সৈয়দ আশরাফের উদাসীনতা, ম্যাজিকের মতো সম্পদ বৃদ্ধি নানকের

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৭ পিএম

সৈয়দ আশরাফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক। ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু নার্গিসের সম্পদ ২০১৪ সালে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮ সালে এমপি হওয়ার পর থেকে তাদের সম্পদের পরিমাণ ১৫ বছরে প্রায় ৩০ গুণ বেড়েছে। এ নিয়ে নানক ও তার স্ত্রীর আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ তাদের দৃশ্যমান আয়ের সঙ্গে এই সম্পদ বৃদ্ধির কোনো মিল পাওয়া যায়নি।
২০০৮ সালে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী, নানকের স্ত্রীর সম্পদ ছিল ২৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৪ টাকা। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ কোটি ৭২ লাখ ৯৪ হাজার ১৭৯ টাকায়। একই সময়ে নানকের সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৪৫ লাখ ২১ হাজার ৪০২ টাকা। অথচ ২০০৮ সালে নানক দেখিয়েছিলেন তার সম্পদের পরিমাণ ৩৬ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯৭ টাকা এবং বাৎসরিক আয় মাত্র ২ লাখ টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে এই দম্পতির সম্পদ বেড়ে দাঁড়ায় ৬ কোটি ১৮ লাখ ১৫ হাজার ৫৮১ টাকায়।
তাদের সম্পদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসা ও মৎস্য খামারের আয়ের কথা বলা হলেও, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর তদন্তে উঠে এসেছে অন্য চিত্র। সূত্র জানায়, নানক ও তার স্ত্রীর আয়ের সঙ্গে সম্পদের কোনো সঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। নানকের স্ত্রী একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করলেও তার বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮৬ টাকা।
এমপি হওয়ার পর নানক স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান, যেখানে তৎকালীন মন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আশরাফের দায়িত্বে অবহেলার সুযোগে নানক কার্যত পুরো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে নানকের বিরুদ্ধে। টেন্ডার থেকে বরাদ্দ—সবকিছুতেই পার্সেন্টেজ নেয়ার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
২০২৪ সালে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর দাখিল করা হলফনামায় নানক দেখান যে তার সম্পদ বেড়ে হয়েছে ১২ কোটি ২৫ লাখ ৮৫ হাজার ৩২৭ টাকা, আর স্ত্রীর সম্পদ ৬ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার ৬২৪ টাকা। ২০০৮ সালে তাদের সম্মিলিত সম্পদ ছিল ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৫১ টাকা। এই হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, ১৫ বছরে তাদের সম্পদ বেড়েছে ১৮ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার ৩০০ টাকা।
হলফনামায় জমি ও স্থাবর সম্পদের তথ্য নিয়েও নানা ঘাপলার অভিযোগ উঠেছে। ২০০৮ সালে নানক যে সম্পদের কথা উল্লেখ করেছিলেন, ২০২৪ সালে এসে তার সঙ্গে কোনো মিল পাওয়া যায়নি। এখন তার নামে ঢাকার উত্তরায় ৬ তলা ভবন, মোহাম্মদপুরে ৮ তলা ভবন, কক্সবাজারে জমি এবং বরিশালে দুটি বাড়িসহ বিপুল সম্পদের কথা হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তবে এগুলোর বেশির ভাগই ছিল আগে গোপন।
এছাড়া ঢাকার বাইরে বরিশালের নবগ্রাম রোডে নানকের পরিবারের বিশাল ভূ-সম্পত্তি এবং প্রাসাদসম ডুপ্লেক্স রয়েছে, যা তার আয়কর রিটার্নে উল্লেখ নেই। বরিশালে গ্লোবাল ভিলেজ নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা এবং কুয়াকাটা ও কক্সবাজারে জমির মালিকানার তথ্যও গোপন করেছেন নানক। ঢাকার মোহাম্মদপুর ও উত্তরার দুটি ভবনের মূল্যায়নেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
আরো পড়ুন: সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ভয়ংকর তথ্য প্রকাশ্যে
এই বিশাল সম্পদের উৎস সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট জবাব না মিললেও, তদন্ত সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে।