লিবিয়ায় জিম্মি গুরুদাসপুরের ৪ যুবক

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৪, ০৭:০৩ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
নাটোরের গুরুদাসপুরের ৪ জন প্রবাসী যুবককে (লিবিয়ায়) জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। প্রায় দুই বছর যাবৎ লিবিয়ায় বিভিন্ন কাজে শ্রমিক হিসাবে নিয়োজিত ছিলওই চার যুবক। গত ৬দিন যাবৎ মুক্তিপণের দাবিতে জিম্মি যুবকদের পরিবারের কাছে শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও পাঠাচ্ছেন অপহরণকারীরা। জিম্মি থাকা ওই চার জন যুবকের বাড়ি উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের বিয়াঘাট চরপাড়া গ্রামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রবাসী ৪ যুবকের পরিবার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই বছর পূর্বে বিয়াঘাট চরপাড়া গ্রামের মো. শাজাহান প্রাং এর ছেলে মো. সোহান প্রাং (২০), মো.তয়জাল শেখের ছেলে মো. সাগর হোসেন (২৪), মৃত-শুকুর আলীর ছেলে নাজিম আলী (৩২) ও ইনামুল ইসলামের ছেলে মো. বিদ্যুৎ হোসেন (২৬) লিবিয়াতে কাজের জন্য যান। সকলের পরিবার থেকেই ঋণ কর্জ করে সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। দুই বছরে কাজ করে কষ্টার্জিত অর্থ থেকে প্রতি মাসে ১৫-২০ হাজার করে তারা পাঠিয়েছেন। অভাবের সংসারেও হতদরিদ্র পরিবারগুলো প্রবাসী সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। প্রবাস থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য ছেলেদের বিদেশে পাঠিয়েছিলেন।
গত (২ জুন) লিবিয়া থেকে ওই ৪ প্রবাসীর পরিবারের ‘ইমু’ নম্বরে মোবাইল ফোনে কল আসে। রিসিভ করতেই বলা হয় ৪জন যুবককে তারা অপহরণ করেছেন। যারা অপহরণ করেছেন তারাও বাঙালি। তবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে ভিডিও কলে শোনা যায় ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দেয়া হলে তাদেরকে মেরে ফেলা হবে। এমন খবরে পরিবারের সদস্যরা স্তব্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকেই ‘ইমু’ নম্বরে জিম্মি যুবকদের শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয়। টাকা দিতে না পারলে নির্যাতনের মাত্রা প্রতিদিন বাড়তে থাকবে বলেও জানায় অপহরণকারীরা।
কথা হয় লিবিয়ায় জিম্মি থাকা প্রবাসী যুবক সোহানের বাবা শাজাহান প্রাং এর সঙ্গে। তিনি জানান, রবিবার তার মোবাইল ফোনের ‘ইমু’ নম্বরে লিবিয়া থেকে কল আসে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার ছেলে সোহান বলছিলো, মা বাঁচাও, বাবা বাঁচাও, আমাকে অপহরণ করে নিয়ে আসছে। বলছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে, না দিলে মেরে ফেলবে। তারপরে ছেলে সোহানকে একটি রুমের মধ্যে বেঁধে রেখে মারধরের ভিডিও পাঠায়। দুই বছর পূর্বে জমি বন্দক ও ঋণ করে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ করে লিবিয়াতে পাঠিয়েছেন ছেলেকে। দুই বছরে প্রতি মাসে ১৫-২০ হাজার করে প্রায় ২ লাখ টাকা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি তারা। এখন আবার ছেলেকে জিম্মি করে মুক্তিপণ চাচ্ছে ১০ লাখ টাকা। তাদের ঘরবাড়ি-ভিটে মাটি বিক্রি করলেও এত টাকা হবেনা। এখন ছেলেকে কীভাবে উদ্ধার করবেন। তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন তার ছেলেকে উদ্ধার করার জন্য।’
জিম্মি থাকা আরো এক যুবক নাজিমের স্ত্রী নাদিরা বেগম জানান, সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে অনেক আশা নিয়ে স্বামীকে ঋণ করে ৪-৫ লাখ টাকা খরচ করে প্রবাসে পাঠিয়ে ছিলেন। এখন স্বামীকে অপহরণকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে হলে দিতে হবে ১০ লাখ টাকা। এমনিতেই অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয়। কীভাবে ১০ লাখ টাকা দিয়ে স্বামীকে তিনি ও তার পরিবার উদ্ধার করবেন। তার কোলে একটি শিশু সন্তান রয়েছে। আরো এক সন্তানের বয়স ১২ বছর। বৃদ্ধ শাশুড়িকে ও সন্তানদের নিয়ে স্বামীর এমন বিপদ মুহূর্তে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। স্বামীকে উদ্ধারের জন্য তিনি ও তার পরিবার সরকারসহ রাষ্ট্র দুতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।’
বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান সুজা জানান,‘লিবিয়ায় তার গ্রামের ৪ জন প্রবাসী যুবককে অপহরণ করা হয়েছে এ বিষয়ে তিনি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনেছেন। তবে জিম্মি থাকা প্রবাসী যুবকদের পরিবারের লোকজন মনে করেছে জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, সাংবাদিকদের বিষয়টি জানালে তাদের সন্তানদের ক্ষতি হবে। এ কারণে হয়তো তারা জানায়নি। তবে তিনি নিজে থেকেই দ্রুত তাদেরকে সরকারের সহযোগিতা নেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।’
এদিকে এখন পর্যন্ত লিবিয়ায় জিম্মি থাকা ওই ৪ জন প্রবাসী যুবক থানা পুলিশসহ কাউকেই অপহরণ ও মুক্তিপণের বিষয়টি জানায়নি। এ বিষয়ে গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. উজ্জ্বল হোসেন জানান, ‘এ সংক্রান্ত কোন ঘটনা তাকে কেউ এখন পর্যন্ত জানায়নি। তবে অভিযোগ পেলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।