থাইলেন্ডে বাড়ছে চিকিৎসাসেবা, যেমন হবে সুযোগ-সুবিধা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৫ পিএম

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় চিকিৎসা পর্যটন গন্তব্য হচ্ছে থাইল্যান্ড - ইন্টারনেট
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে থাইল্যান্ড চিকিৎসা পর্যটনের ক্ষেত্রে অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। দেশের চিকিৎসা পর্যটন শিল্প ক্রমেই বাড়ছে, এবং ২০০০ সালের পর থেকে থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিতে আসা পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি আন্তর্জাতিক চিকিৎসা পর্যটন খাতে অনেকটা শীর্ষে উঠে এসেছে।
থাইল্যান্ডে চিকিৎসা পর্যটনের জনপ্রিয়তার প্রধান তিনটি কারণ হলো— কম খরচে মানসম্পন্ন চিকিৎসা, উন্নতমানের বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র এবং উন্নত পর্যটন শিল্প।
২০২৩ সালের মেডিকেল ট্যুরিজম ইনডেক্স অনুযায়ী, সারা বিশ্বের প্রায় ২০ লাখ মেডিকেল ট্যুরিস্ট গত বছর থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন, ফলে থাইল্যান্ড বিশ্বব্যাপী ৪র্থ স্থান অর্জন করেছে। সাশ্রয়ী চিকিৎসা পদ্ধতি এবং দক্ষ চিকিৎসকদের সেবা প্রদানের কারণে থাইল্যান্ড বিভিন্ন দেশের রোগীদের কাছে এক অগ্রাধিকার গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
মেডিকেল ট্যুরিজম কী?
মেডিকেল ট্যুরিজম হল, চিকিৎসার জন্য অন্য কোনও দেশে ভ্রমণ করা। অনেকেই চিকিৎসা নিতে বিদেশে যান, যেখানে কম খরচে উচ্চমানের সেবা, অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষার কম সময় এবং চিকিৎসার সঙ্গে এক ধরনের অবসর বা বিশ্রাম পাওয়া সম্ভব।
জনপ্রিয় চিকিৎসা পর্যটন গন্তব্যগুলো সাধারণত উচ্চমানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা, দক্ষ কর্মী এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। এছাড়াও, রোগীদের যাত্রা সুবিধাজনক ও আরামদায়ক করতে বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হয়।
থাইল্যান্ডে প্রায় এক হাজার হাসপাতাল রয়েছে, যার মধ্যে ৪৭০টিরও বেশি বেসরকারি ক্লিনিক। দেশটিতে এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি হাসপাতালও রয়েছে। থাইল্যান্ডের বিখ্যাত বামরুনগ্রাদ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালের মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে থাই মেডিকেল ট্যুরিজমের প্রবৃদ্ধি হবে অন্তত ৪৩ শতাংশ এবং ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে।
থাইল্যান্ডে মেডিকেল ট্যুরিজমের সুবিধা
থাইল্যান্ডে চিকিৎসার খরচ অনেক কম। পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় চিকিৎসা খরচ ২০-৫০ শতাংশ কম হওয়ায়, চিকিৎসা পর্যটকরা এখানে আসার পাশাপাশি পর্যটনের খরচেও সাশ্রয়ী হতে পারেন।
থাইল্যান্ডের বেসরকারি খাতও ক্রমবর্ধমান চিকিৎসা অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। এসব হাসপাতাল বিশ্বমানের এবং থাইল্যান্ডের চিকিৎসকরা প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ বা উভয় স্থান থেকেই প্রশিক্ষণ ও সনদপত্র লাভ করেছেন।
এছাড়া, থাইল্যান্ডের অত্যন্ত উন্নত পর্যটন অবকাঠামো এবং মনোমুগ্ধকর সৈকত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেশটিকে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অবকাশস্থল হিসেবে পরিণত করেছে। দেশটির সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং সুস্বাদু খাবার পর্যটকদের জন্য এক অতিরিক্ত আকর্ষণ।
বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে মেডিকেল ট্যুরিজম
বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার আগে কিছু বিষয় জেনে নেওয়া জরুরি। যে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে চান, তার চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে আগেই বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা উচিত।
চিকিৎসা সুবিধা এবং পরিষেবা
থাইল্যান্ডে উন্নত প্রযুক্তি এবং দক্ষ চিকিৎসকরা অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। ব্যাংকক, ফুকেট, চিয়াং মাইয়ের মতো প্রধান শহরগুলোতে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল রয়েছে, যা জটিল সার্জারি থেকে শুরু করে রুটিন চেক-আপ পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকে। ঐতিহ্যগত থাই ম্যাসেজ, সামগ্রিক চিকিৎসা এবং ভেষজ চিকিৎসার সুবিধাও পাওয়া যায়।
ভিসা এবং অন্যান্য নথিপত্র
চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যাওয়ার আগে সঠিক ভিসা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা জরুরি। বাংলাদেশে থাই দূতাবাস বা কনস্যুলেট থেকে মেডিকেল ভিসা (অ-অভিবাসী ভিসা "O") পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। এ ছাড়া চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র, অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিশ্চিতকরণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র সঙ্গে রাখতে হবে।
সঠিক হাসপাতাল নির্বাচন
থাইল্যান্ডে যাওয়ার আগে রোগের ধরন অনুযায়ী সেরা হাসপাতাল নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালের চিকিৎসা পদ্ধতি, বিশেষায়িত সেবা এবং পূর্ববর্তী রোগীদের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করা উচিত। হাসপাতালের কর্মী ইংরেজি ভাষায় সক্ষম কিনা তাও নিশ্চিত করতে হবে।
ভ্রমণ এবং আবাসন ব্যবস্থা
থাইল্যান্ডে যাওয়ার আগে আবাসনের ব্যবস্থা করা ভালো, যাতে সেখানে পৌঁছানোর পর কোনো সমস্যা না হয়। হাসপাতালের কাছাকাছি থাকার ব্যবস্থা করা চিকিৎসা-পরবর্তী সময়ে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করবে।
সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক বাস্তবতা
থাইল্যান্ডের সংস্কৃতি, শিষ্টাচার, জলবায়ু ও আবহাওয়া সম্পর্কে আগেই জানুন। থাই রীতিনীতি এবং পোশাকের নিয়মের প্রতি সম্মান জানানো উচিত।
থাইল্যান্ডে বিদেশি রোগী আসার মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর নাগরিকদের সংখ্যাই বেশি। এছাড়াও, মধ্যপ্রাচ্য, ইথিওপিয়া, ও কেনিয়া থেকেও রোগী আসেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ, চীন, মিয়ানমার এবং কম্বোডিয়া থেকেও থাইল্যান্ডে রোগীর সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।