মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির নেপথ্য, কী বার্তা দিলো আমাদের?

অনামিকা রায়
প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৬ পিএম
সবচেয়ে যে ছোট কাপড়গুলি, সেইগুলি কেউ দেয় না মেলে ছাদে। যে শয্যাটি সবার চেয়ে ছোট, সেটি আজ শূন্য পড়ে কাঁদে। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই চিরন্তন পঙক্তিগুলো আবার বেজে উঠল রাজধানীর উত্তরার আকাশে, যেখানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে পড়ল। সেইসঙ্গে কত স্বপ্ন, কত আশা, কত অনিশ্চিত উত্তরণ—সবই মুহূর্তের মধ্যে ধুলোয় মিশে গেল।
২১ জুলাই, দিনটি মেঘে ঢাকা, বিবর্ণ হলেও কারও মনে ছিল না এমন শোকের আশঙ্কা। কিন্তু মেঘে ঢাকা বিবর্ণ দিনটাতেই ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ছুটে গিয়ে বিধ্বস্ত হলো উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটা ভবনে। বিধ্বস্ত বিমানটা যেন পুরো দেশটাকেই বীভৎসতার লাল রঙে রাঙিয়ে দিয়ে গেল। ভয়ংকর আগুনে পুড়ে ছাই করে দিলো কত স্বপ্ন, কত মায়ের বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখা যত্নের ধন।
সর্বশেষ খবর বলছে, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ জনে। এর মধ্যে ২৫ জনই শিশু। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এখনও ৭৮ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে অন্তত পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের অনেকেরই শরীরের বড় অংশ দগ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
কাঁধে স্কুলব্যাগ নিয়ে যারা সকালে ইউনিফর্ম পরে বের হয়েছিল, তারা আর ফিরবে না! অনেকে ফিরবে, কিন্তু অঙ্গার হওয়া হাত-পা নিয়ে। উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, বার্ন ইউনিট, সিএমএইচ—সবখানেই মায়ের বুক ফাটা কান্না। সেলিম জাহিদ খুঁজে ফিরছেন ছেলে সায়েরকে, ইয়াসমিন আক্তার মেয়ের পুড়ে যাওয়া মুখের পাশে বসে শুনছেন, ‘মা, আমার সব জ্বলে।’
এক মায়ের কথা ভেসে আসে, ‘বড় ছেলেটাকে পেয়েছি, ছোটটাকে খুঁজে পাই না।’ আরেক বাবা ছুটছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেকটিতে। কণ্ঠে তার হাহাকার ‘আমার বাচ্চা নাই... আগুনে পুড়ে গেছে!’ কী অদ্ভুত অমোঘ সময়!
একগুচ্ছ ছিন্নমুকুলের শোকে আজ বাংলাদেশ কাঁদছে। পরিবার হারাল সন্তান, মায়ের কোল হলো খালি, বন্ধুরা হারাল প্রাণের সঙ্গী। আর কেউ কারও প্রতি অভিযোগ তুলছে না, শুধু নীরব কান্না বইছে চারপাশে। রাষ্ট্রীয় শোকবার্তা, প্রধান উপদেষ্টার সমবেদনা- সব মিলিয়ে আজ শোকগ্রস্ত পুরো দেশ। কিন্তু এই শোক শুধু আনুষ্ঠানিক নয়, এই শোকে বুক ভেঙে আসে, যারা গেছে, তারা আর ফিরবে না কোনোদিন। আর যারা আছে তারা আজীবন বইবে ওই ভয়ংকর স্মৃতি।
প্রশ্ন এখন একটাই, কতটা নিরাপদ এই যুদ্ধবিমান, কতটা সুরক্ষিত আমাদের আকাশপথ? বারবার কেন একই মডেলের বিমান ভেঙে পড়ছে? এর উত্তর অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে শোকের স্রোত কাটিয়ে উঠে, কারণ এই আকাশ নিরাপদ না হলে আর কোনো স্বপ্ন ডানা মেলতে পারবে না।