সখীপুরে বংশাই নদীতে সেতু না হওয়ায় ভোগান্তি

সখীপুর, টাঙ্গাইল
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৩ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
বংশাই নদীর বড়ইতলা খেয়াঘাটের মাঝি মহাদেব নিজেও খেয়ায় পারাপার চান না। মহাদেবের পূর্ব পুরুষরা বংশপরম্পরায় বাৎসরিক ২০০-৫০০ টাকার বিনিময়ে টাঙ্গাইলের বাসাইল ও সখীপুর উপজেলার বড়ইতলা ঘাটে প্রতিদিন শতশত লোকজন এপার-ওপার আনা নেয়া করে থাকেন। কিন্তু মহাদেব জীবন সায়াহ্নে এসে নিজের চোখ দিয়ে তার খেয়া পারের ঘাট বড়ইতলা সেতু দেখে যেতে চান।
সরেজমিনে গিয়ে, ভরদুপুরে নদীর ঘাটে প্রতিবেদকের সঙ্গে মহাদেব দেখা হলে জানায়, এই ঘাট কখনো ইজারা হয়নি। স্থানীয় লোকজন সবাই কম-বেশি সম্পর্কিত। অর্থ নয় অনেকটা সম্পর্কের টানে দুইপারের লোকজন, কোমলমতি শিশু, স্কুলকলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বছরের পর বছর পারাপার করছে। মহাদেব নিজে পড়াশোনা না করলেও তার সন্তানাদি পড়াশোনা করাচ্ছে । তারা এ পেশায় আসতে আগ্রহী নয়। তাছাড়া রাতের বেলায় মহাদেব তেমন একটা চোখে দেখেন না।
গতবছর নদী সাতঁরে পার হওয়ার সময় দুজনের মৃত্যুতে মহাদেব ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। নদীর পশ্চিম তীরে গিলাবাড়ী, সুর্না, বার্থা অন্যদিকে পূর্ব তীরে দাড়িয়াপুর, আকন্দপাড়া, আবাদি বাজারসহ দুইপারের কয়েকটি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস।
নদীর পূর্ব পাড়ের বাসিন্দা শাহিন মিয়া জানান, আমাদের বড়ই ঘাটের ১০০-১২০মিটার প্রশস্ত নদীতে সেতু না থাকায় ভোগান্তি চরমে। নদীর ঐ পাড়ে আমার মতো অনেকের আবাদি জমি আছে। পূর্ব পাড়ের ফসলি ক্ষেত ও উৎপাদিত শস্য ঘরে তোলার বাড়তি খরচ হয়। আবার পশ্চিম পাড়েও অনেকের আবাদি জমি আছে।
নদীর পশ্চিম তীরে বাসিন্দা আবুল হোসেন জানায়, সেতু না থাকায় গবাদিপশু নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়। তিনি প্রতিবেদককে দেখে এগিয়ে এসে বলেন, আমরা আর কত কষ্ট কইরা নদী পার হমু। আমাগো কষ্ট কি আর শেষ হইবো না?
দাড়িয়াপুর শাহাবুদ্দিন আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, নদী পার হয়ে স্কুল যেতে হবে মনে হলেই সবার মনে ভীতি কাজ করে। এ ঘাটে আমাদের পারাপারের একমাত্র ভরসা শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর ভরা বর্ষায় নৌকা।
প্রতিবেদককে মুঠোফোনে দাড়িয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম শামীম বলেন, বড়ইতলা ঘাট জেলা সদরের সঙ্গে সবচেয়ে সহজ সংযোগ সড়ক। এই ঘাটে সেতু হলে দুই পাড়ের মানুষের হাট-বাজার, চিকিৎসা, বছরে এপার ফালু চাঁন ওপার নব্বেছ পীর সাহেবের মেলায় লাখো মানুষের যাতায়াতসহ অন্যান্য জরুরি সেবা সহজতর হবে। এই ঘাটে সেতু নির্মাণ দুই উপজেলার মানুষের প্রাণের দাবি।
সখীপুর উপজেলা প্রকৌশলী আ. বাছেদ মিয়া জানান, ঐ ঘাটে সেতু নির্মাণে প্রস্তাবনা হয়েছে। এবিষয়ে বাসাইল-সখীপুর টাঙ্গাইল-৮ সংসদ সদস্য অনুপম শাজাহান জয় (এমপি) দৈনিক ভোরের কাগজের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হলে নদীর দুইপাড়ের মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বলেন, ইতিমধ্যে বড়ইতলা ঘাটের সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে খুব শীঘ্রই নির্মাণ শুরু হবে।