অসাম্প্রদায়িক-ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ ফেরত চাইলেন সনাতনীরা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ০৯:২২ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
‘মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ’ গড়ার দাবি জানিয়ে ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে জয়ন্ত কুমার দেব সভাপতি এবং ড. তাপস চন্দ্র পাল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
শুক্রবার (১০ মে) রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। সম্মেলনে বক্তারা সরকার ও প্রশাসনের কাছে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের বেদখলকৃত দেবোত্তর ভূমি পুন:উদ্ধারের জোর দাবি জানান।
এরআগে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথের সভাপতিত্বে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা থেকে আগত বিপুল সংখ্যক সদস্যদের উপস্থিতিতে সম্মেলন শুরু হয়। এতে উদ্বোধক হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি আসেনি। এ কারণে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন সম্মেলন উদ্বোধন করেন।
এসময় তিনি বলেন, এই ঢাকেশ্বরী মন্দির এবং পূজা উদযাপন পরিষদ আমার আত্মীয়। এখানে আমার বিয়ে হয়েছে। আমার বাবা-মায়ের শ্রাদ্ধও হয়েছে। এই মন্দির এবং সংগঠনের জন্য অনেক কিছু করবেন বলেও জানান তিনি।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা সেবা চালু করা উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ যদি এটা চালু করে তাহলে আমি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে সহযোগিতা করবো।
রে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক জয়ন্ত কুমার দেব অনুষ্ঠানে ব্যাপক সংখ্যায় সনাতনী সম্প্রদায়ের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, আপনার শক্ত থাকবেন। বাংলাদেশের কোনো শক্তি নেই আপনাদের বাদ দিয়ে কোনো কিছু করার। তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বেহাত হওয়া জমি উদ্ধারে কঠোর আন্দোলনের কথাও জানান।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, বর্তমান সরকারে সনাতনী সম্প্রদায়ের ৪জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। তিনি মাত্রাতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচতে দেবালয়ের ফাঁকা জায়গায় গাছ রোপনের পরামর্শ দিয়েছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিম সনাতনীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের যখন যা দরকার হবে আমাকে বলবেন। আমি সবসময় আপনাদের পাশে থাকব।
সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ বলেন, আমরা যারা দলীয় মনোনয়নে সংসদ সদস্য হয়েছিলাম তারা চাইলেই দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সনাতনীদের নিয়ে কথা বলতে পারতাম না। আমাদের কাছে আপনাদের অনেক প্রত্যাশা থাকলেও এই সিদ্ধান্তের কারণে কথা বলতে না পারার বাস্তবতা বুঝতে হবে। তবে প্রকাশ্যে কথা বলতে না পারলেও যখন যেটুকু পেরেছি তখনই সনাতনীদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে আমরা ফিরে যেতে চাই। কিন্তু মুক্তবুদ্ধির চর্চা যেসব এলাকা আছে সেখানে গিয়ে দেখেন কিভাবে সবার আগে পোশাকের পরিবর্তন হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে কেমন আছেন প্রশ্নের উত্তরে আগে বলা হত-ভালো আছি। এখন তা পাল্টে গেছে। তিনি বলেন, ধর্মান্তরকরণে রাষ্ট্রও মদদ দিচ্ছে। ধর্মান্তরকরণ নিয়ে আমরা আতঙ্কে আছি। এজন্য বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে নিজেরাই নিজেদেরকে রক্ষা করতে হবে। সবমিলিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ফেরত চাই।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দ্বীপেন্দ্র নাথ চ্যাটার্জি বলেন, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ২০ বিঘা জমির মধ্যে মাত্র ৮ বিঘা ফেরত এসেছে। তাও প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহে। আমাদের আরো ১২ বিঘা জমি কোথায় প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ১৯৫২ সাল থেকে ঢাকেশ্বরীর সম্পত্তি বেহাত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রায় সাড়ে ৮শ বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠান। তবু এই প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ফেরত পেতে মামলা করতে হচ্ছে। কার কাছে আমরা মামলা করবো, সরকার কোথায়? এসব বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বসেছিলাম। ২০১৯/২০ সালে সম্পত্তি ফেরতের বিষয়ে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ৫ বছর পার হলেও সেই প্রতিশ্রুতির দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। শুধু আইন মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রাণতোষ আচার্য শিবু বলেন, দিনের পর দিন আমরা আমাদের দাবি বলেই যাচ্ছি। এর বিনিময়ে আমরা শুধু প্রতিশ্রুতি পাই। কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক বাসুদেব ধর বলেন, মন্দিরে অনেক ভবন হয়েছে। তবু আমরা কী ভালো আছি। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে এসে আমাদের সুরক্ষা আইন, দেবালয় রক্ষা করার আইন করার কথা ভাবতে হচ্ছে। আমার ভেবেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের সময় এক নদী রক্তে সব ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে গেছে। কিন্তু ৫৩ বছর পরে এসে দেখি সবই রয়ে গেছে। একারণে আমরা ভালো নেই। ভালো না থাকার কথাটাও আমরা সাহস করে বলতে পারছি না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
এদিকে সংগঠনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটিতে সহ-সভাপতি এ্যাড. তাপস কুমার পাল, বাবুল দেবনাথ, নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, বীণা রানী সাহা, নারায়ণ সাহা মনি, এ্যাড. শ্যামল কুমার রায়, গোপাল দেবনাথ, যুগ্ম-সম্পাদক শুভাশিষ বিশ্বাস সাধন, ধ্রুব কুমার লস্কর, এ্যাড. কিশোর কুমার বসু রায় চৌধুরী পিন্টু, কোষাধ্যক্ষ তাপস কুমার কুণ্ডু, সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর হালদার, প্রচার সম্পাদক গিরিধারী সাহা, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মতিলাল রায়কে নির্বাচিত করে করে আগামী দুই বছরের জন্য ৯১ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়।