।
ফাজিলপুর স্টেশনের দোকানী শাহ আলম বলেন, ফাজিলপুর স্টেশন আর মুহুরি ব্রিজের কাছে দুইটা টিউবয়েল। এই দুই টিউবয়েলই পুরো এলাকার একমাত্র সুপেয় পানির ভরসা। সব এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। টিউবয়েলগুলোতো পানির নিচে, এ দুইটি টিউবয়েল উঁচু জায়গায় হওয়ায় সেগুলোর পানি ব্যবহার করছে সবাই। শাহ আলমের দোকানে বসে থাকা লোকজন বলছেন, এখানে প্রচুর সুপেয় পানি দরকার।
ফাজিলপুর রেলক্রসিং এলাকার আব্দুল খালেক বলেন, গত দুই দিন শুকনো খাবার পেয়েছি। সড়ক থেকে পানি কমে যাওয়ায় সেখানে এখন নৌকা নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। তাই আজ কোনো ত্রাণ পাইনি। ত্রাণ পেলেও আমাদের বেশি দরকার পানি। ক্ষুধা চেপে রাখলেতো তৃষ্ণা চেপে রাখা কষ্ট। আমাদের পানি দরকার, খাবার পানি।
উল্লেখ্য, বন্যায় এখনো দেশের ১১টি জেলায় ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮। এখন পর্যন্ত বন্যায় ১৮ জনের মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। নিখোঁজ আছেন দুজন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ–সংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনে রবিবার এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বেলা তিনটায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে চট্টগ্রামে পাঁচজন, কুমিল্লায় চার, নোয়াখালীতে তিন, কক্সবাজারে তিন, ফেনীতে এক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক ও লক্ষ্মীপুরে একজন। এছাড়া নিখোঁজ দুজন মৌলভীবাজারের।