টাকা না দিলে সাগরে মাছ ধরতে পারছে না জেলেরা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২০, ১০:০৬ পিএম

ফাইল ছবি

কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সামনে জেলেদের প্রতিবাদ
ভরা ইলিশ মৌসুম চললেও কুয়াকাটায় শতাধিক জেলে ইলিশ শিকার করতে পারছে না। সীমানা নির্ধারণের নামে অতিনিক্ত টাকা আদায়, সীমানা নির্ধারণ নিয়ে স্বজনপ্রীতি এবং জেলে সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে সমুদ্রে মাছ ধরতে না দেয়া সহ হয়রানীর অভিযোগ করছেন জেলেরা। জেলে সংগঠনের নামে সংগঠনের নেতারা নৌকা প্রতি ৫’শ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে সাগরে জেলেদের মাছ শিকারে বাধ্য করছেন। নতুন জেলেদের ক্ষেত্রে দিতে হচ্ছে ৫ থেকে ১০হাজার টাকা। চাহিদানুযায়ী টাকা না দিলে মাছ শিকার করতে পারছে না জেলেরা। জাল কেটে দেয়াসহ সাগরে জাল ফেলতে দিচ্ছে না প্রভাবশালী নেতারা।
ভূক্তভোগি জেলেরা আশার আলো জেলে ও মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির আওয়তায় গড়ে তোলা জেলে ইউনিট কমিটি বিলুপ্ত করার দাবি সহ দ্রুত সময়ে এ সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন।
ভূক্তভোগী জেলেদের সুত্রে জানা গেছে, আশার আলো জেলে সমবায় সমিতির মাধ্যমে কুয়াকাটা সৈকতের লেম্বুরবন হইতে গঙ্গামতি এলাকার খুটা জেলেদের সমুদ্রে মাছ ধরাসহ জেলেদের সমস্যা সমাধানের সুবিধার্থে ৬টি ইউনিট কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। প্রতিটি ইউনিট কমিটির আওতায় ৭০ থেকে দেড় শতাধিক জেলে নৌকা রয়েছে। আশার আলো জেলে সমবায় সমিতি কর্তৃক গড়ে তোলা এসব ইউনিট কমিটি সমুদ্রে মাছধরার জন্য সীমানা নির্ধারণ, কোন জেলে সমুদ্রের কোন স্থানে মাছ শিকার করবে তা নির্ধারণ করে থাকে। এসব ইউনিট কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকসহ নেতাদের বিরুদ্ধে জেলেদের কাছ থেকে সীমানা নির্ধারণের নামে নৌকা প্রতি ৫’শ-থেকে ৫হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ জেলেদের।
কুয়াকাটা সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার একাধিক জেলে নৌকার মাঝি ও মাল্লারা সাংবাদিকদের কাছে জেলে সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।
কুয়াকাটা পৌর এলাকার হোসেন পাড়া গ্রামের জেলে মোঃ মিলন মাঝি,নূর ছায়েদ মাঝি,নূর জামাল, সিদ্দিক, মিজানুর, মন্নান মোল্লাসহ ১৯ জেলে নৌকার মাঝি ও মাল্লারা অভিযোগ করেন, এখন ভরা ইলিশ মৌসুম চলছে কিন্ত তারা এখনও সমুদ্রে জাল ফেলতে পারেনি। ৫নং জেলে ইউনিট কমিটির সভাপতি আব্দুর রব হাওলাদার,সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীরসহ ইউনিট কমিটর নেতা স্বপন,আব্দুর রহমান (কালাম), মতি রহমান ও হালিম মাঝি চাঁদাবাজি,স্বজন প্রীতি ও সেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তাদেরকে নানাভাবে হয়রানী করে আসছে।
ভূক্তভোগি জেলেরা বলেন, আশার আলো জেলে সমিতি কর্তৃক নির্ধারণকৃত প্রতিটি খুটা জেলের জন্য ১৪০ হাত জায়গা ফাঁকা রেখে সমুদ্রে মাছধরার কথা থাকলেও সেখানে ৫নং ইউনিট কমিটির ৫ নেতা ১ হাজার থেকে দেড় হাজার হাত জলসীমানা আটকিয়ে মাছ শিকার করছে। নির্ধারণকৃত ১৪০ হাতের স্থলে জলসীমানার অতিরিক্ত জায়গা দখল করার কারণে শতাধিক জেলে মৌসুমের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও সমুদ্রে জাল ফেলতে পারেনি। এসব জেলেরা জাল ও নৌকা নিয়ে একেকজনে প্রায় ২-৩ লাখ টাকার মৎস্য সরঞ্জাম নিয়ে বেকার বসে আছে। আড়ৎদারদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা দাদন নিয়ে জাল নৌকা গড়ে তুললেও সমুদ্রে মাছ ধরতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছে এসব জেলে পরিবার গুলো।
[caption id="attachment_239271" align="aligncenter" width="700"]
কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সামনে জেলেদের প্রতিবাদ[/caption]
দলীয় প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ওই সংগঠনটির সভাপতি সহ অন্যান্য নেতারা মাছ শিকার করে আসছে। আর এ কারণেই এমন ভরা মৌসুমের সময় সাধারন জেলেরা মাছ শিকার করতে পারছে না।
এ ব্যাপারে ভূক্তভোগি জেলেরা কুয়াকাটা পৌর মেয়র, স্থানীয় কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন জনের কাছে অভিযোগ করলেও প্রতিকার পাচ্ছেন না এসব জেলেরা। বাধ্য হয়ে ঝাউবন এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক জেলে গত ২৪ আগষ্ট (সোমবার) দুপুরের দিকে কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সামনে এসে বিক্ষোভ করে এবং সাংবাদিকদের কাছে জেলে সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হয়রানীর বর্ণনা তুলে ধরে।
এসময় ভূক্তভোগি এসব জেলেরা জেলে ইউনিট কমিটি বিলুপ্তসহ সমুদ্রে অবাধ ও নিরাপদে মাছ শিকারের নিশ্চয়তা চেয়ে সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
জেলেদের এমন অভিযোগের বিষয়ে আশার আলো জেলে সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ নিজাম শেখ বলেন, জেলেরা ৫নং ইউনিট কমিটির বিরুদ্ধে তার কাছেও অভিযোগ দিয়েছে। ওই কমিটির সভাপতি,সম্পাদক তার কথা শুনছেনা। নিজাম শেখ আরও বলেন, সমুদ্রে জেলেদের জন্য সীমানা নির্ধারণ পুর্বক ১৪০ হাত পর পর খুটা বসিয়ে জাল পাতার জন্য ইউনিট কমিটিকে বলে দেয়া হয়েছে। সীমানা নির্ধারণের সময় তৈল খরচ বাবদ প্রকার ভেদে ৩’শ থেকে ১হাজার টাকা ইউনিট কমিটি নিয়ে থাকে। জেলেদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ টাকা নেয়া হয়েছে। যার পুরোটাই জেলেদের উন্নয়নে খরচ করা হয়। তিনি আরও বলেন, ১৯ নৌকার শতাধিক জেলে এখনও সমুদ্রে জাল ফেলতে পারেনি তা তার জানা ছিল না। মাছধরা থেকে বঞ্চিত এসব জেলেদের সীমানা নির্ধারণ করে জেলেদের সমস্যার সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি। তবে ৫নং ইউনিট কমিটির বিরুদ্ধে নতুন জেলেদের কাছ থেকে ৫-১০ হাজার টাকা নেয়ার ব্যাপারে তার জানা নেই এমনটাই জানিয়েছে।
এবিষয়ে পৌর মেয়র আঃ বারেক মোল্লা বলেন, সমুদ্রে নির্ধারিত জলসীমানার অতিরিক্ত জায়গা দখল করার বিষয়ে জেলেরা তার কাছে অভিযোগ দিয়েছে। ওই ইউনিট কমিটির সভাপতি ও তার বড় ভাই স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর আব্দুর রহিম হাওলাদারকে এ বিষয়ে দ্রুত সমাধান করার জন্য বলে দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
