×

রাজধানী

নগরযন্ত্রণা

সড়কে শৃঙ্খলা নেই ৭ কারণে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সড়কে শৃঙ্খলা নেই ৭ কারণে

সড়কে শৃঙ্খলা নেই। ছবি: সংগৃহীত

   

রাজধানীতে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নানারকম উদ্যোগ নেয়া হলেও বাস্তবে কোনো পরিবর্তন ঘটছে না বছরের পর বছরেও। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করলেও তাদেরও সীমাবদ্ধতার শেষ নেই। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা দুই সিটি করপোরেশনেরও রয়েছে বিভিন্ন অজুহাত। সেই সঙ্গে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবে কোনো উদ্যোগই আলোর মুখ দেখছে না। এতে একদিকে যেমন সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে; অপরদিকে সড়কে বিশৃঙ্খলা বেড়েই চলেছে। এসব থেকে উত্তরণের উদ্দেশ্যে ১৫ দিনব্যাপী ট্রাফিকপক্ষ চললেও সেভাবে দৃশ্যমান কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। আগেও বিভিন্ন সময় ট্রাফিক সপ্তাহ ও পক্ষ করা হলেও সেগুলোও তেমনভাবে সফলতার মুখ দেখেনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন- মোটা দাগে রাজধানীর সড়কে বিশৃঙ্খলার পেছনে যে কারণগুলো দেখা যায়; সেগুলো হচ্ছে- ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা না থাকা, ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে আইন মানানোর ব্যবস্থা না থাকা, অবৈধ ও লক্কড়ঝক্কড় যানবাহনের দৌরাত্ম্য, ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়া, সড়কের খানাখন্দ, অবৈধ পার্কিং ও যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো। এই সমস্যাগুলো সমাধানে সবার আগে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং পরিকল্পিত উন্নয়ন সড়কে শৃঙ্খলা ফিরতে সহায়তা করবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান ভোরের কাগজকে বলেন, একই শহরে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সড়কে সুশৃঙ্খল চিত্র, অন্য এলাকাগুলোতে ভিন্ন চিত্র দেখতে পাই আমরা। এর প্রধান কারণ হচ্ছে- অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় একটি মহল সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যে কাজগুলো করা উচিত; সেগুলো করছে না। অতীতে দেখা গেছে- যখনই যে রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, তারাও এই কাজগুলো করেনি। কারণ তাদের নেতাকর্মীরাই সড়ক থেকে চাঁদাবাজির মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে। যেহেতু ওই নেতারা প্রভাবশালী, তারা বিভিন্নভাবে পুলিশকে ম্যানেজ করে ফেলত। এজন্য সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবার আগে প্রয়োজন। এরপর রাজউক ও সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। সড়কের যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজে রোড প্ল্যানার ও ট্রান্সপোর্ট এক্সপার্টদের যুক্ত করতে হবে।

আরো পড়ুন: মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কাউকে শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানো হবে না: সেনাপ্রধান

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ ভোরের কাগজকে বলেন, এই মুহূর্তে রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে গণপরিবহনের লেন করা ও বাসস্টপ ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা খুবই প্রয়োজন। এর সঙ্গে প্রধান সড়কগুলোতে রিকশা নিষিদ্ধ করতে হবে। গণপরিবহনের চালকদের বেতন কাঠামোর আওতায় আনতে হবে। বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় আনতে হবে সব বাস কোম্পানিকে। তাহলে সড়কে চালকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা থাকবে না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, রাজধানীর ট্রাফিক অব্যস্থাপনার মূলে মানুষের অসচেনতাই বেশি দায়ী। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়েছে। তবে মানুষ একটু সচেতন হলে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে। বিশেষকরে পথচারীরা যত্রতত্র রাস্তা পার হওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, অনেকে ইউটার্ন না নিয়ে উল্টোপথে যেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, ফুটওভারব্রিজগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় থাকছে। এসব বিষয়গুলোতে কীভাবে উন্নতি ঘটানো যায়, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আরো ইউলুপ, আন্ডারপাস ও ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব স্টেকহোল্ডার রয়েছে তাদের মধ্যে কীভাবে সমন্বয় ঘটানো যায়, সেটির উদ্যোগ নিতে প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), দুই সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকো, ডিপিডিসি, ডেসা, বিটিসিএল, বিআরটিএসহ আরো কয়েকটি স্টেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই, যে কারণে যখন-তখন যে কোনো রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে। নতুন ভবন নির্মাণের সময় সড়কের পাশে ইট-বালু-সিমেন্ট রাখা হচ্ছে। আবার ভবন ভাঙার সময়ও সড়কের জায়গা ব্যবহার করা হচ্ছে। অপরদিকে বছরের পর বছর ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও সেগুলো সংস্কার করা হচ্ছে না। ফুটপাতগুলো দখল হয়ে যাওয়া ও অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে প্রধান সড়কে চাপ বাড়ছে। এই অব্যবস্থাপনাগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিলে ট্রাফিক সামলানো পুলিশের জন্য সহজ হবে।

