ভুয়া হিসাব দেখিয়ে এতিমখানার টাকা আত্মসাৎ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২০, ০৮:২৭ পিএম
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী দারুল মাছাকীন ইসলামিয়া এতিমখানার বিভিন্ন আয় ব্যায়ের ভুয়া ভাউচার ও হিসাব বিবরণী দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে অত্র প্রতিষ্ঠানের কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইছাখালী ফার্যিল ডিগ্রি মাদরাসার অধ্যক্ষ আ.ক.ম রেজাউল করীমের বিরুদ্ধে।
এর প্রতিকার চেয়ে অত্র প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও কার্যকরী সদস্য পলাশ উপজেলার সমাজ সেবা অফিসারের বরাবরে গত ৩০/০৬/২০২০ ইং তারিখে পৃথক পৃথক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগের অনুলিপি নরসিংদী-২ পলাশের সংসদ সদস্য ও অত্র প্রতিষ্ঠানে প্রধান পৃষ্টপোষক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে জমা দেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, অত্র প্রতিষ্ঠানের কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ.ক.ম রেজাউল করীম বিভিন্ন অপ-কৌশলে এতিমখানার নামে দোকান ঘর নির্মাণে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তাছাড়া এতিমখানার সোনালী ব্যাংক পলাশ শাখা থেকে উত্তোলনকৃত সমোদয় টাকা ইসলামী ব্যাংকে জমা না দিয়ে ৪১ হাজার এক চল্লিশ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
ব্যাংক স্ট্যাটমেন্টের মাধ্যমে গত সভায় তার সত্যতা যাচাই হয়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয়, এতিমখানার বিভিন্ন অনুদানের টাকা আত্মগোপন করে আত্মসাৎ করা, আয় ব্যায়ের ভুয়া ভাউচার ও হিসাব বিবরণী দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। এতিমখানার নির্মাণধীন দোকান ভাড়া মাদরাসার রশিদের মাধ্যমে টাকা আদায় করে গোপন রাখা, এ বিষয়ে বিভিন্ন সভায় জানতে চাইলে তালবাহানা করে বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া অন্যতম। এ দিকে বিষয়টি বাইরে জানাজানি হতে থাকলে, এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তোলপাড় ও অত্র প্রতিষ্ঠানের কার্যকরী কমিটির একাংশ এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বইছে প্রতিবাদের ঝড়।
এ বিষয়ে গত ১০ জুলাই (শনিবার), সরেজমিনে এতিমখানার গিয়ে ম্যানেজিং কমিটি সাথে কথা বলে জানা যায়, এতিমখানার দোকান নির্মাণ হিসাব বিবরণীতে বাস্তবের সাথে প্রচুর গড়মিল রয়েছে। যার মধ্যে রাজ মিস্ত্রি বাবদ চুক্তিকৃত অর্থচেয়ে অনেক বেশি টাকার ভাউচার দেখানো, নির্মাণে কাজে ব্যয়কৃত সিমেন্ট পরিমাপ অস্বাভাবিক ও বস্তার সাথে টাকার গড়মিল। মালামালসহ ওয়ারিং খরচ বেশি ধরা, নির্মাণে বালুর হিসাব গড় মিল, মাটি ভরাট চুক্তি চেয়ে বেশি ব্যয় দেখানো হয়েছে, ইটের ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় দেখানো হয়েছে অনেক বেশি।
এ ভাবে তিনি বিভিন্ন অপ-কৌশলের মাধ্যমে এতিমখানার ফান্ড থেকে প্রায় দুই লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ। এ দিকে এতিমখানার পাশেই অবস্থিত ইছাখালী ফাযিল ডিগ্রি মাদরাসা ও জামে মসজিদ। দীর্ঘ বছর ধরে এই মাদরাসার অধ্যক্ষর দায়িত্বে রয়েছেন ওই অভিযুক্ত আ.ক.ম রেজাউল করিম।
তার বিরুদ্ধে মাদরাসার দোকান ভাড়া নিয়ে ৩ লাখ সত্তর হাজার টাকার অনিয়মের অভিযোগ করেন আনিসুর রহমান নামে এক ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, প্রায় দুই বছর আগে অধ্যক্ষ রেজাউল করিম আমার কাছে দোকান ভাড়া দিবে কথা বলে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু কোন রশিদ দেননি। এমনকি এখন পর্যন্ত দোকান ও বুঝিয়ে দেয়নি।
এ ছাড়া ও অত্র প্রতিষ্ঠানের মসজিদ কমিটির সভাপতির পদে ও দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও এতিমখানা কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম সিকদার জানান, মসজিদের পাশেই ঐতিহ্যবাহী তালতলী বাজার। বাজারের দোকানদারদের টাকায় ইমাম মোয়াজ্জিনের বেতন হয়। আ.ক.ম রেজাউল করিমের একক সিদ্ধান্তে জুম্মা নামাযের পর মোনাজাত বন্ধ করে দেওয়ায় দীর্ঘ ৬ মাস যাবৎ ইমাম মোয়াজ্জিনদের বেতন ঠিকমত দিতে পারছি না। এ নিয়ে স্থানীয় মুসল্লিদের মাঝে ও চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। মূলত মাদ্রার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদ্যর দোহাই দিয়ে বিভিন্ন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছারিতার মাধ্যমে এতিমখানা ও মসজিদ পরিচালনা করছেন অধ্যক্ষ আ.ক.ম রেজাউল করিম।
এতিমখানার অর্থ আত্মসাতের ঘটনা সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত হলে তার অপসারণসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইছাখালী দারুল মাছাকীন ইসলামিয়া এতিমখানার কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইছাখালী ফাযিল ডিগ্রি মাদরাসার অধ্যক্ষ আ.ক.ম রেজাউল করিম। তার দাবি এগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ভিত্তিহীন। একটি মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এতিমখানা কমিটিতে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্বচ্ছভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
এ ব্যাপারে পলাশ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, অর্থ আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি এমপি স্যারও উপজেলা চেয়ারম্যানের নলেজে আছে। তদন্তের পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।