সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
একটা রেলগাড়ি আর আমরা আলাদা হতে দেবে না কখনো

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
অনন্তলোকে বিরাজ করছেন ‘পথের পাঁচালী’র দুর্গা উমা দাশগুপ্ত। সিনেমায় তার প্রয়াণে কতটা কষ্ট পেয়েছিলেন তার প্রিয় ভাই অপু? শুটিংয়ে কী করতেন? কতটা সখ্য ছিল দিদি-ভাইয়ে? জানালেন অপু চরিত্রের সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অংশই রইল মেলার পাঠকদের জন্য
দিদি চলে যাওয়ার বেদনা আমাকে বারবার সইতে হয়েছে। শেষবারের মতো এবার পেলাম। ‘পথের পাঁচালী’ করার সময় দুর্গার মৃত্যু দৃশ্যের শুটিংয়েও একটা চিনচিনে ব্যথা হয়েছিল। অনেক দিন ছিল সেই ব্যথাটা। ১৯৫৫ সালে ‘বসুশ্রী’ সিনেমা হলে প্রথম স্ক্রিনিং-এ আমি হাউহাউ করে কেঁদেছিলাম। তার আগে ভালো করে বুঝতে পারিনি যন্ত্রণাটা কতদূর। কী অসহ্য যন্ত্রণা, কী করে প্রকাশ করব এখন! মৃত্যু কী জিনিস, বোধহয় ওটাই আমার প্রথম অনুভূতি। ‘পথের পাঁচালী’র শুটিং মানে সত্যজিৎ রায় তো বটেই, তার সঙ্গে উমা দাশগুপ্তও বটে। যেদিন আলাপ হলো আমাদের, সেদিন থেকেই আমি ওকে ‘দিদি’ বলে ডাকতাম। শুধু তো ডাক নয়, দিদিই জানতাম ওকে, দিদিই মানতাম। আমার কাছে ‘শুটিং’ মানে ছিল শনি আর রবিবার সকালবেলা গাড়ি করে বোড়াল যাওয়া, তারপর সারাদিন শুটিং আর দিদির সঙ্গে খুনসুটি। মনে আছে, ওখানে অনেক হনুমান ছিল, আমি সেই হনুমানের পিছনে ছুটে বেড়াতাম, দিদি খুব হাসত সেই দেখে।
বিকাল হয়ে আসতেই আমার গাড়ি করে বাড়ি ফেরা। কী দুষ্টুমি করতাম দিদির সঙ্গে মনে নেই, তবে একবার দিদি খুব মেরেছিল আমায়। কারণ এতই উত্ত্যক্ত করেছিলাম। সেইসব স্মৃতি এখন আবছা। তবে এই যে একটা রেলগাড়ি আর আমরা, একটা বৃষ্টির দৃশ্য আর আমরা- এইটুকু থেকে যাবে আমার কাছে। আলাদা হতে দেবে না কখনো। সেই ৯ বছর বয়স থেকে দিদির সঙ্গে থাকা, এই দীর্ঘ যাত্রাপথের এবার অবসান হলো। আমার থেকে মাত্র ৫ বছরের বড় ছিল। সিনেমার মতো বাস্তবেও দিদি আমাকে ছেড়ে চলে গেল।