সাগর উত্তাল, মাছ পাওয়া নিয়েও সংশয়
৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষেও হতাশ জেলেরা

আনোয়ার হোসেন আনু, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) থেকে :
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জীবিকার জন্য মাছ ধরায় নেমে পড়েন জেলেরা। এরই মধ্যে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় জেলেরা তীরে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এতে হতাশ হয়ে পড়েন তারা। তবে সাগর উত্তাল থাকার মধ্যেও উপকূলের জেলেদের মাছ ধরতে দেখা গেছে। এদিকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ১ সপ্তাহ আগে যারা সাগরে নেমেছিলেন তারা ইতোমধ্যে মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরেছেন।
সামুদ্রিক মাছের বাধাহীন প্রজনন ও সংরক্ষণে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য বিভাগ। এ সময়ে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সমুদ্রে জেলেদের অবাধ বিচরণ ছিল চোখে পড়ার মতো। মৎস্য গবেষকরা বলছেন, আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় মাছের প্রজনন ও সংরক্ষণের উদ্যোগ কোনো কাজে আসেনি।
এদিকে নিষেধাজ্ঞার সময়ে অসাধু জেলেরা অবাধে মাছ ধরায় এখন সাগরে ইলিশের দেখা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন উপকূলের প্রায় ৩০ হাজার জেলে। মৎস্য আড়তদার ও ট্রলার মালিকরা বলছেন, জেলেদের জালে দীর্ঘ ৬৫ দিন পরে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ ধরা পড়বে- সেই আশায় লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে ট্রলার মেরামত ও সরঞ্জামাদি নিয়ে সাগরে পাঠানোর অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। কাক্সিক্ষত ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়লেই সম্ভব হবে ঋণ পরিশোধ করা।
আলীপুর মৎস্য বন্দরের ‘সাত ফিশ’ আড়তের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে শত শত মানুষ এই পেশায় নিয়োজিত। সবার মধ্যে একটি আমেজ বিরাজ করছে রুপালি ইলিশের আশায়। কিন্তু ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছে। জেলেরা মৎস্য সরঞ্জাম নিয়ে ঘাটে অপেক্ষা করছেন আবহাওয়া অনুকূলে আসার জন্য।
এফবি নূরভানু ট্রলারের মাঝি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়ে সরকারের দেয়া মাত্র ৮৫ কেজি প্রণোদনার চাল দিয়ে সংসার চলে না। ২০ হাজার টাকা সুদে এনে খেয়েছি। এখন যদি অবরোধের পর মাছ না পাওয়া যায় তাহলে ঋণ পরিশোধ করব কী দিয়ে?
রায়হান ট্রলারের মালিক রাসেল মোল্লা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রভাবশালী জেলে ও ভারতীয়রা মাছ ধরে নিচ্ছে। তাহলে আমরা কেন ক্ষতিগ্রস্ত হব? ভারতের সঙ্গে মিল রেখে এই অবরোধ জারি করার দাবি জানান তিনি। সমুদ্র অর্থনীতি, উপকূলের পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশের ইকোফিশ-২ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, মূলত সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য এই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। তবে এর মধ্যে জেলেরা দেদারছে সাগরে মাছ ধরেছে। এতে একদিকে সরকারের বরাদ্দও পেল এবং সামুদ্রিক মাছও সংরক্ষণ হলো না। এভাবে চলতে থাকলে সাগর থেকে মাছ হারিয়ে যেতে থাকবে।
পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী বলেন, দেশে ইন্টারনেট সচল হলেও নিম্ন গতিসম্পন্ন থাকায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস সঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে গতকাল পর্যন্ত পূর্ণিমার জোয়ারে সমুদ্র উত্তাল থাকায় সমুদ্রে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তাই সমুদ্রে সব ধরনের যান চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় প্রত্যেক নিবন্ধিত জেলে ৮৫ কেজি করে চাল পাবেন। এরই মধ্যে অনেকে ৫৬ কেজি পেয়েছেন। দেশে চলমান কারফিউর কারণে বাকি চাল দিতে একটু দেরি হচ্ছে। গত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় জরিমানা ও নিলামে মাছ বিক্রি হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকার। শিগগিরই আরো কিছু জেলে নিবন্ধনের আওতায় চলে আসবে। এই নিষেধাজ্ঞায় প্রশাসন তৎপর ছিল। এর মধ্যেও অনেক অসাধু জেলে মাছ ধরার চেষ্টা করেছে।