পরকিয়া প্রেমিক যুগলকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২২, ০৩:২৮ পিএম

প্রতীকী ছবি
পাবনার চাটমোহর উপজেলায় পরকিয়া প্রেমিক যুগলকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছেন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। শুক্রবার (১২ আগস্ট) রাতে উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের করকোলা গ্রামের আব্দুল খালেকের বাড়িতে নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, নিমাইচরা ইউনিয়নের করকোলা গ্রামের সুমন আলীর স্ত্রী এক সন্তানের মা শাপলা খাতুনের (২২) সঙ্গে পার্শবর্তী ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের হঠাৎপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামে ছেলে এক সন্তানের বাবা হেলাল উদ্দিনের (২৭) পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। বিভিন্ন সময় তারা একে অপরের সঙ্গে দেখা করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শাপলার ঘরে প্রবেশ করেন হেলাল। এ সময় এলাকাবাসী টের পেয়ে তাদেরকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে। পরে গাছের সঙ্গে শেকল দিয়ে বেঁধে সারা রাত মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।
পরদিন শনিবার সকালে তাদেরকে নিয়ে আসা হয় নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি)। সেখানে নিমাইচড়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরজাহান বেগম মুক্তি ও তার বোন অষ্টমনিষা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতানা জাহান বকুল সালিশি বৈঠক করেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলা সালিশি বৈঠকে প্রেমিক হেলালকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে মুক্ত দেয়া হয় এবং শাপলার স্বামী সুমনকে প্রেমিকা শাপলাকে ফিরিয়ে নিতে বলা হয়। সুমন প্রথমে রাজি না হলে পরববর্তীতে কাবিননামার ভয় দেখালে রাজি হয়। পরবর্তীতে জরিমানার টাকাও বিভিন্ন জনের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়ে যায়।
এ বিষয়ে হেলাল উদ্দিনের বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলেকে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। পরবর্তীতে পরিষদের লোকজন ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দিয়েছে। এই টাকা পরিষদের চৌকিদারসহ লোকজনরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে।
মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে শাপলা খাতুনের স্বামী সুমন আলী কল রিসিভ করেননি। তবে জরিমানার বিষয়টি জানেন না এবং সেই টাকাও তিনি পাননি বলে এলাকাবাসীকে জানিয়েছেন।
নিমাইচড়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরজাহান বেগম মুক্তি বলেন, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ও পাশ্ববর্তী অষ্টমনিষার চেয়ারম্যান আমার বড় বোন সুলতানা জাহান বকুল আপার উপস্থিতিতে তাদের সাংসারিক ও সন্তানদের কথা চিন্তা করে বিষয়টি মিটমাট করে দেয়া হয়েছে। কারোর প্রতি জোর-জুলুম করা হয়নি। তবে রাতে অভিযুক্তদের শেকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন বিষয়টি আমি জানতাম না, পরবর্তীতে জেনেছি। আর জরিমানার বিষয়টিও আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে অষ্টমনিষা ইউপি চেয়ারম্যান সুলতানা জাহান বকুল বলেন, আমি সালিশের পুরো সময় ছিলাম না। জরুরি কাজে আমি চলে এসেছিলাম। পরবর্তীতে কি হয়েছে আমি জানিনা। নির্যাতনের বিষয়টিও আমি জানতাম না।
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। রাতে ওই যুগল আটক হলে সকালে স্থানীয়রা বসে সমাধান করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বা জরিমানা হয়েছে কিনা আমি জানি না। নির্যাতনের বিষয়টিও আমাদের জানা নেই। কেউ যদি থানায় অভিযোগ দেয়, তাহলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।