জুলাই অভ্যুত্থানে ৭৩১ হত্যাসহ ১৭৩০ মামলা, সুষ্ঠু তদন্তে কাজ করছে পুলিশ: আইজিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ০৬:২৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ৭৩১টি হত্যা মামলাসহ সারাদেশে মোট ১৭৩০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (৬ আগস্ট) পুলিশ সদরদপ্তর এ তথ্য দিয়েছে। বেশিরভাগ মামলায় আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা, আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আসামি করা হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থান সংক্রান্ত মামলাগুলো তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মামলাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মামলাগুলো তদন্ত করছি। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে সুষ্ঠুভাবে মামলাগুলোর তদন্ত সম্পন্ন করার কাজ চলছে। তাড়াহুড়ো করে তদন্ত শেষ করে মামলার চার্জশিট দাখিল করাটা জরুরি নয়। বরং তাড়াহুড়ো করে তদন্ত শেষ করলে তাতে ত্রুটি থাকলে অপরাধীরা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার সুযোগ পাবে।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যার ঘটনা জড়িত ছিল। সে কারণে তদন্তে সময় লাগবে। এ সম্পর্কিত প্রতিটি মামলার তদন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। তবে পুলিশ প্রধান আশা করেন, তারা আগামী বছরের আগস্টের মধ্যেই জুলাই অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মামলার তদন্ত সম্পন্ন করতে পারবেন। পুলিশ সদরদপ্তর মামলাগুলোর অগ্রগতি তদারকি করছে।
আইজিপি জানান, জুলাই অভ্যুত্থানের ১৫টি মামলার চার্জশিট এখন পর্যন্ত আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা রয়েছে পাঁচটি। শেরপুর পুলিশ তিনটি হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে। এছাড়া কুড়িগ্রাম পুলিশ ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) একটি করে চার্জশিট দাখিল করেছে। অন্যান্য ধারায় দায়ের করা ১০টি মামলার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) ও পাবনা জেলা একটি করে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ তিনটি, সিরাজগঞ্জ দুটি এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দুটি করে মামলা দায়ের করেছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদারকি করছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জুলাই অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট মামলায় আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা এবং মন্ত্রিসভার সদস্য বর্তমানে কারাগারে আছেন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান কমিটির তথ্য মতে, গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রায় ১৪০০ জন নিহত হন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলেছে, আরো প্রায় ২০ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) এখন পর্যন্ত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গুরুতর অপরাধ, বন্দুকযুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে গুমের মোট ৪৫০টি অভিযোগ পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, মামলাগুলোর মধ্যে চারটির তদন্ত প্রতিবেদন এরই মধ্যে জমা দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে একটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আরো দুজন হাই-প্রোফাইল আসামির বিরুদ্ধে। দুটি মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত ২০৯ জনকে অভিযুক্ত করে আরো ৩০টি অন্যান্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মধ্যে ৮৪ জন অভিযুক্তকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় নেয়ার ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এই নৃশংসতার মূল পরিকল্পনাকারীদের এবং দোষীদের সরাসরি বিচারের আওতায় আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অতীতের ট্রাইব্যুনালে ব্যবহৃত সাক্ষ্য-প্রমাণের মানের অনুকরণ করতে চাই না আমরা। আমরা ধ্রুব সত্যটি তুলে ধরছি, তদন্তের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা ঠিক হবে না। অভিযোগ প্রমাণের জন্য প্রসিকিউশন ১ হাজার জনেরও বেশি সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করেছে এবং ১ হাজারের বেশি ভিডিও ক্লিপসহ বিস্তৃত ডিজিটাল প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান স্থপতি হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। গত ৪ আগস্ট মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের দ্বিতীয় সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং রাষ্ট্র-নিযুক্ত আইনজীবী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।