বরিশালের ঈদ বাজার: নামিদামি বিপণি ক্রেতাশূন্য ফুটপাতে উপস্থিতি বেশি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৬ এএম

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর বাকি মাত্র ৮ দিন। তবে ঈদ বাজার যেভাবে জমে ওঠার কথা, সে রকম প্রাণবন্ত ভাব নেই মার্কেটগুলোয়। অবশ্য ১৫ রোজার পর থেকে ঈদ কেনা-কাটায় কিছুটা ব্যস্ততা বেড়েছে বরিশালের বিভিন্ন শপিংমলসহ বিপণিবিতানগুলোয়। যদিও দিনের বেশিরভাগ সময় নামিদামি পোশাক ও জুতোর দোকানগুলো থাকছে ক্রেতাশূন্য। আর বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত নামিদামি বিপণি বিতানের চেয়ে ফুটপাতের দোকান ও হকার্স মার্কেটগুলোয় ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি থাকছে।
এ বিষয়ে নামিদামি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলছেন, বিগত সময় থেকে ক্রেতা সমাগম এবার অনেকটাই কম। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেচাবিক্রিও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
আর ক্রেতারা বলছেন, তুলনামূলকভাবে বরিশালে পোশাকের দাম অনেক বেশি। তাই তারা অনলাইন ও ঢাকামুুখী হচ্ছেন ঈদ বাজার করার জন্য।
সরেজমিন বরিশাল নগরীর চকবাজার, সদর রোড, গির্জা মহল্লা ও বাংলা বাজার এলাকার পোশাকের প্রায় প্রতিটি দোকানেই ভিড় চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বেশিরভাগ ক্রেতাকেই দোকান ঘুরে কোনো কিছু না কিনেই বাসায় ফিরে যেতে দেখা গেছে। আবার কেউ কেউ বাধ্য হয়েই পোশাক কিনছেন।
আব্দুর রহমান নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানান, এবার পোশাকের এতো দাম যে বলার মতো না, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য যা খুবই কষ্টসাধ্য। হাসান সিদ্দিকী সানি নামে এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, ব্রান্ডের পোশাকগুলো ভালো কিন্তু সেগুলোর প্রাইচ কয়েকগুণ বেশি রাখা হচ্ছে। আমরা বাধ্য হয়েই নিচ্ছি, কিছুই করার নেই। একই কথা জানালেন সাদিয়া জামান নামে এক কিশোরী। তিনি বলেন, বরিশালের ব্রান্ডের প্রায় সব শোরুমেই ঘুরলাম, প্রতিটি শোরুমেই অতিরিক্ত দাম।
শাহিনা আক্তার নামে এক নারী বলেন, দিন দিন বরিশাল শহরে পোশাক-জুতোর দোকান বাড়ছে। ব্রান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া যারা নতুন দোকান দিয়েছেন, তারা সবাই ভালো পোশাক সরবরাহ করছেন। তবে তুলনামূলকভাবে দাম অনেক বেশি মনে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে অনলাইনে কেনাকাটা করছি। কারণ অনলাইনেও নামিদামি ও বিশ্বস্ত অনেক প্রতিষ্ঠান সুনামের সঙ্গে পণ্য বিক্রি করছে।
তবে ক্রেতাদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে টপ-টেন বরিশাল শাখার ব্যবস্থাপক মো. ইমরান শেখ বলেন, আমরা সব সময় পোশাকের গুণগত মান ধরে রাখার চেষ্টা করি। মানের সঙ্গে আমাদের প্রতিটি পণ্যের দামটাও সামঞ্জস্য করে নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে, নির্ধারিত ও সর্বাধুনিক ডিজাইনের কাপড় কিনতে বরিশাল থেকে অনেক তরুণ-তরুণী ঢাকামুখীও হচ্ছেন। বিভিন্ন পোশাকের দোকান ঘুরে সজিব খান নামে এক কলেজ ছাত্র বলেন, বরিশালে যে দাম তাতে ঈদে শপিংয়ের জন্য বাজেটের টাকায় শার্ট-প্যান্ট কিনলে জুতা হবেনা, আর জুতা হলে শার্ট নয়তো প্যান্ট হবে না, এমন অবস্থা। তবে বাজেটের টাকা নিয়ে যদি ঢাকার নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোডসহ মিরপুরের মার্কেটে যাই, তাতে সব যেমন কেনা হবে, তেমনি ঘোরাও হবে।
এরই মধ্যে অনেকে ঢাকা থেকে ঈদ বাজার করে ফেলেছেন জানিয়ে রবিউল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে এখন তো সকালে ঢাকায় গিয়ে কাজ সেরে আবার রাতের মধ্যে বাসায় চলে আসা যায়। আমরা চার বন্ধু মিলে গত শনিবার সকালে ঢাকায় গেছি, সারাদিন ঘোরাঘুরির সঙ্গে কেনাকাটা সেরে আবার রাতের বাসে বরিশালে চলে এসেছি। এদিকে বরিশালে কসমেটিকস ও কাপড়ের নির্ধারিত মূল্যের থেকে দ্বিগুণ দামে বিক্রির অভিযোগ গত কয়েক দিন ধরে। এক্ষেত্রে টানা অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আর প্রতিদিনই কোনো না কোনো নামিদামি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করছেন তারা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুমি রানী মিত্র জানান, প্রতিটি পণ্যে যেখানে যৌক্তিক একটা লাভ করা যায়, সেখানে বরিশালে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ লাভ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এছাড়া অনেকে অনৈতিকভাবে আলাদা করে সংযুক্ত করেছে ভ্যাট। এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
অপরদিকে চকবাজার, সদররোড, কাঠপট্রি এলাকার নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও সিটি করপোরেশনের সামনের ফুটপাতের দোকান, হাজী মো. মহসিন হকার্স মার্কেট ও সিটি মার্কেটে ক্রেতা সমাগম দিনে দিনে বাড়ছে। আর বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।