রাজপাকসের ক্ষমতাচ্যুতির পর শ্রীলংকায় প্রথম ভোট আজ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ এএম

২০২২ সালে খেলাপি হওয়া ৪৬ বিলিয়ন বিদেশি ঋণ এখনো পরিশোধ শুরু হয়নি। ছবি : সংগৃহীত
আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নজিরবিহীন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর এই প্রথম নির্বাচন হতে যাচ্ছে দেশটিতে। স্থানীয় সময় সকাল সাতটায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। শেষ হবে বিকেল চারটায়। এর পরপরই শুরু হবে ভোট গণনা। আগামীকাল রবিবার আনুষ্ঠানিক ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নতুন আইন অনুযায়ী, একজন ভোটার তিন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। কোনো একজন প্রার্থী কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বা এর চেয়ে বেশি ভোট পেলে, তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। আর কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা (রান-অফ) ভোট হবে।
২০২২ সালে মন্দার কারণে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসের বাসভবনের সামনে। রাজপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। পরে বিক্রমাসিংহে ক্ষমতায় বসেন।
অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা এবং কয়েক মাসের খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের ঘাটতির অবসান ঘটাতে কৃতিত্বের দাবিদার বিক্রমাসিংহে এখন নতুনভাবে ম্যান্ডেট চাইছেন। খবর এএফপির।
বিক্রমাসিংহে চীনসহ দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতাদের সঙ্গে ২০২২ সালের সরকারের খেলাপি হওয়া শ্রীলঙ্কার ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ পুনর্গঠনে আলোচনা চালাচ্ছেন। কিন্তু তার কর বৃদ্ধি ও উদার ইউটিলিটি ভর্তুকি প্রত্যাহার করে সরকারের হিসেবের ভারসাম্য বজায় রাখার নীতি জনগণের কাছে চরমভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনগুলোতে বিক্রমাসিংহে বলেন, সেই সময়ের কথা ভাবুন, যখন সমস্ত আশা হারিয়ে গিয়েছিল। আমাদের কাছে খাবার, গ্যাস, ওষুধ ছিল না। বা কোনো প্রকার আশা ছিল না। এখন আপনাদের কাছে একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ এসেছে, আপনারা সন্ত্রাসের সময়ে ফিরে যেতে চান, নাকি অগ্রগতিতে যেতে চান। তিনি নির্বাচিত হলে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাবেন।
আরো পড়ুন : রাজাপাকসে পরিবারের নতুন কৌশল
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি এখনো দুর্বল। ২০২২ সালে খেলাপি হওয়া ৪৬ বিলিয়ন বিদেশি ঋণ এখনো পরিশোধ শুরু হয়নি।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ এই সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে বলেছে, বিক্রমাসিংহের সরকার কীভাবে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করেছে এবং পরবর্তী পরিমিত পুনরুদ্ধার করেছে- এই নির্বাচনে মূলত তা নিয়ে একটি গণভোট হবে। তবে এতে আরো বলা হয়, ভর্তুকি প্রত্যাহার এবং জনসাধারণের কাছে অন্যায্য হিসেবে বিবেচিত বিভিন্ন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় অনেক নাগরিক এ সময়ে বেশ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশ ছাড়ার পর পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই ভোটের আগে শতাধিক সমাবেশ করেন বিক্রমাসিংহে।
শক্ত অবস্থানে আছেন বিরোধী দল সঙ্গী জন বালাওয়েগার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসাও। তিনি সাবেক এক প্রেসিডেন্টের ছেলে, যিনি ১৯৯৩ সালে গৃহযুদ্ধের সময় আততায়ীর হাতে নিহত হন। সাজিথ প্রেমাদাসা এই নির্বাচনে বেশ ভালো করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
লড়াইয়ে এগিয়ে থাকা আরেক প্রার্থী হলেন ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার পার্টির নেতা অনুড়া কুমার দিসানায়েক। একসময় প্রান্তিক পর্যায়ে চলে যাওয়া মার্ক্সবাদী দলের নেতা তিনি। তবে শ্রীলঙ্কার সংকট অনুড়া কুমার দিসানায়েকের জন্য একটি সুযোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
রাজাপক্ষে পরিবার থেকে প্রার্থী হয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী নমল রাজাপক্ষে। এই পরিবার থেকে অতীতে দুজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। একজন হলেন নমলের বাবা মাহিন্দা রাজাপক্ষে আর অপরজন চাচা গোতাবায়া রাজাপক্ষে। নমল লড়ছেন শ্রীলঙ্কান পদুজন পেরামুনা (এসএলপিপি) দল থেকে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা তার আরেক চাচা বাসিল রাজাপক্ষে।
পিপলস স্ট্রাগল অ্যালায়েন্স থেকে লড়ছেন ৪০ বছর বয়সী নুয়ান বোপেজ। গোতাবায়া-বিরোধী গণবিক্ষোভে অংশ নেয়া ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন তিনি। নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতিবিরোধী কড়া অবস্থান ঘোষণা করেছেন তিনি।