ঘূর্ণিঝড় রেমাল
ভোলায় পানি বন্দি লক্ষাধিক মানুষ, মৃত্যু ৩

এইচ এম নাহিদ, ভোলা
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৪, ০৪:২৬ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভোলায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। শহর রক্ষা বাঁধ ধসে প্লাবিত হয়েছে অনেক এলাকা। ঢালচর, চরকুকরি মুকরি, মনপুরাসহ বহু এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এদিকে এখন পর্যন্ত জেলায় গাছ চাপা পড়ে তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভোলার দৌলতখানে ঘরের ভেতর গাছ চাপা পড়ে মাইশা (৪) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (২৭ মে) ভোর ৪টার দিকে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাইশা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মনির হোসেনের মেয়ে।
শিশুর বাবা মনির জানান, রবিবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি সবাই। ভোর ৪টার দিকে হঠাৎ একটি গাছ আমার ঘরের ওপর চাপা দেয়। এতে টিনের চাল আমাদের ওপর চাপা পড়লে মাইশা মারা যায়। আমিও চাপা পড়েছিলাম, স্থানীয়রা এসে উদ্ধার করেছে।
আরো পড়ুন: রেমালের তাণ্ডব: এবারো বুক চিতিয়ে দাঁড়াল সুন্দরবন
এর আগে, ভোরে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে লালমোহনের চর উমেদ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদেরের স্ত্রী মনেজা খাতুন (৫০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা জানান, মনেজা খাতুন গতকাল (রবিবার) রাতে তার এক নাতিকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোরে ঝড়োবাতাসে তার বসত ঘরের উপর গাছ উপরে পড়লে ঘটনা স্থলেই মনেজা খাতুন মারা গেলেও অক্ষত আছে তার নাতি।
জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পঞ্চায়েত বাড়ির জাহাঙ্গীর পঞ্চায়েতের (৪৮) উপর গাছের ডাল ভেঙ্গে পেটের মধ্যে ঢুকে পড়লে হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান।
এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন। তিনি আরো জানান ঝড়ো বাতাসের কারণে এখন সব দিক থেকে খবর নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। ঝড় থেমে গেলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা সম্ভব হবে।
অপরদিকে, ঝড়, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে জেলার উপকূলীয় অঞ্চল। উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রতিটি উপজেলার শহর রক্ষা বাঁদ, ফসলের মাঠ, পুকুরের মাছ, গোয়ালের গবাদিপশু ভেসে গেছে। বহু শিক্ষালয় পানিতে ডুবে গেছে।
আরো পড়ুন: বাউফলে ঘরচাপায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু
মনপুরা উপজেলা হাজিরহাটের ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার জানান, হাজিরহাটের পূর্ব পাশে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) বস্তা ও জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষার জন্য বলা হয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের ঢালচর ও চরনিজামে বন্যা-জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নেই। এ কারণে বাসিন্দারা ঘর ছেড়ে, গবাদিপশু রেখেই নিরাপদ আশ্রয়ে গেছে। ঢালচর ইউপির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম জানান, সকালের জোয়ারে ইউনিয়নের সব এলাকা পাঁচ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ওই পানি কমতে না কমতে আবার রাতের জোয়ার আসবে। এখানে প্রায় ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশসহ ইউপি সদস্যদের মানুষের বাড়ি বাড়ি পাঠানো হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, ভোলা সদর, মনপুরা, লালমোহন, তজুমদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলায় মোট ১০টি স্থানে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা অচিরেই ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভোলার জেলা প্রশাসন মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য আমরা জেলাপ্রশাসন সবধরনের সহযোগিতার ব্যবস্থা করবো।