সিলেটের সড়ক-হাসপাতালে পানি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৩, ০৮:৫১ এএম

ছবি: ভোরের কাগজ
সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায় ভারি বৃষ্টিতে বাড়ছে নদীর পানি
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা অব্যাহত পাহাড়ি ঢলে সিলেট মহানগরের বেশিরভাগ সড়কই পানির নিচে। এতে যাতায়াতে দুর্ভোগ বাড়ছে। পাশাপাশি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের ভেতরে পানি থাকায় স্বাস্থ্যসেবায়ও বিঘ্ন ঘটছে। অপরদিকে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায় ভারি বৃষ্টিতে বিভিন্ন নদীর তীর উপচে নতুন করে বাড়িঘরে পানি ঢুকছে। এমন পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিত পরিবারগুলো দীর্ঘস্থায়ী দুর্ভোগের আশঙ্কা করছে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-
সিলেট : সিলেটে কয়েকদিন ধরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। এতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে গেছে। গত রবিবার নগরের বেশিরভাগ সড়কই ছিল পানির নিচে। এছাড়া কিছু এলাকায় বসতঘরেও ঢুকেছে পানি।
সরেজমিন দেখা গেছে, সিলেট নগরের জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা এলাকার সড়ক থেকে শুরু করে মদিনা মার্কেট, আখালিয়া, সুবিদবাজার, জালালাবাদ, হযরত শাহজালাল (র.) মাজার এলাকার পায়রা ও রাজারগল্লি, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, দাড়িয়াপাড়া, যতরপুর, উপশহর, ছড়ারপাড়, তালতলাসহ বেশ কিছু এলাকা জলাবদ্ধ। উপশহর, তেররতন, শাহী ঈদগাহ, জামতলা, মনিপুরী রাজবাড়ি, কানিশাইল, ঘাসিটুলায় বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি প্রবেশ করেছে। সিলেট শহরের ওসমানী মেডিকেল কলেজের ভেতরে পানি থাকায় স্বাস্থ্যসেবায়ও বিঘ্ন ঘটছে। অপরদিকে জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। নতুন করে সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের দামারী নামক স্থানে অর্ধ কিলোমিটার সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। হাওড়াঞ্চলে বসবাসরত কয়েক হাজার মানুষ পানবন্দি রয়েছে। পানিবন্দি মানুষের কর্মসংস্থান না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। গোচারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গৃহপালিত পশুর খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে।
একইভাবে জেলার কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও বালাগঞ্জ উপজেলায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এসব উপজেলার অনেক রাস্তাঘাটে পানি উঠে যাওয়ায় জনসাধারণের চলাচলে বিঘœ ঘটছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আরো কয়েকদিন সিলেটে ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এ পরিস্থিতিতে বাসিন্দাদের মধ্যে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেট সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, গত রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ৩০৭.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৬১ মিলিমিটার এবং ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ১৫.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। গোয়াইনঘাট উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ শাখার কর্মকর্তা (পিআইও) শীর্ষেন্দু পুরকাস্থ বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। উপজেলাজুড়ে ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিপুলসংখ্যক উদ্ধারকারী টিম রয়েছে। আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। উপজেলার সব জনপ্রতিনিধিদের জরুরি বার্তা দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা আছে।’
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘মেডিকেল কলেজের নিচতলায় পানি ঢুকেছে। পানি ঢুকেছে হাসপাতালের কক্ষেও। গত বছর বন্যার সময় পানি ঢুকতে দেখে সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্টরা যদি কার্যকর পদক্ষেপ নিতেন, তবে এবারো এমন পরিস্থিতি হতো না। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানি আরো বাড়বে। তখন হয়তো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক নাও থাকতে পারে।’
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জ ও ভারতের উজানে মেঘালয়ে একসঙ্গে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে সুরমা নদীর পানি আরো বেড়েছে। গতকাল সোমবার সকালে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অতিবৃষ্টির ফলে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর, উকিলপাড়া, জামতলা, তেঘরিয়া, উত্তর আরপিননগর, মরাটিলা কাজীর পয়েন্ট, হাসননগরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাঘাটে পানি উঠায় যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটা, বৌলাই, রক্তি, পাঠলাই, কুশিয়ারা; সদর উপজেলার নলজুর, খাসিয়ামারা; দিরাই উপজেলার কালনীসহ সব নদনদীর পানি বাড়ছে নিয়মিত। জেলা সদর, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক স্থানে বাঁধের কারণে পানি আটকে থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৭০ মিলিমিটার, জেলার ছাতক উপজেলায় ২১৬ এবং দিরাই উপজেলায় ১৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, আগামী দু’তিন দিন সুনামগঞ্জে ভারি বৃষ্টিপাত হবে। এতে সার্বিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, বন্যা মোকাবিলা করতে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমরা সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। পানি বাড়ছে ঠিকই, তবে এখনো জেলার কোথাও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।’
নেত্রকোনা : টানা ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার প্রধান নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে কলমাকান্দা উপজেলায় উব্ধাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। এছাড়া সোমেশ্বরী, কংস ও ধনু নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা গেছে, জেলার কলমাকান্দা উপজেলার পোগলা ও বড়খাপন ইউনিয়নের অন্তত ৭টি গ্রামের নিম্নাঞ্চলে বিভিন্ন বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। তলিয়ে গেছে কলমাকান্দা-বরুয়াকোনা সড়কটি। বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের মাঠ ও বারান্দায় পানি প্রবেশ করেছে।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, কলমাকান্দায় কিছু নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দিদের উদ্ধারের জন্য টিম তৈরি আছে। তাদের জন্য খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র এবং পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রাখা আছে। ইতোমধ্যে কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে।
কলমাকান্দা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন জানান, ভারি বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মোট ৩৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় পানি উঠেছে।