বিজিবি-র্যাব মোতায়েনের দাবি
সোনারগাঁওয়ে উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক সংঘর্ষের শঙ্কা

আবদুস ছাত্তার, সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) থেকে
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ০৮:০৬ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
আগামী মঙ্গলবার (২১ মে) দ্বিতীয় ধাপের আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে মাঠে ততই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে।
এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সদস্য মাহফুজুর রহমান কালাম (ঘোড়া), উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সদস্য বাবুল ওমর বাবু (আনারস), উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু (মোটরসাইকেল) ও সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার (দোয়াত কলম)।
অভিযোগ উঠেছে, ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালামের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হুমকি দিয়েছেন আনারস প্রতিকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বাবুল ওমর বাবুর সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ রনি।
এছাড়াও ব্যানার ফেস্টুন ও পোষ্টার অপসারণ করার অভিযোগে নির্বাচন সুষ্ঠ করতে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে অতিরিক্ত নিরাপত্তা চেয়ে জেলা প্রশাসক, রিটার্নিং অফিসার, নির্বাচন অফিসার, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালাম।
এদিকে আনারস প্রতিকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বাবুল ওমর বাবুও জামপুর ইউনিয়নের একটি সভায় ঘোড়া প্রতীকের সমর্থনকারী আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় স্বাচিপ নেতা ডা. আবু জাফর চৌধুরী বীরুকে উদ্দেশ্যে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও একটি নির্বাচনী সভায় তার চৌধুরী বংশধরকে ২১ মে নির্বাচনের পর এলাকা থেকে উচ্ছেদ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন।
আরো পড়ুন: পূর্বধলায় নির্বাচন ক্যাম্প ভাংচুর এবং দেশি অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যার কারণে সাধারণ ভোটারদের মনে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে সাধারণ ভোটাররা ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে আনারস প্রতীক ও ঘোড়া প্রতীকের নেতাকর্মী, সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে। যার কারণে অনেক ভোটাররাই ভোট কেন্দ্রে যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। এ কারণে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ভোটারদের জোর দাবি নির্বাচন কর্মকর্তারা যেনো ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি, র্যাব ও বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন মাহফুজুর রহমান কালাম নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ও সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে বলেছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি সোহাগ রনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে তার কর্মীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে আসছে।
তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তার নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দেন সোহাগ রনি। অভিযোগের সঙ্গে সংযুক্ত করা হুমকির পোষ্টে দেখা যায়, সোহাগ রনি তার আইডিতে বারদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও ঘোড়া প্রতীকের কর্মী মো. কামাল হোসেনকে উদ্দেশ্য করে হুমকি দিয়ে লিখেছেন, বারদির কামাল ঘোড়ার সঙ্গে যোগ দিছে। কারণ সে এখন আর দালালি করার সুযোগ পায় না। দালাল কামালরে যদি পাই চোরের মতো বান দিমু।
আরো পড়ুন: নির্বাচনী পথসভা থেকে বিরিয়ানি জব্দ
এছাড়াও সোহাগ রনিসহ আরো কয়েকজন কর্মীকে হুমকি দিয়েছেন সোহাগ রনি। হুমকি দেয়া ছাড়াও চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী এলাকায় সোহাগ রনি তার বাড়িতে বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে নির্বাচনী মাঠে ভীতি প্রদর্শনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ঘোড়া প্রতীকের ব্যানার ফেস্টুন ও পোষ্টার অপসারণ করে নেতাকর্মীদের হত্যারও হুমকি দিচ্ছে। তাই নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠ করার লক্ষে সোহাগ রনির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয় অভিযোগপত্রে।
এই অভিযোগ ছাড়াও কাঁচপুর, পিরোজপুর, শম্ভুপুরা, সনমান্দি, বারদি, নোয়াগাঁও ও বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন এলাকার ৪০টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ সার্বক্ষনিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের আবেদন করেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালাম।
তিনি গত ১৬ মে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে এই সব লিখিত অভিযোগ জমা দেন। চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর কর্মীদের হুমকিদাতা সোহাগ রনি সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক।
তবে, আনিত অভিযোগের ব্যাপারে সোহাগ রনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আরোপ করা হয়েছে। আসলে আমি কখনোই কাউকে কোনো হুমকি দেইনি।
প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ ও জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠ করতে আইনগতভাবে যা যা করার দরকার প্রশাসনিকভাবে তাই করা হবে। কেউ কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে পার পাবে না। সে যেই হোক না কেনো।
এবার সোনারগাঁও পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নে মোট ১৪২টি ভোট কেন্দ্রে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রয়োগ করবেন। এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫০ হাজার ৬৬৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮১ হাজার ৪১৪ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৫৪ জন।