'বন্যায় আমার সব শেষ'

রাসেল আহমদ,মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) থেকে
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৪, ০৪:৫৯ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
টাঙ্গুয়ার হাওরের আফাল (বড় ঢেউ) এসে সরাসরি আঘাত হানে বসতভিটায়। আফালের তাণ্ডবে ভিটার অর্ধেকটা বিলীন হয়ে যায়। এরপর দ্বিতীয় দফার বন্যায় পানি আরও বাড়ে। ভিটার সামান্যটুকুও ঠিকে নেই আফালের সাথে যুদ্ধ করে। বাঁশের খুঁটিতে কোনোমতে লেগে রয়েছে টিনের বেড়ার উপরের অংশ। প্রথম দিনের বানের জলেই ভেসে গেছে আসবাবপত্র, গৃহস্থালি সামগ্রীর অনেক কিছু। তাই বাড়ি ফেরা হচ্ছে না আঞ্জুনা বেগমের(৪০)।
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরপারের বংশীকুন্ডা গ্রামের পূর্বপাশের সড়ক লাগোয়া ঘর ছিল আঞ্জুনা বেগমের। বন্যার আগেই অসুস্থ স্বামী নজরুল ইসলাম ও দুইমেয়েকে নিয়ে ঢাকায় গার্মেন্টস শ্রমিক ছেলে আকাশ মিয়ার কাছে গিয়েছিলেন। আঞ্জুনা বেগম নিজেও অসুস্থ। এক মেয়ে বাতজ্বরে আক্রান্ত। ঈদের পরেই তাদের বাড়ী ফেরার কথা ছিল।
১৭ জুন রাতে আঞ্জুনা বেগমের ঘরে পানি ঢোকে। চারদিকে পানি আর পানি। পাশের বাড়ীতে থাকা আন্জুনার ভাইয়েরা পরেরদিন কিছু আসবাবপত্র সরিয়ে নিলেও বেশীর ভাগই ভেসে গেছে আফালের তোড়ে। এরপর আবারো বন্যা।দুই দফার বন্যায় আঞ্জুনা বেগমের ভিটের মাটি ধুয়ে মুছে নিয়ে গেছে। বেড়ার টিন দুমড়ে মুচড়ে ক্ষতবিক্ষত করেছে টাঙ্গুয়ার হাওরের ঢেউ।
ঈদের পরেই সবাইকে নিয়ে বাড়ীতে ফিরবেন, এমনটাই কথা ছিল। কিন্তু তাদের এখনো ফেরা হয়নি। কবে হবে ফেরা, তাও জানেন না আঞ্জুনা বেগম। আসলে ফেরার উপায় নেই। বন্যায় বিধ্বস্ত ভিটা বসবাসের উপযোগী না করলে থাকবে কোথায়?
মুঠোফোনে আঞ্জুনা বেগম ভোরের কাগজকে বলেন, ‘বন্যায় আমার সব শেষ।' ঘর কীভাবে বানাবেন, এই চিন্তায় দিশাহারা তিনি।
বন্যায় আঞ্জুনা বেগমের মতো আরো অনেকের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারো আংশিক, কারো পুরোটাই বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। হাওরপাড়ের দরিদ্র মানুষেরা এসব ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি আবার বানাবেন বা সংস্কার করবেন, এই সামর্থ্য অনেকেরই নেই।
সোমবার (৮ জুলাই) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরটির বাঁশের খুঁটির সঙ্গে কোনমতে লেগে রয়েছে বেড়ার টিন। মাটি নেই ভিটায়। বেড়ার টিনের নিচের অংশ দুমড়ে মুচড়ে গেছে। মেরামত করে তুলবেন, সেই অবস্থা নেই।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আঞ্জুনা বেগম পরিবার নিয়া বড় বিপদে পড়ছে। বন্যা তারে পথে নামিয়ে দিছে। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া ঘর মেরামত করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।’
একই গ্রামের মাজহারুল (২৬) ও নেকবর আলী (৪৫), বিল্লাল মিয়ার (৪০) ঘরও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বলেন, হাওরের ঢেউয়ে ঘরের বেশি ক্ষতি করে। ঝোড়ো বাতাস হলে ঢেউ হয় বেশি। ঢেউয়ে ঘরের বেড়া তছনছ করে দেয়।
নেকবর আলী বলেন, ‘আমরা বড় কষ্টে আছি। বন্যায় ঘরের বেড়া ভাঙছে। বাচ্চারা রাইতে ডরায়। দৈনন্দিন সংসারের খরচ চালাইতেই কষ্ট হয়, ঘর ঠিক করবো কি দিয়া।’
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, বন্যার পানি নামছে। স্থানীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা সহায়তা পাবেন।