জমে উঠেছে বাণিজ্যমেলা

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর উপকণ্ঠ পূর্বাচলে বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে জমে উঠেছে ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। গতকাল শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। দেশি স্টলগুলো ঘুরে দেখার পাশাপাশি ক্রেতা-দর্শনার্থীরা ভিড় করেন বিদেশি স্টলগুলোতেও। উৎসবমুখর পরিবেশে বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। মাসব্যাপী এ মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।
দেখা গেছে, গৃহস্থালিসামগ্রী ও খাবারের দোকানের প্যাকেজ অফারে বেশি ঝুঁকছেন ক্রেতারা। দাম নিয়েও নেই তেমন অভিযোগ। আর প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দর্শনার্থীর সমাগম হওয়ায় খুশি বিক্রেতারাও। মেলায় মানানসই সব গৃহস্থালি পণ্যের পাশাপাশি মিলছে বাহারি রং এবং ডিজাইনের খাট, পালঙ্ক, টেবিল-চেয়ার, আলমারিসহ হরেক রকমের আসবাবপত্র।
শনিবার দেখা যায়, মেলায় প্রায় ২০টির মতো স্টল ও প্যাভিলিয়ন গৃহস্থালি পণ্যের পসরা সাজিয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা ভিড় করছে এসব স্টলে। হাড়ি-পাতিল, ইলেকট্রিক মাল্টি কুকার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, সসপেন, ওয়াটার ফিলাটার, গ্যাসের চুলা, ননস্টিকি প্রেসার কুকার, হটপট, অ্যালুমিনিয়ামের কারুকাজ করা ট্রে, মগ, গøাস, বাটি, বড় থালা, টিফিন বক্সসহ হরেক রকম তৈজসপত্র রয়েছে এসব দোকানকে। তৈজসপত্রগুলোর মধ্যে নতুন ও ব্যতিক্রমী পণ্যের দিকে আগ্রহ বেশি দর্শক-ক্রেতাদের।
কোনাপাড়া থেকে মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, বেলা সাড়ে ১১টায় বাণিজ্যমেলায় এসেছি। তখনও লোক ভালোই ছিল। কিন্তু দুপুরের পর থেকে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। এখন বিকাল সাড়ে ৫টা বাজে, মানুষের ভিড়ে শ্বাস ফেলতে পারছি না। ভাবছি পরিবার নিয়ে মেলা থেকে বের হয়ে যাব।
মেলা উপলক্ষে ক্রেতাদের বিশেষ অফারে ৩৩ হাজার টাকার ১২ পিস পণ্য সাড়ে ২৪ হাজার টাকায় দেয়া হচ্ছে। ১২ পিসের মধ্যে রয়েছে, আধুনিক প্রযুক্তির ইটালিয়ন চুলা, ২৮ লিটারের মাইক্রোওয়েভ ওভেন, মাল্টি কুকার, কারি কুকার, রাইস
কুকার, স্যান্ডউইচ মেকার, পানির ফিল্টার, ৫টি রান্নার হাঁড়ি, ব্লেন্ডার, রুটি মেকার। এছাড়া ক্রেতাদের পছন্দমতো পণ্য পরিবর্তন করতে নিতে পারবেন।
স্টিলের তৈরি কারুকাজ করা অ্যানোডাইস ট্রে সেট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায়। প্রতিটি সেটে তিনটি করে ট্রে রয়েছে। সোনালি রঙের কারুকাজ করা টিফিন ক্যারিয়ারও মিলছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। এছাড়া বিভিন্ন আকার ও ডিজাইনের চামচ সেট ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রতিবারের মতো এবারো চাহিদা রয়েছে শোভাবর্ধক ফার্নিচার পণ্য। মেলায় মিলছে বাহারি রং এবং ডিজাইনের খাট, পালঙ্ক, টেবিল, চেয়ার, আলমারিসহ হরেক রকমের আসবাবপত্র। মেলায় ঘরে ব্যবহৃত আসবাবপত্রের পাশাপাশি অফিস সাজানোর পণ্যও মিলছে প্যাভিলিয়নগুলোয়।
এবারের বাণিজ্যমেলা উপলক্ষে ব্র্যান্ডগুলো যেমন নতুন ডিজাইন নিয়ে এসেছে, তেমনি বিশেষ অফারও দিচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন এসব ফার্নিচার দেখতে ও কিনতে বরারবই আগ্রহী থাকেন ক্রেতারা। হল ‘এ’ এর ডান দিকে রয়েছে ফার্নিচার এবং বাঁ-দিকে রয়েছে ইলেকট্রনিক্সের প্যাভিলিয়ন। এদিকে মেলা উপলক্ষে পারটেক্স, নাদিয়া, নাভানা, আকতার, রিগ্যালসহ সব প্যাভিলিয়নের ফার্নিচারে দেয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়। মেলা উপলক্ষে সব ফার্নিচারে রয়েছে অন্তত ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়।
মেলায় কিস্তিতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আসবাব কেনার সুযোগও আছে। বিনা সুদে ৩ থেকে ১৮ মাসের কিস্তিতে বিভিন্ন ধরনের আসবাবপণ্য কেনার সুযোগ দিচ্ছে প্রায় সব প্রতিষ্ঠান। তবে এজন্য ক্রেতাদের ক্রেডিট কার্ড থাকতে হবে।
বাণিজ্যমেলায় ৫০০ খাদ্যপণ্য নিয়ে কয়েকটি স্টল সাজিয়েছে প্রাণ কোম্পানি। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে জুস ও ড্রিংকস, কনফেকশনারি, স্ন্যাকস, বিস্কুট অ্যান্ড বেকারি, কুলিনারি, মসলাসহ নানা কিছু। প্রাণের স্টলগুলোর বেশির ভাগ মেলার উত্তর দিকে প্রধান ভবনের পেছনে। সেখানেই রয়েছে বিশাল প্যাভিলিয়ন। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন পণ্যে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য ছাড় দেয়া হচ্ছে। বিশেষ অফার ও মূল্যছাড়ের পাশাপাশি ৪০টির বেশি আকর্ষণীয় প্যাকেজে পণ্য কিনতে পারছেন ক্রেতারা। মেলায় প্রায় ৫০টি নতুন পণ্য প্রদর্শন করছে প্রাণ। এসব পণ্যের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ফ্লেভারড চিপস, চকলেট মিল্ক ড্রিংকস, বিস্কুট, নুডলস ও চকলেট রয়েছে।
দেশের অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এ মেলা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ব্যবসায়িক আয়োজন। উৎপাদক-রপ্তানিকারক, আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসাধারণকে এক প্ল্যাটফর্মে সমবেত করতে এবং পণ্যের প্রসার ও বাজার সম্প্রসারণে তথা জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে এ মেলার আবশ্যকতা অপরিহার্য।