শামীম আহমদ’র গুচ্ছ কবিতা

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বজ্রের চাকুর মতো দৃষ্টি
মানুষ নিরেট স্বার্থপর হলে
দানবেরা পেয়ে গেছে বর!
রক্তের ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে ওরা পৌঁছে যায়
হৃদপিণ্ডের কাছাকাছি,আরো একটু এগোলেই
জীবনশিরায় দেবে টান।
আমার ডানে বামে অসংখ্য সর্পিল চোরাস্রোত
স্রোতের গতির সাথে তাল দেয় সফেদ হাঙর
আজন্ম জলজ, ক্যামোফলাজ, ওরা দুর্দান্ত ট্রান্সপারেন্স!
রূপকের এই দেশে আমি বড্ড সন্দিহান -
আলখাল্লায়, বজ্রের চাকুর মতো চিকচিক করে দৃষ্টির ফলা
কখন যে আঁচড়ে পড়ে মৃত্যুর সওদা নিয়ে কে জানে।
রক্তাক্ত সূর্যাস্ত
একটি রক্তাক্ত সূর্যাস্তে ডুকরে পড়েছিল
আঁধারের বিবমিষা,
ভাসছে স্বপ্ন, বিমূর্ত সময়ের বমনেচ্ছাতে!
মনে হয় যেন দৈব দানব এক
সতেরো কোটি মস্তকে গেঁথে দিয়েছে
অলিক মোহের পেরেক!
সবাই-সবই বোঝে, অথচ না’বুঝার গøানি নিয়ে বোবা
তাদের কথাগুলো আটকে আছে দাঁতের ট্রাফিক জ্যামে ...
আমি দূর থেকে দেখি
চৌত্রিশ কোটি চোখ আজ ব্যস্ত! পেরেকের খোঁজে
দিবাস্বপ্নে তন্দ্রা বিধুর, কাঁপছে মোহগ্রস্ত সব চোখের পাতা।
স্তবকেই স্থির
প্রথম স্তবকেই দাঁড়িয়ে আছি স্থির
মেঘের জরায়ু ফেটে ঝরছে বৃষ্টির জল
ডুমরু ডুমরু তালে, স্বর্গের দরজা খুলে।
এ জলে ভীষণ তোড়! তবু সবাই জলমুখী;
জল-সেলফির ঢল,
মোবাইলের স্ক্রিন চূর্ণ করে
সেলফির বেলা ডুবে যায়
উজান ভাটি একাকার নির্বিকল্প-সমাধি জলে!
ভেসে যায় শহর থেকে মফস্বল,
সাথে বৃক্ষ, দুধে উলুন ভরা গাই
পুকুরের লালিত মৎস্যকুল।
তৃণের মতো ভেসে আসা গাড়ির বহর দেখে-
মনে হয় যেন জলের উপরে ট্রাফিক জ্যাম!
আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি ট্রাফিক জ্যামে
প্রাণনাশের আশঙ্কা-
তাই দ্বিতীয় স্তবকে আর, যাওয়া হলনা আমার।
রিপুর মুদ্রা
উঁকি দিলে রিপুর মুদ্রা
রতিপুষ্প রাতে
কে যায় আর অমরাবতীতে?
গৃধœু দৃষ্টি যার
সে কী সাধু? কবেকার,
সুবর্ণ জ্যোৎস্নায়
সব দেখি ভেসে যায়,
কে সাধু কে শয়তান ত্রিবেণীর ঘাটে?
পাথর শিশু
এক পাথর শিশু।
রাত্রির চরে, থাকে পড়ে, সে অন্ধকারে একা
সে আমার কান্নার স্মৃতি...
শতাব্দী ধরে, তপস্যা করে
জমে জমে হয়েছে আজ প্রাগৈতিহাসিক ফসিল।
সোনায় মোড়ানো ব্যথা, তুমি কি তার মূল্য জানো?
ওড়িন
এসেছে ওড়িন এক
মনে হলো মায়াভরা চোখ!
ডানায় তারও দেখি গাদাগাদা বিষ,
ছায়ার কবরে শুনি
প্রতিবেশীদের কানকাথা বিষমাখা শিস!
ঠোঁটে ঠোঁটে বিষ হাঁটে
স্তবকে স্তবকে হাঁটে মুমূর্ষু চিৎকার
পৃথিবীর উঠোনে রোজ হয় মানবতার
মিথ্যে- অঙ্গীকার।