- পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছরেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় আক্ষেপ
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন করে পার্বত্য সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে পাঁচ দফা সহ সমতলের আদিবাসীদের জন্য দুইটি পৃথক দাবিতে গণমিছিল ও সংহতি সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনে শামিল ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলো।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বিকেল পাঁচটায় রাজধানী শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে 'পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সম্মিলিত বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলুন' প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শাহবাগ কাঁটাবন প্রদক্ষিণ করে টিএসসিতে এসে শেষ হয়।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি দীপক শীলের সঞ্চালনা ও যুব মৈত্রীর সভাপতি তৌহিদুর রহমান তৌহিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন-পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অং সোয়ে সিং মারমা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ,আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি চিরান, জাতীয় যুব জোটের সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন, জাতীয় আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্র নাথ সিং, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) এর সভাপতি বাশিদুল হক ননী, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী সভাপতি অতুলন দাস, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) সভাপতি গৌতম চন্দ্র শীল সহ অনেকে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্য এলাকায় সমস্যা আরো বেড়েছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে এসেও আমাদের অস্তিত্বের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। দেশে যেভাবে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে, এটা প্রতিরোধ করতে আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এখনও পাহাড়ে কেন অস্ত্রের ঝনঝনানি, পাহাড়ে কেন আজো ভূমি লুণ্ঠন? আজো এই প্রশ্নগুলো আমাদের করতে হয়! চুক্তি বাস্তবায়িত না হলে পাহাড়ের অবস্থা আরো খারাপ হবে। চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বক্তারা।
এসময় তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে যে অগ্রগতি ঘটেছে তা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ অনেকখানি বঞ্চিত। এই অঞ্চলকে সংঘাতপূর্ণ রেখে গোটা দেশের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন অসম্ভব।
সরকারের সদিচ্ছার অভাবের কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামের চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হচ্ছেনা দাবি করে সমাবেশে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম বলেন, আমরা এক দেশে দুই শাসন দেখতে পাচ্ছি। পুরো দেশে এক শাসনব্যাবস্থা আর পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক শাসন ব্যাবস্থা। এই দ্বৈত শাসনব্যবস্থা আমরা চাইনা, পাহাড় থেকে সেনাবাহিনীকে সরিয়ে দেওয়া হোক।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ যুব মৈত্রীর সভাপতি তৌহিদুর রহমান তৌহিদ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির এই আন্দোলন শুধু আদিবাসীদের আন্দোলন না, এটি আদিবাসী ও বাঙ্গালীদের আন্দোলন, সমস্ত দেশবাসীর আন্দোলন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নে সমাবেশ থেকে সরকারের কাছে ৫ দফা এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য ২টি পৃথক দাবী উত্থাপন করা হয়।
পাঁচটি দাবি হলো-পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সময়সূচি ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন করা; পাহাড়ে সামরিক কর্তৃত্ব ও পরোক্ষ সামরিক শাসনের স্থায়ী অবসান ঘটানো; আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক করা ও স্থানীয় শাসন নিশ্চিত করতে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক এসব পরিষদের যথাযথ ক্ষমতা প্রদান; পার্বত্য ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকরের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের পুনর্বাসন করে তাঁদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা এবং দেশের মূল স্রোতধারার অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা।
এছাড়াও সমতলের আদিবাসীদের জন্য পেশকৃত দুই দফা দাবি হলো- ইউনিয়ন পরিষদসহ সকল স্তরের স্থানীয় সরকারে সমতলের আদিবাসীদের জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ এবং আদিবাসী জনগণের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা; সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা।