×

বিশেষ সংখ্যা

ঝর্ণা মনি

বছরজুড়ে উন্মাতাল রাজনীতি

Icon

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বছরজুড়ে উন্মাতাল রাজনীতি
   

‘স্মার্ট’ বাংলাদেশের চমক জাগানিয়া স্বপ্ন দেখিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের রাজনীতি। ডিজিটাল বাংলাদেশ, সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ প্রত্যয় বাস্তবায়ন শেষে আওয়ামী লীগ সরকার স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে টানা চতুর্থ দফার যাত্রা শুরু করে ১০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে। এর আগে সাত জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জানুয়ারিতে বিপুল সম্ভাবনা আর জনগণের বিশাল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এলে ছয় মাসের মাথায় এসেই উন্মাতাল হয়ে ওঠে দেশের রাজনীতি। সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন একসময় পরিণত হয় শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনের দাবিতে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে পুরো বাংলাদেশের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারত চলে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা। বাংলাদেশের রাজনীতির এক মোড় ঘোরানো ঘটনা হয়ে দাঁড়ায় ৫ আগস্ট।

মূলত. গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বরাবরই রাজনীতির ময়দান বেশ সরব। আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)- এই প্রধান দুই দলের জনপ্রিয়তা এবং জনসমর্থনে ভর করে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে রাজনীতিতে পাঁচ দশকেরও বেশি সময় দেখেছে। সময়ে সময়ে একাধিক রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটলেও এই দুই দলের মতো কোনো দলই বড় স্কেলে জনসমর্থন আদায় করতে পারেনি। তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে বছর বছর এই দুই দলই রাজনীতির মাঠকে সামনে থেকে গরম রেখেছে। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধ এর ব্যতিক্রম ছিল না। ২০২৪ সালের শুরুতে (৭ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালও বছরজুড়ে উত্তাল এক সময় দেখেছে বাংলাদেশের রাজনীতি।

নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মাঝে ২২২টিতে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ, যা আওয়ামী লীগের টানা পঞ্চম নির্বাচনী জয়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বয়কট করায় এই নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল খুব কম ভোটারের উপস্থিতি। জোটের নেতারা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে আরো দুটি আসন পেয়েছেন। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন আর কল্যাণ পার্টি পেয়েছে ১টি আসন। তবে প্রথমবারের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন রেকর্ড ৬২টি আসন, যাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা। ১০ জানুয়ারি দ্বাদশ পার্লামেন্টের সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ নবনির্বাচিত ২৯৮ জন সংসদ সদস্য। ওই দিন ১০টায় পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রথমে শপথ নেন স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী। এরপর তিনি শেখ হাসিনাসহ অন্য সংসদ সদস্যদের একসঙ্গে শপথ বাক্য পাঠ করান। জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র হিসাবে বিজয়ীরাও শপথ নিয়েছেন। সংসদ নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো সংসদ নেতা হন তিনি। একাদশ সংসদের মতো এবারো মতিয়া চৌধুরীকেই সংসদের উপনেতা হিসেবে নির্বাচন করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সদস্যরা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তাল ছিল রাজনীতি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোন্দল ছিল চোখে পড়ার মতো। সংঘর্ষ, মারামারি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। বেসরকারি সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) জানিয়েছে, গত ১৫ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মাসে নির্বাচনী সহিংসতায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২ হাজার ২০০ জনের বেশি।

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতনের এক দফা : কোটাপ্রথা নিয়ে এবারের আন্দোলন ছিল শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দফা আন্দোলন। এর আগে ২০১৮ সালে আন্দোলন কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাসহ চাকরিতে সকল কোটা পদ্ধতি বাতিল করে দেয়। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৫ জুন হাইকোর্টের এক রায়ে চাকরিতে ফিরে আসে কোটা পদ্ধতি। কোটা পুনর্বহালের হাইকোর্টের রায় স্থগিতের জন্য দুই দফা আপিল বিভাগে আবেদন করেও ব্যর্থ হয় রাষ্ট্রপক্ষ। ১ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা শাহবাগে অবস্থান করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুরুতে তাদের উপর কোনো ধরনের বল প্রয়োগ করেনি। চীন সফর শেষে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ করে ছাত্ররা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলা ওই বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আহত হয় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী। এই হামলার পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামেন। তখন ছাত্রলীগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে ১৬ জুলাই প্রাণ হারান রংপুরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। ওই দিন সারাদেশে মারা যায় ৬ জন। এদিকে আন্দোলন সফল করার জন্য ৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা করে, যার মধ্যে ২৩ জন সমন্বয়ক ও ৪২ জন সহসমন্বয়ক ছিলেন। আন্দোলনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তিন আগস্টে সংগঠনটি দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক দল গঠন করে, যার মধ্যে ৪৯ জন সমন্বয়ক ও ১০৯ জন সহসমন্বয়ক ছিলেন।

৬ জুলাই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের দিনের মতোই বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, ছাত্র ধর্মঘট এবং সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের ডাক দেন। এর নাম দেয়া হয় ‘বাংলা ব্লকেড’। ৭ জুলাই বাংলা ব্লকেডে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা করা হয়। ৮ জুলাই ঢাকার ১১টি স্থানে অবরোধ, ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, তিনটি স্থানে রেলপথ অবরোধ এবং ছয়টি মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিতাড়ন করে ‘রাজনীতিমুক্ত’ ঘোষণা দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র বিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পালটাপালটি ধাওয়ার ঘটনা। ১৮ জুলাই দেশব্যাপী প্রতিরোধ, সহিংসতা, সংঘর্ষ ও গুলি করা হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারাদেশ ছিল প্রায় অচল। রাজধানী ছাড়া দেশের ৪৭টি জেলায় দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পালটাপালটি ধাওয়া, পুলিশের হামলা-গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় নিহত ও আহত হয়েছেন অনেকেই। ফলে সারা দেশে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এদিন রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৯ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা জানান, ৯ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত চলবে ‘শাটডাউন’ ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জনসাধারণ রাস্তায় নেমে পড়েন। আন্দোলন তীব্র গতি পায়। সারাদেশের মানুষ ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ডাক আসে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই কর্মসূচি ঠেকাতে রাতেই জারি করা কারফিউ। মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। ৫ আগস্ট সেই কারফিউ ভেঙ্গে রাজধানীর অলিগলিতে অবস্থান নেন ছাত্র-জনতা। তাদের মূল সড়কে উঠতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বেলা দুইটার সময় গণমাধ্যমে খবর বের হয় পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ জড়ো হন শাহবাগে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের দিকে যাত্রা করে লাখ লাখ ছাত্র-জনতা। গণভবনের পাশাপাশি জাতীয় সংসদ ভবনেও অবস্থান নেন তারা। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সব মন্ত্রী-এমপিসহ অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যান। বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার : ৮ আগস্ট শপথ নেয়ার মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। ওই দিন শপথ নেন ১৭ উপদেষ্টা। পরে আরো চারজন যুক্ত হয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আকার ধারণ করেছে ২১ জন। ১০ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হন আরো তিন জন। বর্তমানে নতুন এই সরকারে উপদেষ্টা মোট ২৪ জন, যাদের মধ্যে তিনজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক। একের পর এক রাজনৈতিক ঘটনা নাটকীয়ভাবে মোড় নেয়। মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রশাসন ও পুলিশে ব্যাপক রদবদল শুরু হয়। নতুন পুলিশ প্রধান, এর্টনি জেনারেলের পদত্যাগ, প্রধান বিচারপতিসহ ৬ বিচারপতির পদত্যাগ, নতুন বিচারপতি নিয়োগ, ১৫ আগস্টের ছুটি বাতিল, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলা, সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ গ্রেপ্তার হন অনেকেই।

প্রাণহানি ও নাশকতা : জুলাইয়ে আন্দোলনকারী, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর উত্তেজনা বেড়ে যায়। পরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা- পুলিশ, র?্যাব ও বিজিবি, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র, যুব ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সহিংস সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই সংঘর্ষের ফলে দ্ইু পক্ষেরই অসংখ্য মানুষ নিহত হয়- যার মধ্যে রয়েছে আন্দোলনকারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, দলীয় সদস্য, পথচারী ও শিশুরাও। আগস্টের শুরুর দিকে এই সহিংসতার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে, প্রাণহানির সংখ্যা দুইশ থেকে ছয়শ পর্যন্ত অনুমান করা হয় এবং আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। গত শনিবার জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল। গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকায় ৮৫৮ জন শহীদের নাম এবং আহতদের তালিকায় ১১ হাজার ৫৫১ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রাণহানির পাশাপাশি ব্যাপক নাশকতাও হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন, মেট্রোরেল, বিআরটিএ ভবন, এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মব জাস্টিস : ‘মব জাস্টিস’, অর্থাৎ এক দল লোকের জোর করে নিজের হাতে বিচার তুলে নেয়ার ঘটনা বাংলাদেশে চরম উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর বড় আকারে ‘মব জাস্টিস’ শুরু হয়। যদিও বাংলাদেশে এই আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা আগেও দেখা গেছে। তবে তা ছিল কথিত চোর-ডাকাতকে গণপিটুনি দেয়ার ঘটনা। কিন্তু এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা কর্মকর্তাদের জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা, মারপিট করে তাড়িয়ে দেয়, আদালত এলাকায় আসামিদের ওপর হামলা, কোথাও কোথাও পিটিয়ে, কুপিয়ে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু কোনো ঘটনায়ই জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা বা আইনের আওতায় আনার মতো খবর এখনো পাওয়া যায়নি। প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টাদের হুঁশিয়ারি এবং ‘মব জাস্টিস’ দুই-ই চলছে।

আলোচনায় কিংস পার্টি : বছর শেষে রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দেয় কিংস পার্টি। শেখ হাসিনা পদত্যাগের চার মাসের মধ্যে ৫ রাজনৈতিক দল ও একটি জোটের আত্মপ্রকাশ করে। এর মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়াদের নিয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা। রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনের লক্ষ্য নিয়ে ৫৫ সদস্যের জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয় গত ৯ সেপ্টেম্বর। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও এবি পার্টির সাবেক গবেষণা ও তথ্য বিষয়ক সহকারী সম্পাদক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীকে।

গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারে জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর পর এক থেকে দুই মাসের মধ্যে, ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে একটি সুন্দর রাজনৈতিক দল উপহার দেবে। তবে দলের নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।

নির্বাচনী রোডম্যাপের তাগিদ : মূলত. শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগের পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মূল আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয় জাতীয় নির্বাচন। সবার আগে বিএনপি এবং পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগ বিরোধী বাকি সব দল নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে চাপ দিতে থাকে অন্তর্বর্তী সরকারকে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় রাজনৈতিক দলগুলো। তারা চায় সুনির্দিষ্ট সময়সীমা। সব সংস্কার শেষে নির্বাচন- এমন তত্ত্বেও বিশ্বাসী নয় তারা। বরং যৌক্তিক সংস্কার শেষে ২০২৫ সালের মধ্যেই সুষ্ঠু নির্বাচন চায় রাজনৈতিক দলগুলো। ২০২৫ সালের শেষে অথবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে দেশে জাতীয় নির্বাচন হবে বলে যে যোষণা দিয়েছে সরকার, এতে হতাশা ব্যক্ত করেছে বিএনপি ও বাম রাজনৈতিক দলগুলো। তবে বিএনপি ও বাম দলগুলো দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুস্পষ্ট তারিখ চাইলেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের সঙ্গে একমত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App