ছয় মাসে ৪৪ হাজার রোগী ভর্তি সরকারি হাসপাতালে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৩, ১১:২৮ এএম

বরিশাল বিভাগে নিয়ন্ত্রণহীন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী। গত ৬ মাসে সরকারি হাসপাতালগুলোতেই চিকিৎসা নিয়েছে প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ। এর বাইরে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসহ বিভিন্ন চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে আরো দ্বিগুনেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। অবশ্য গত বছরের মতো চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে প্রতিদিনই ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। গত দুই মাসে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার শুধু সরকারি হাসপাতালগুলোতেই প্রায় ২০ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে মে মাসে ১২ হাজার ৪৬৪ জনের স্থলে জুন মাসে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৭ হাজার ১৯৮ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। মে মাসের তুলনায় জুনে সংখ্যাটা প্রায় ৫ হাজার কমে আসলেও চিকিৎসকরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে সবাইকে স্বাস্থ্য সচেতন থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্রমতে, গত বছরও মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত প্রায় ৭২ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসা গ্রহণ করে। ২০২১ সালেও মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত ৭০ হাজারের বেশি নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসা গ্রহণ করেছিলেন। সে সময় মৃত্যু হয়েছিল ১২ জনের। তবে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসেই প্রায় ৪৪ হাজার রোগী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের ফলে এবার দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যাটা আগের দুবছরের তুলনায় অনেকটাই বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, গত ৬ মাসে ডায়রিয়া আক্রান্তদের মধ্যে শীর্ষে দ্বীপজেলা ভোলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় ১১ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়ার চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। পিরোজপুরে সংখ্যাটা প্রায় ৯ হাজার। বরিশালে প্রায় ৮ হাজার, পটুয়াখালীতে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার, বরগুনায় প্রায় ৫ হাজার এবং ঝালকাঠিতেও প্রায় ৪ হাজার নারী-পরুষ ও শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় গত জানুয়ারিতে ৪ হাজার ৩৪৫ জন ডায়রিয়া রোগী বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করলেও ফেব্রুয়ারিতে সংখ্যাটা ৪ হাজার ৬২০ জনে উন্নীত হয়। কিন্তু মার্চে এ অঞ্চলে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা এক লাফে বেড়ে ৬ হাজার ৭০৪ জনে পৌঁছে। এপ্রিলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে সরকারি হাসপাতালসমূহে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাটা ৯ হাজার ৬৮২ জনে উন্নীত হয়। মে মাসে চলতি বছরের সর্বাধিক ১২ হাজার ৪৬৪ জন ডায়রিয়া রোগী দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি হাসপাতালসমূহে চিকিৎসা গ্রহণ করার পর জুন মাসে সংখ্যাটা ৭ হাজার ১৯৮ জনে হ্রাস পেলেও তা চলতি বছরের তৃতীয় সর্বোচ্চ।
এ পরিসংখ্যান দক্ষিণাঞ্চলের ডায়রিয়া পরিস্থিতির জন্য এখনো কোনো সুখকর বার্তা দিচ্ছে না বলেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহলসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও। এক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশাপাশি সহজপাচ্য খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের মতে, পথে পথে নানা ধরনের মুখরোচক খাবারের রমরমা ব্যবসা চলছে। যা মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয় বলে জানিয়ে চিকিৎসকরা ‘এসব খাবার শুধু ডায়রিয়া নয়, সব ধরনের পেটের পীড়ার অন্যতম কারণ’ বলেও মনে করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহিন খান জানান, গত কয়েকটি বছর করেনার পর ডায়রিয়া ও ডেঙ্গু নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সব চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরন্তর লড়াই করে চলেছে। পানিবাহিত এ রোগ প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকার কথা জানিয়ে ডায়রিয়া চিকিৎসায় দক্ষিণাঞ্চলে ৪১০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলেও জানান তিনি। চিকিৎসকের কিছুটা ঘাটতি থাকলেও ডায়রিয়া প্রতিরোধে এ অঞ্চলের সবগুলো সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও কর্মী প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ডায়রিয়া চিকিৎসায় আইভি স্যালাইনসহ কোনো চিকিৎসাসামগ্রীর অভাব নেই দাবি করে বিভাগীয় পরিচালক জানান, রবিবার সকাল পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার সিসির প্রায় ৪৮ হাজার ব্যাগ এবং ৫০০ সিসির প্রায় ২৬ হাজার ব্যাগ আইভি স্যালাইন মজুত রয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সব এন্টিবায়োটিক ক্যাপসুলসহ ওরাল সাসপেন্সনের কোনো সংকট নেই বলেও জানান তিনি।