অসহযোগ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে যা বললেন মির্জা ফখরুল

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৪৫ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
কোটা বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ‘সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া’র আবারো আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রবিবার (৪ আগস্ট) সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশে আজ এক গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছে। আজকে সারা ঢাকা শহর জনগণের শহরে পরিণত হয়েছে, গোটা দেশ জনতার সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। বিএনপি জাতির এই চরম ক্রান্তি লগ্নে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে গণতন্ত্র প্রিয় আপামর জনসাধারণ এবং বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রাজপথে নেমে এসে ছাত্র-জনতার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গণহত্যাকারী স্বৈরাচারি সরকারের পতন তরান্বিত করতে অসহযোগ আন্দোলন সফল করার আহ্বান জানাচ্ছে।'
‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সাঈদ, মুগ্ধসহ শত নিরীহ ছাত্র শিশু ও জনতার রক্তে অবৈধ শাসকগোষ্ঠির হাত রঞ্জিত হয়েছে। জনগণ এই ভয়াবহ গণহত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। দলমত, ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষ ফুলে উঠেছে ক্রোধে। এখনো কি তাদের (সরকার) বোধদয় হচ্ছে না? আমি সেজন্য বলছি যে, প্রার্থনা করি, তাদের সম্মতি ফিরে আসুক, শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। আর কোনো রক্তপাত না, আর কোনো সংঘাত না দিয়ে জনগণের দাবি মেনে নিয়ে তারা সরে যাক।'
আরো পড়ুন: আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাদের অফিস-বাসায় পাল্টাপাল্টি হামলা
আরো পড়ুন: সরকার পতনের আন্দোলনে সর্বাত্মক শামিল হোন
এই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দলমত সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি, পেশাজীবী, শ্রমিক, কৃষকসহ আপামর জনসাধারণকে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বানও জানান তিনি। সরকার পদত্যাগের প্রক্রিয়া কি হবে প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই প্রক্রিয়াটা আমরা তখনই দেবো সবার সঙ্গে পরামর্শ করে বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলন যারা করছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা পরে এই বিষয়টাকে আপনাদেরকে জানাব। এখনই সেই সময়টার উত্তীর্ণ হয়েছে বলে আমরা মনে করি না।'
‘সরকারি কর্মচারীর প্রতি আহ্বান’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের শুধু সেনাবাহিনীর প্রতি নয়, দেশের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য সবার কাছে আমাদের আবেদন তারা কখনই জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। জনগণের রক্তে, ছাত্রদের রক্তে আর যেনো আমাদের রাস্তা রঞ্জিত না হয়, আমাদের সন্তানরা যেনো শহীদ না হয় সেদিকে তারা অবশ্যই তাদের দায়িত্ব দেবেন।'
‘একটা কথা মনে রাখতে হবে, যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি তারা কোনো দল বা ব্যক্তির কর্মচারি নয়। তারা অবশ্যই প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং তাদের দায়বদ্ধতা সম্পূর্ণভাবে জনগণের প্রতি। সেই বিষয়টাকে সামনে নিয়ে এ ধরনের অন্যায় নির্দেশগুলা তাদেরকে বাদ দিয়ে জনগণের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।'
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দলের অবস্থা জানান দিতে দলের স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন মির্জা ফখরুল।
সরকার পদত্যাগ না করলে কি হবে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই পরিস্থিতি কি কোনো দিন কোনো শাসক গোষ্ঠির পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব হয়েছে। আপনি বলেন, আজ থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস, পাকিস্তান আমলের যে ইতিহাস সেই ইতিহাসগুলো আপনি দেখেন… যখন জনতার আন্দোলন শুরু হয়, জনতার যখন উত্তাল সমুদ্রের সূচনা হয় তখন কারো পক্ষেই সম্ভব হয় না যে এটা ঠেকিয়ে রাখা।'
‘জনতার উত্তাল স্রোত ছড়িয়ে পড়েছে। কিছুক্ষণ আগে আমার স্ত্রী বলছেন যে, আমি কি ঘরে থাকবো? আমার মেয়েরা চলে গেছে, প্রত্যেকের মেয়েরা চলে গেছে। আমার মনে হয় আপনাদের বাসায়ও এখন আর কেউ নেই… সব বেরিয়ে গেছে। এই যে একটা উত্তাল গণঅভ্যুত্থান এই গণজারণ আমরা দেখেছি ১৯৬৯ সালে। আমি দেখেছি ’৯০ সালে, আমি দেখেছি ‘৭০ এ, ’৭১ এ। আজকে আবার তার চেয়ে অনেকে বেশি শক্তি নিয়ে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। দেখুন কয়েকজন ছাত্র যারা কিন্তু প্রফেশনাল স্টুন্ডেন্ট লীডারও নয়, যারা কোনো ছাত্র সংগঠনও করে না এরা কিন্তু সমস্ত জাতিগুলোকে জাগিয়ে তুলেছে। '
‘এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে’
‘সরকার পরিকল্পিতভাবে এই দেশকে ধবংস করে ফেলছে’ বলেও অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একে রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময় এবং এখনই তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এদেরকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে এবং তাদের চলে যেতে বাধ্য করতে হবে। এখনই সময় এটার।'
‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে গেছে’
বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দায়ী করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকের পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী। আদালতকে ব্যবহার করে তারা সবসময় অপকর্মগুলো করেছে। আবারো তারা আদালতকে ব্যবহার করে এই কোটার সমস্যাটাকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে সেখান থেকে পয়েন্ট অব নো রিটার্ণ নিয়ে যাওয়া হয়েছে।'
‘এটাই হয়। দেশে সরকার ব্যর্থ হয়ে যখন তার অর্থনীতি পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়, রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যখন থাকে না, জবাবদিহিতা থাকে না তখন তার পরিণতি এটাই হয়। আপনি যে কথাটা বলছেন, পরিণতি ওটাই এই সরকারকে এভাবে চলে যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই।'
‘পদত্যাগের বিলম্ব হলে ক্ষতি রাষ্ট্রের হবে’
বিলম্ব হলে কি হবে তাও ভবিষ্যতবানী করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তত বেশি ক্ষতি হবে দেশের জাতির, তত বেশি ক্ষতি হবে আওয়ামী লীগেরও রাজনৈতিক দল হিসেবে। আওয়ামী লীগ যে ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এটা কি আওয়ামী লীগ? আমরা যে আওয়ামী লীগকে অতীতে চিনতাম সেটা এই আওয়ামী লীগ নয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকেও ছাড়িয়ে গেছে। আপনি চিন্তা করেন লাখ লাখ মানুষের গ্যাদারিংয়ের মধ্যে তারা আজকে হামলা করছে। কত ভয়ংকর হলে এটা করতে পারে।'
চট্টগ্রামে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মীর নাসির উদ্দিন, চট্টগ্রামের সাবেক মহানগর আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, বর্তমান আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও ঢাকায় দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সস্পাদক রুমিন ফারহানা, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ গত রাতে সন্ত্রাস চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আমরা বলতে চাই, এসব করে তারা সরকারের পতন ঠেকাতে পারবে না। ছাত্র-জনতার ঐক্যের মধ্য দিয়ে যে চূড়ান্ত আন্দোলন সেই আন্দোলন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত, তাকে স্তব্ধ করার ক্ষমতা কারো নেই।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।