এনজিও কর্মী থেকে উপজেলা প্যানেল চেয়ারম্যান দিলারা শিরিন

মেঘনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৩:২২ পিএম

দিলারা শিরিন
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান দিলারা শিরিন এনজিও কর্মী থেকে তিন মেয়াদের উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। এবার হলেন অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের রায়ে প্যানেল চেয়ারম্যান-১। তিনি সিসিডিএ এনজিওতে চাকরিকালীন ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মত মেঘনা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
তার প্রশাসনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের প্রখরতায় প্রজ্জ্বলিত উপজেলাবাসী বিমুগ্ধ হয়ে ৫ বছর পর ২০১৯ সালে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পুনরায় তাকে একই পদে নির্বাচিত করে। তার জনকল্যাণমুখী রাজনৈতিক, সামাজিক এবং পরিষদ কেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডের ফলে মেঘনা উপজেলাবাসীর নিকট দলমত ও ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে হয়ে ওঠেন সকলের একান্ত আস্থার আপনজন।
জনসাধারণের সঙ্গে তার সখ্যতার উৎকর্ষতা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার প্রধান কারণ তিনি তাদের বিপদ আপদে রোদ বৃষ্টি ঝড় তুফান উপেক্ষা করে পাশে থাকেন। এলাকার জনসাধারণের সব শ্রেণী পেশার মানুষের দুঃসংবাদে তাদের আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতির পূর্বেই একজন ব্যস্ত জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও তার উপস্থিতি তাদের স্বাভাবিক হওয়ার বার্তা দেয়। বরাবরের মতো এবারের ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন-২০২৪ সনে একই পদের প্রার্থী হয়ে বাজিমাত করেন। তিনি বিপুল ভোটে জয় লাভ করে মেঘনা উপজেলায় ঐতিহাসিক ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভাব হন।
টানা তিন মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ায় তিনি এখন মানুষের মুখে মুখে হ্যাট্রিক ভাইস চেয়ারম্যান। সদ্য অনুষ্ঠিত উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় সকল চেয়ারম্যানদের সম্মতিতে তিনি উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা পরিষদের সভা ও কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার ফলে তিনি উপজেলা পরিষদ পরিচালনায় অভিজ্ঞ প্রতিনিধি বিধায় তাকে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা সঠিক বলে এলাকাবাসীর মুখে মুখে প্রচারিত হচ্ছে।
সব ষড়যন্ত্র, অসিম প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে জনতার আস্থা অর্জন করে নিতে সক্ষম হয়ে তিনি এখন সকল দল-মতের মানুষের আস্থার প্রতীক। তাকে তার দলের পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দও তার জনকল্যাণে সম্পৃক্ত থাকার কারণে ভীষণ পছন্দ করেন এবং ভালবাসেন।
ব্যক্তি জীবনে দিলারা শিরিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ঘরে বৃদ্ধ মা, ভাই, বোন ও ৩ সন্তান। বাবা মারা যান অনেক আগেই পরবর্তীতে স্বামীও ক্যান্সারে মারা যান। সংসার চালাতে জীবন যুদ্ধে নেমে যান এই অদম্য নারী। জীবন যুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে একটা সময় এই অদম্য নারীর ইচ্ছে জাগে এলাকাবাসী তথা দেশের জন্য কিছু করার। বৃহৎ পরিসরে জনকল্যাণ করতে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে যোগদান করার বিকল্প নেই। যেই চিন্তা সেই কাজ।
২০১৩ সালে সেননগর বাজারের উত্তর পাশে দড়িকান্দির বালুর মাঠে অনুষ্ঠিত গোবিন্দপুর ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলনে সভার প্রধান অতিথি সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেনের উপস্থিতিতে তার বক্তব্য উপস্থিত সবার মনে দাগ কাটে।
একঝাঁক নারী নিয়ে একটি অল্প বয়সী নারী নেত্রীর মত করেই সে সভায় প্রধান অতিথির হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি, কুমিল্লা উত্তর জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক এবং মেঘনা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
দিলারা শিরিন বাবা ও তার স্বামীকে হারিয়ে একমাত্র মায়ের তত্ত্বাবধানেই ছিলেন। মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়েও মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মানুষের পাশে দাড়াতে উৎসাহ দিয়েছেন। অসুস্থ মায়ের সেবার পাশাপাশি করোনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মেঘনার গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে সচেতন করতে মানুষের পাশে ছিলেন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও উপজেলা পরিষদের পক্ষে খাদ্য সামগ্রী প্রদান করেন। করোনাকালিন শেষ অবলম্বন মাও তাকে ছেড়ে গেলেন।
শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করে এই জয়িতা নারী সব কিছুর পাশাপাশি বড় হতে হলে পড়াশোনা করতে হবে এই ভাবনা থেকে ছেলে মেয়েদের পাশাপাশি নিজেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রীধারী হিসেবে তৈরি করেছেন। এই অদম্য শিরিন তার সদ্ব্যবহারের কারণে সকল প্রজন্মের কাছে অধিক জনপ্রিয়।
গত ৪ জুলাই তার প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার খবরটি তিনি তার ভেরিফায়েড পেজে তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের জানান। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেবল তারই সংবাদ। অভিনন্দন বার্তায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভাইরাল। দিলারা শিরিন মেঘনার কৃতিসন্তান, অসম্ভব জনপ্রিয়তায় আজ নিজে একটি প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, প্যানেল চেয়ারম্যান একটা প্রক্রিয়া। উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান, দুই ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপজেলা প্রশাসন মিলেই উন্নয়ন কাজ করতে হয়। এই পদ আমার কাজ করাকে উৎসাহিত করেছে। আমি বিশ্বাস করি পরোপকারী মানুষ শ্রেষ্ঠ মানুষ। আমি দীর্ঘদিন যাবত মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে আছি। এখন এই পদ একটা অলংকার। আমি এটাকে দায়িত্ব ভেবেই জনকল্যাণে অতীতের তুলনায় অধিক কাজ করবো ইনশাআল্লাহ।