বুয়েটের এক গবেষণায় জানা যায়, ঢাকার যানজটের কারণে প্রতিদিন গড়ে ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। প্রতি কর্মঘণ্টার মূল্য ৫০ টাকা ধরে ৩৬৫ দিন বা বছরে নষ্ট হচ্ছে ১৪ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। যানজটের কারণে বছরে ১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২০ হাজার ১৬০ কোটি টাকার বাড়তি তেল আমদানি করতে হয়। অন্যদিকে কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার কারণে যদি ২০ শতাংশ কর্মদক্ষতা কম হয় এবং এর জন্য দিনে ৩০ কোটি টাকার কাজ কম সম্পাদন হয়, তাহলে বছরে ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার কম কার্য সম্পাদিত হচ্ছে। এই তিনটি ক্ষতিকে এক করলে বছরে ৪৬ হাজার ৭৫ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে।

আরো পড়ুন: বিপ্লব ফুরিয়ে যায়নি, সাগর-রুনি হত্যার বিচার হবে: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা

এদিকে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থানাগুলোর পাশাপাশি ট্রাফিক বক্সগুলোতেও তাণ্ডব চালানো হয়। পুলিশ কর্মবিরতিতে যাওয়ার পর অরক্ষিত ছিল সব সড়ক। কিছুদিন শিক্ষার্থীরা সড়ক শৃঙ্খলার কাজ করার পর দায়িত্বে ফেরে ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু এখনো তাদের কাজে গতি ফেরেনি। এ কারণে নেই সড়কে কোনো শৃঙ্খলার বালাই। যে যেভাবে পারছেন, চালাচ্ছেন যানবাহন। ব্যাটারিচালিত রিকশা উঠে এসেছে প্রধান সড়কে, এমনকি চলছে ফ্লাইওভার দিয়েও। ভারী যানবাহন দিনে চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও চলছে সকাল থেকেই। সেই সঙ্গে নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক অবরোধ করছে বিভিন্ন সংগঠন বা জনগোষ্ঠী। ফলে নগরীর যানজট পরিস্থিতি আরো তীব্র আকার ধারণ করছে। আর ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলছেন, তারা এখনো আগের মতো অ্যাকশনে যেতে পারছেন না।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে নিয়ম ভাঙার চিত্র। পরিস্থিতি এমন যে অধিকাংশ পরিবহন চালক সড়ক আইন মানতে নারাজ। তারা যে যেভাবে পারছেন দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন। আর ট্রাফিক পয়েন্টগুলোর অনেক স্পটেই ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কুড়িল বিশ্বরোড সড়কে ব্যাটারিচালিত এক রিকশাচালকের কাছে জানতে চাওয়া হয় প্রধান সড়কে চলে এসেছেন, পুলিশ বাধা দেয়নি? জবাবে তিনি বলেন, কে বাধা দেবে? এটা স্বাধীন রাষ্ট্র, আমরা এখন স্বাধীন। তাই স্বাধীনভাবে গাড়ি চালাইয়া খাই। এক ট্রাকচালককে দিনের বেলা ট্রাক চালানো সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সবাই চালাচ্ছে, আমিও চালাচ্ছি। এখন কোনো বাধা নেই। রাত ১০টার পর ভারী যান চলাচলের নিয়ম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এখন নতুন বাংলাদেশ। আগের নিয়মকানুন নেই।

এদিকে সড়কে বিশৃঙ্খলার কারণে প্রতিদিনই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যানজট লেগে থাকে। গরম আর যানজটে রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হচ্ছে মানুষকে। উত্তরা, হাউস বিল্ডিং, এয়ারপোর্ট, প্রগতি সরণি, লিংক রোড, গুলশান-১, রামপুরা, হাতিরঝিল, কাকরাইল, কাকলী, বনানী, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, আসাদগেটসহ নগরীর প্রায় প্রতিটি পয়েন্টেই যানজট লেগে থাকে। যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা দায়ী করছেন, ট্রাফিক পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ও যাত্রী ওঠানামা, সঠিক লেন না মেনে গাড়ি চালানো, সড়কে মানুষের চলাচল, ফুটপাত দখল, হঠাৎ বৃষ্টির জন্য জলাবদ্ধতা, রিকশা-অটোরিকশা-মোটরসাইকেলের নিয়মহীন চলাচল, ভাঙা ও সরু রাস্তা প্রভৃতিকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App