×

শিক্ষা

নিম্নমানের পাঠ্যবইয়ের মান নিয়ে দু’রকম প্রতিবেদন

Icon

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ০৪:৪৭ এএম

নিম্নমানের পাঠ্যবইয়ের মান নিয়ে দু’রকম প্রতিবেদন

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) লোগো

চলতি শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এরপরে বইগুলো দরপত্রের শর্তানুযায়ী ছাপানো হয়েছে কি না তা নিয়ে তদন্তে নামে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এরমধ্যে এনসিটিবির নির্বাচিত বিনামূল্যের ছাপানো পাঠ্যবইয়ের মান যাচাইয়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হাই-টেক সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন সার্ভিস বিডি এবং এনসিটিবি নিজে। 

এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, হাই-টেক সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন সার্ভিস বিডি’র পরিদর্শন প্রতিবেদনে ২৯টি ছাপাখানার ১৫ লাখেরও বেশি নিম্নমানের পাঠ্যবই ছাপানোর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অপরদিকে এনিসিটিবি ৬৪ জেলাজুড়ে পরিদর্শন প্রতিবেদনে আরও বেশি ছাপাখানার নাম উঠে এসেছে, যারা নিম্নমানের পাঠ্যবই ছাপিয়েছে। পাঠ্যবইয়ের মান নিয়ে দুই রকম তদন্ত প্রতিবেদন হওয়ায় এনসিটিবি এখন অভিযুক্ত ছাপাখানাগুলোর জন্য কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তা এখনো সুরাহা হয়নি। বরং এনসিটিবি ২০২৬ সালের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। 

জানতে চাইলে এনসিটিবি’র বিতরণ নিয়ন্ত্রক মো. হাফিজুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, হাই-টেক সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন সার্ভিস বিডি’র পরিদর্শন প্রতিবেদনে পাওয়া ২৯টি ছাপাখানাকে বলা হয়েছে, নিম্নমানের পাঠ্যবই পরিবর্তন করে ঠিকঠাক বই ফের ছাপিয়ে দিতে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের বই পুনরায় ছাপিয়ে দিয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো দেয়নি। যারা দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইমেডিয়েট অ্যাকশন হিসেবে তাদেরকে জরিমানা করা হবে। পরে তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করা হতে পারে। অপরদিকে এনসিটিবির পরিদর্শন প্রতিবেদনে উঠে আসা নিম্নমানের পাঠ্যবই ছাপিয়ে দেয়া ছাপাখানাগুলোর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তার সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত ফাইলটি এখনো চেয়ারম্যান স্যারের দপ্তরে রয়েছে। সেখান থেকে ফাইল আসলে বোঝা যাবে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এনসিটিবির পরিদর্শন প্রতিবেদনে ‘অ’, ‘স’, আদ্যক্ষরের ছাপাখানা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। কিন্তু হাই-টেক সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন সার্ভিস বিডি’র পরিদর্শন প্রতিবেদনে ‘অ’, ‘স’, আদ্যক্ষরের ছাপাখানার নাম নেই, কিন্তু এনসিটিবির প্রতিবেদনে সেসব ছাপাখানা প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে কিভাবে-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এত কিছু বলতে পারবো না, এনসিটিবির পরিদর্শন প্রতিবেদনে নিম্নমানের পাঠ্যবই ছাপিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এখন কী হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখন ২০২৬ সালের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ নিয়ে ব্যস্ত। 

সংশ্লিষ্টরা দরপত্রের শর্ত পূরণ না করে ১৫ লাখের বেশি নিম্নমানের পাঠ্যবই ছাপানো হয়েছে। বিনামূল্যের এসব বই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণও হয়েছে। নিম্নমানের এসব বই ছাপানোর সঙ্গে জড়িত ২৯টি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান। সারা দেশের মাঠপর্যায় থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাব টেস্টের পর হাই-টেক বিডি এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনটি ১৮ জুন বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানো ও বিতরণকারী সংস্থা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) জমা দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ১৫ লাখ বইয়ে নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে। কাগজের পুরুত্ব, আকার ও মুদ্রণের মানও ঠিক নেই; যা দরপত্রের শর্তের লঙ্ঘন।দরপত্রের শর্তে ৮০ জিএসএমের কাগজে বই ছাপাতে বলা থাকলেও এসব বই ছাপানো হয়েছে ৫৬ থেকে ৭৫ জিএসএমের কাগজে। বেশ কিছু বইয়ে মুদ্রণ, বাঁধাই, কাটিংও নিম্নমানের। তবে অভিযোগ ওঠা মুদ্রণকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিযোগ, যাচাইয়ে প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি।

এনসিটিবি বলছে, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী বই ছাপিয়ে বিতরণের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। না হলে তাদের জামানতের ২০ শতাংশ অর্থ কেটে রাখা হবে। চলতি শিক্ষাবর্ষে সারা দেশের চার কোটির মতো শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সাড়ে ৩৯ কোটির বেশি বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপানো ও বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে মাধ্যমিকে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) মোট বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ৪০ লাখ ৪১ হাজার ৬৯২টি। প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজারের মতো। দরপত্রের মাধ্যমে এসব বইয়ের কাজ পায় ১১৬ টি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান। পাঠ্যবই ছাপানো ও বিতরণে ব্যয় হয় ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। পাঠ্যবইয়ের মান নিয়ে হাই-টেক সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন সার্ভিসের নিম্নমানের ১৫ লাখ বইয়ে চলছে। 

এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবশ্য মান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তারাও বলছেন, যাচাইয়ে প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি। কারণ, যেসব প্রতিষ্ঠান বেশি পরিমাণ বই ছাপানোর কাজ পেয়েছে বা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের কারও নাম এই তালিকায় নেই। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে , ২৯টি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান চলতি শিক্ষাবর্ষে মোট ১৫ লাখ ৬ হাজার ৯৪ টি নিম্নমানের বই ছেপেছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিম্নমানের পাঠ্যবই ছেপেছে অ্যারিস্ট্রোক্রেট সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠান ২ লাখ ৪০ হাজার ৬৪২ টি বই নিম্নমানের কাগজে ছেপেছে। পাঞ্জেরি প্রিন্টার্স ১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫১ টি, লেটার অ্যান্ড কালার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৩৪ টি, মাস্টার সিমেক্স পেপার লি. ৯৫ হাজার ১৬৯টি এবং নাহার প্রিন্টার্স ৮৯ হাজার ৪০০টি বই নিম্নমানের কাগজে ছেপেছে।

অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আমাজন প্রেস ৭১ হাজার বই, টাঙ্গাইল অফসেট প্রেস ৫৭ হাজার ৮২৭টি, বর্ণমালা প্রেস ৪৪ হাজার ১৫০টি, দিগন্ত অফসেট প্রিন্টার্স ৪৪ হাজার ৬২৩টি, রেদওয়ানিয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন ৪৫ হাজার ৪২১টি, দ্য গুডলাক প্রিন্টার্স ৩০ হাজার ৬৭৬টি, মিলন প্রিন্টিং প্রেস ৩১ হাজার ৬৬৯টি, সুবর্ণা প্রিন্টার্স ২৯ হাজার ৭৫৫টি, নাইমা আর্ট প্রিন্টার্স ৩৫ হাজার পাঠ্যবই নিম্নমানের কাগজে ছেপেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানগুলো ৩০০ থেকে ২০ হাজারটি করে নিম্নমানের বই ছেপেছে। সেগুলো হলো আনন্দ প্রিন্টার্স লি., অক্সফোর্ড প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন, শাফিন প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন, আমিন আর্ট প্রেস, সরকার প্রেস, অনুপম প্রিন্টার্স লি., মেসার্স ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, দোয়ে প্রিন্টার্স, পিবিএস প্রিন্টার্স, সরকার অফসেট প্রেস, ন্যাশনাল প্রিন্টার্স, ঢাকা প্রিন্টার্স, ভাই ভাই প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন, জিতু অফসেট প্রেস ও মহানগর অফসেট প্রিন্টিং প্রেস। 


সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

বাকৃবিতে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে ৩ নারী শিক্ষার্থী বহিষ্কার

বাকৃবিতে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে ৩ নারী শিক্ষার্থী বহিষ্কার

রথযাত্রা উৎসব শুরু আজ

রথযাত্রা উৎসব শুরু আজ

৪১ বছর পর মহাকাশে দ্বিতীয় ভারতীয়, ইতিহাস গড়লেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা

৪১ বছর পর মহাকাশে দ্বিতীয় ভারতীয়, ইতিহাস গড়লেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা

বাংলাদেশের ম্যাচসহ টিভিতে যেসব খেলা দেখবেন আজ

বাংলাদেশের ম্যাচসহ টিভিতে যেসব খেলা দেখবেন আজ

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App