রেমাল: সাতক্ষীরা উপকুলীয় এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন রোধে স্থানীয় জনগণ

মসিউর ফিরোজ, সাতক্ষীরা থেকে
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৪, ১০:০৭ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
সাতক্ষীরার উপকূল এলাকায় ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। রবিবার (২৬ মে) রাত ৯ টার দিকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকুলীয় অঞ্চলের মূল ভুখন্ডে আঘাত হানে। এ সময় সুন্দরবন সংলগ্ন নদনদীতে ছিল ভাটার প্রবাহ।
যার কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেল সাতক্ষীরার উপকুলীয় জনপদ। এবারো বাতাসের গতিবেগ অনেকটাই কমিয়ে ঢাল হয়ে খুলনা অঞ্চলকে ভয়ানক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন।
সাতক্ষীরা উপকূলে ব্যাপক তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে উপকুলীয় এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন রোধে স্থানীয় জনগণ, জন প্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারিরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে রোধ করে ভাঙ্গন। যার কারণে বড় কোনো ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়নি। তবে, উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনিতে জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ উপচে অর্ধশতাধিক মৎস্য ঘের প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উপকুলীয় এলাকায় বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়িও ধসে গেছে। বিদ্যুতের খুঁটি উপরে তার ছিড়ে ও সঞ্চালন লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ে জেলার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎহীন রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সড়কে একাধিক পয়েন্টে গাছ গাছালি ভেঙে পড়ায় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ও স্থানীয় জনতা ভেঙে পড়া গাছ গাছালি সরিয়ে ফেলায় ভোর রাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যায়।
আরো পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় রেমাল: নোয়াখালীতে ৭৫ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত
সোমবার (২৭ মে) সকাল ১০টা থেকে উপকূলীয় এলাকার নদ—নদী ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে। মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিতে নরম হয়ে গেছে উপকুলী বেড়িবাঁধ। ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড়ো বাতাস, প্রবল জোয়ার উত্তাল আগ্রাসী নদীর পানি আছড়ে পড়ছে বেড়িবাঁধের উপর। ঝড়ের পরবর্তী সময়ে বৈরী আবহাওয়া থাকার কারণে বিস্তৃর্ণ এলাকার বেড়িবাঁধে ভয়ংকর ভাঙ্গনের শঙ্কায় উপকুলবাসী।
আশাশুনির প্রতাপনগর এলাকার নজরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে প্রতাপনগর অঞ্চলে ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ কমেছে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল দুর্বল হয়েছে কিছুটা।
শ্যামনগরের আনিছুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল সাতক্ষীরা উপকূলে ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে। অনেক গাছগাছালি উপড়ে চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এখনো গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির পাশাপাশি ঝোড়ো হাওয়া বয়ে চলছে। নদ—নদীগুলো এখনো উত্তাল। জোয়ারের পানি এখনো কমেনি।
তিনি আরো বলেন, বৃষ্টিতে বাঁধের মাটি নরম হয়ে গেছে। ভাটিতে পানি কমার কথা থাকলেও পানি কমছে না। এতে অনেক এলাকায বাঁধে ফাটল দেখা দিতে পারে। তবে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটা জানা যায়নি।
আরো পড়ুন: ঝালকাঠিতে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নদী তীরের বাসিন্দাদের
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি সাতক্ষীরা অতিক্রম করেছে। ১টায় এখানে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিলো ৭২ কিলোমিটার। সকাল থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালে জেলার ৬০ শতাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঝড়ে পল্লী বিদ্যুতের মূল সঞ্চালন লাইনের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ—সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে। এতে কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্যোগ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে অনেক লাইন বিদ্যুৎ—সংযোগ পুনরায় চালু করেছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই জানানো যাচ্ছে না। নিরূপণ করে বলতে পারবো কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছবিবুর রহমান বলেন, ঝড়ের প্রথমের অংশে আমরা স্থানীয়দের সহযোগীতায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভাঙ্গন রোধ করতে পেরেছি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের মেয়াদকাল দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। গতকাল (রবিবার) থেকে সোমবার সারাদিন তান্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি। দীর্ঘক্ষন বাঁধ সংরক্ষন করা সম্ভব হলেও পরবর্তী জোয়ারে বাঁধ ভেঙ্গে যাবে এবং আমাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আছে।