ফেনীর ৮০ গ্রাম প্লাবিত, উদ্ধার কাজে বিজিবি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৪, ১২:৪৫ পিএম

ছবি : ভোরের কাগজ
তিন দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে দুই উপজেলায় অন্তত ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে এসব পানিবান্দি মানুষ। মহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পুরনো ১২টি ভাঙ্গা স্থানসহ ২৭টি স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।
ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিন জেলা জুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে।
ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানান, টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরাম উপজেলায় ২২টি ও ফুলগাজী উপজেলায় ৪টি স্থান ভেঙে যায়। গত তিনদিন টানা বর্ষণে নদীর পানি বেড়ে ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে পরশুরাম উপজেলায় প্রায় ৪৫টি গ্রাম ও ফুলগাজী উপজেলায় ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার পরিবার। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।
আরো পড়ুন : ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২ আগস্ট ভারী বৃষ্টি ও উজানের অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭টি অংশে ভাঙনের ফলে লোকালয় প্লাবিত হয়েছিল। গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানি আবার বেড়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, তৃতীয় দফা বন্যায় পরশুরাম পৌরসভার বাউরখুমা, বাউরপাথর, দুবলাচাঁদ, বিলোনিয়া, অনন্তপুর, বেড়াবাড়িয়া, কোলাপাড়া এবং মির্জানগর ইউনিয়নের মির্জানগর, কালী কৃষ্ণনগর, কাশিনগর, ছয়ঘরিয়া, দক্ষিণ কাউতলী, চম্পক নগর, পূর্ব সাহেব নগর, জঙ্গলঘোনা ও গদানগর গ্রাম, চিথলিয়া ইউনিয়নের চন্দনা, পালপাড়া, দক্ষিণ শালধর, উত্তর শালধর, কিসমত শালধর, মালীপাথর, পাগলীরকুল, কুন্ডেরপাড়, রাজষপুর, জঙ্গলঘোনা, পশ্চিম অলকা, পূর্ব অলকা, নোয়াপুর, ধনীকুণ্ডা, চিথলিয়া, রামপুর, দুর্গাপুর গ্রাম, বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের সাতকুচিয়া, চারিগ্রাম, টেটেশ্বর, বাঘমারা, জমিয়ারগাঁও, কহুয়া, তালবাড়ীয়া গ্রামসহ ৪৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইউএনও আরও বলেন, তার উপজেলায় প্রায় ৯ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৫০ টন চাল মজুদ আছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া জানান, ফুলগাজী ইউনিয়নের নিলক্ষী, গাবতলা, মনতলা, গোসাইপুর, শ্রীপুর, বাসুরা, দেড়পারা, উত্তর দৌলতপুর, মুন্সিরহাট ইউনিয়নের বদরপুর, মান্দারপুর, করইয়া, কালিকাপুর, কামাল্লা, পৈথারা, জাম্মুরা, ফকিরের খিল, কমুয়া, বালুয়া, নোয়াপুর, চাঁনপুর, দক্ষিণ তাড়ালিয়া, দক্ষিণ শ্রীপুর, কুতুবপুর এবং আমজাদহাট ইউনিয়নের তালবাড়িয়া, উত্তরধর্মপুর, দক্ষিণ ধর্মপুর, মনিপুর, ইসলামিয়া বাজার, বসন্তপুর, তারাকুচাসহ ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ইউএনও আরও বলেন, তার উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফুলগাজী উপজেলায় ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১৮ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের ১লা জুলাই প্রথম দফা ও ২রা আগস্ট দ্বিতীয় দফা মুহুরী-কুহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙে পানি ঢুকে দুই উপজেলার শত শত গ্রাম প্লাবিত হয়। বর্ষা অব্যাহত থাকায় আগের ভাঙন স্থানগুলো মেরামত না হওয়ার ফলে গত দুই-তিন দিনের অতিবৃষ্টিতেই ফের গ্রামসমূহ প্লাবিত হয়।