কৌশল অবলম্বন করলেই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ করা সম্ভব

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:২৩ পিএম
রংপুর বিভাগ বিড়ি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম ডিনার বলেছেন, জরুরি ভিত্তিতে কৌশল অবলম্বন করলে বিড়ি সেক্টরে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টায় বিড়ি মালিক সমিতির কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। বিড়ি সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা উদ্যোক্তা সংগঠন, সম্মিলিত সাংবাদিক জোট ও রংপুর বিভাগ বিড়ি মালিক সমিতির উদ্যোগে এ আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সাংবাদিক জোটের মহাসচিব মো. ইকবাল হোসেন সরদার এবং প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রংপুর বিভাগ বিড়ি মালিক সমিতির বিড়ি মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মো. মজিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম ডিনার প্রমুখ।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা অবগত আছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিড়ি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর উঠে এসেছে। কিন্তু এতে বিড়ি সেক্টরে রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ হয়নি। প্রতি বছর বিড়ি সেক্টরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ ফ্যাক্টরির মালিকরা রাজস্ব ফাঁকিতে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
অনিয়ম ও জাল ব্যান্ডরোল বিষয়ে তরিকুল ইসলাম ডিনার বলেন, বিড়ির গায়ে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ব্যান্ডরোল নির্ধারণ করা হয়েছে যা, ভ্যাট ট্যাক্সসহ ৯ টাকা ১০ পয়সা। পাশাপাশি প্রতিটি বিড়ির প্যাকেটের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ টাকা। কিন্তু নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে অর্থাৎ ৬ টাকা থেকে ১৩ টাকা মূল্যের বিড়িতে বাজারে সয়লাব। সরকারের দেয়া নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে জাল ব্যান্ডরোল এবং ব্যবহৃত ব্যান্ডরোল প্যাকেটের গায়ে লাগিয়ে বাজারজাত করে আসছে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা। এতে করে নামিদামি ব্র্যান্ডের বিড়ি ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
রংপুর বিড়ি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডিনার জানান, বিড়ি তৈরির সিগারেট পেপারের সাথে সরকারি রাজস্ব ৯ টাকা ১০ পয়সা সংযুক্ত করে দেয়া হলে বিড়ির প্যাকেটে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার হওয়ার প্রশ্নই উঠবে না। এরপরও বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও কারচুপি বন্ধ করতে হলে সোজাসুজি বিকল্প পদ্ধতি হচ্ছে বিড়ি উৎপাদনে ব্যবহৃত সিগারেট পেপার তৈরির মিলস্ রয়েছে দুইটি । তাহলো-আফিল পেপার মিলস্ লিমিটেড এবং বসুন্ধরা পেপার মিলস্ লিমিটেডে। ওই সিগারেট পেপার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দুটিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে নেয়া জরুরি। কারণ ব্যান্ডরোল সিষ্টেম উঠে যাবে এবং বিড়ি তৈরির সিগারেট পেপারের সাথে উক্ত রাজস্ব ৯ টাকা ১০ পয়সা সংযুক্ত করে দেওয়া হলে, বিড়ি সেক্টরে সরকারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ বেড়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
তিনি আরও বলেন, এর মাধ্যমে মাঠ পর্যায় রাজস্ব কর্মকর্তাদের অহেতুক হয়রানি ও সময় অপচয় এবং কষ্ট লাগব হবে বিড়ি সেক্টরে। জরুরি ভিত্তিতে এই কৌশল অবলম্বন করলে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। অপরদিকে ব্যান্ডরোল উৎপাদনে যে জটিলতা অর্থাৎ উৎপাদন খরচ, কাগজ, কালি, জনবল, পরিবহন খরচ, পোস্ট অফিস থেকে উত্তোলন অর্থাৎ রাজস্ব আয়ের অর্ধেক এই ধরনের কর্মকাণ্ডে ব্যয় হয় বলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন উঠে এসেছে। তাই কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের বিড়ি ফ্যাক্টরিতে প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ নিয়ে উপস্থিত হতে হবে না বা হাটবাজারে বা অভিযান পরিচালনা করে নকল বিড়ি ব্যবসায়ীদের আটক করার দরকার হবে না।
জাল ব্যান্ডরোল যাতে বিড়ি প্যাকেটে ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য তরিকুল ইসলাম ডিনার বলেন, ওই কৌশল অবলম্বনে রাজস্ব কর্মকর্তাদের বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের যানবাহন সংকট, লোকবল সংকটসহ নানান ধরনের সমস্যা সমাধান সহজীকরণ হবে। রাজস্ব আহরণ হবে সবচেয়ে সহজে এবং স্বচ্ছতায় পরিণত হবে। এই বিষয়ে দেশের বিভিন্ন বিড়ি মালিক সমিতি, স্থানীয় প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং গণমাধ্যম সংগঠন সম্মিলিত সাংবাদিক জোট যৌথভাবে সমন্বয় করে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির এবং জালিয়াতির তথ্য সংগ্রহ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও বিড়ি মালিক সংগঠনের নেতা তরিকুল ইসলাম ডিনার জানান।
তিনি বলেন, রাজস্ব বিভাগ বরাবর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা হলো বিড়ি তৈরির সিগারেট পেপারের সাথে ব্যান্ডরোলের নির্ধারিত ৯ টাকা ১০ পয়সা সংযুক্ত করা এবং বিড়ি উৎপাদনকারী সিগারেট পেপার তৈরির পেপার্স মিলস্ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণে রাখা মানে কত কাগজ বিক্রি হচ্ছে, তার হিসেবে করে ওই দুটি মিল থেকে রাজস্ব আদায় করা হলেই সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে।