মানুষের ভাবনাকে যেভাবে প্রভাবিত করছে এআই, গবেষণায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১১:২১ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সম্প্রতি বাজারে আসা জনপ্রিয় একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুলসের ওপর গবেষণা চালিয়েছে। এসব টুলসের মধ্যে রয়েছে- ওপেন এআই এবং ক্যারেকটার ডটএআই। মূলত এসব টুলসের প্রতিক্রিয়াগুলো কেমন তা গবেষণার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন, যখন কেউ আত্মহত্যার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তখন এই টুলগুলো আরও অধিক অসহযোগিতামূলক আচরণ করে। কারণ টুলগুলো বুঝতেই পারে না যে ব্যক্তিটি আত্মহত্যা পরিকল্পনা করছে।
নতুন গবেষণার সিনিয়র লেখক ও স্ট্যানফোর্ড গ্রাজুয়েশন স্কুল অব এডুকেশনের সহকারী অধ্যাপক নিকোলাস হাবার বলেন, এআই প্রযুক্তি সহযোগী, অংশীজন, আস্থাভাজন, কোচ এবং থেরাপিস্ট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো নিছক কোনো ব্যবহার নয় বরং বড় পরিসরেই হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মানুষের জীবনের সঙ্গে আরও ক্রমশ ও গভীরভাবে সম্পর্কিত হয়ে পড়ছে এবং এটি ক্যানসার থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিস্তৃত ক্ষেত্রজুড়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে একটি বিতর্কও রয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এআই হয়তো একদিন মানবজাতির শেষ ডেকে আনতে পারে।
এই প্রযুক্তি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপাশি একটি বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এটি মানুষের মানসিক অবস্থার ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলবে? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মানুষের নিয়মিত মিথস্ক্রিয়া এতটাই নতুন একটি বিষয় যে, এটি মানুষের মনোবিজ্ঞানের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে—তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যাপ্ত গবেষণা করার সময় পাননি। তবে মনোবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞদের এ নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগ রয়েছে।
এই প্রযুক্তি কীভাবে মানুষের মানসিকতার ওপর প্রভাব ফেলছে তার একটি উদ্বেগজনক উদাহরণ দেখা গেছে জনপ্রিয় কমিউনিটি নেটওয়ার্ক রেড্ডিড-এ। ৪০৪ মিডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কিছু ব্যবহারকারীকে একটি এই কেন্দ্রিক সাবরেডিট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কারণ তারা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে এআই ঈশ্বরসদৃশ বা এটি তাদের ঈশ্বরসদৃশ করে তুলছে।
ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির সামাজিক মনোবিজ্ঞানী রেগান গুরুং বলেন, ‘এআই এমন চিন্তাভাবনাকে উসকে দিতে পারে যা সঠিক নয় বা বাস্তবতার সঙ্গে মিলে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমস্যা হলো— এটি বৃহৎ ভাষা মডেলগুলো মানুষের ভাষার প্রতিচ্ছবি হিসেবে কাজ করে, কিন্তু একইসঙ্গে তা শক্তিশালী করে তোলে। এটি ব্যবহারকারীদের এমন কিছু দেয় যা প্রোগ্রামটি মনে করে পরবর্তী বাক্য হিসেবে উপযুক্ত হবে। আর এখানেই সমস্যার শুরু।’
এআই কীভাবে শেখা বা স্মৃতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন শিক্ষার্থী যদি প্রতিটি অ্যাসাইনমেন্ট লেখার জন্য এআই’র ওপর নির্ভর করে, তাহলে সে তার বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারবে না। যদি সে এটা নিজে করে তাহলে অনেক কিছুই শেখার সুযোগ আছে। এছাড়া দৈনন্দিন কাজকর্মে এআই ব্যবহারের ফলে মানুষ অনেক সময় বুঝতেই পারে না, সে ঠিক কী করছে। এভাবে সচেতনতা কমে যেতে পারে।
মনোবিজ্ঞানী আগুইলার বলেন, আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, তা হলো—মানুষ মস্তিষ্কগতভাবে অলস হয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। কারণ আপনি যদি একটি প্রশ্ন করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে উত্তর পেয়ে যান, তাহলে আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত সেই উত্তরের বিশ্লেষণ বা প্রশ্ন করা। কিন্তু অনেক সময়েই মানুষ সেই অতিরিক্ত ধাপটি গ্রহণ করে না। এর ফলে সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
অনেক মানুষ শহরের রাস্তায় চলাচলের জন্য গুগল ম্যাপ ব্যবহার করেন। অনেকেই লক্ষ্য করেছেন, এটি ব্যবহার করার ফলে তারা আগে যেখানে রাস্তাঘাটের দিকে মনোযোগ দিতেন, এখন তারা কোথায় যাচ্ছেন বা কীভাবে যেতে হয়—সে সম্পর্কে কম সচেতন হয়ে পড়েছেন। ঠিক একই ধরনের সমস্যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়মিত ব্যবহারের ক্ষেত্রেও দেখা দিতে পারে। এআই যত বেশি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রবেশ করছে, ততই আমাদের নিজস্ব সচেতনতা ও নির্ভরশীলতার ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে।