সুরাইয়া আফরিন হিয়া
নতুন বাংলাদেশ এবং আমাদের প্রত্যাশা

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বিরাট একটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও পালাবদল ঘটেছে। এবং তারপর থেকেই বিগত সরকারের শাসনামলের নানা ব্যর্থতা এবং অনিয়মের চিত্র উঠে আসছে। একজন দেশপ্রেমী, সচেতন ও সাধারণ অরাজনৈতিক নাগরিক ভবিষ্যতের বাংলাদেশে এমন শাসনের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। সাধারণ মানুষ দেখতে চায় আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি জনগণকে স্বনির্ভর করে প্রজা কল্যাণমুখী দেশ, বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ একটি দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, থাকবে না দুর্নীতি, অনিয়ম। যেখানে প্রাধান্য পাবে দেশ ও জনগণের স্বার্থরক্ষা।
কলম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা, মৌলিক অধিকার ও চাহিদা নিশ্চিকরণ, জীবনমানের উন্নয়ন- এগুলোই মূলত নতুন বাংলাদেশে জনসাধারণের স্বপ্ন এবং চাওয়া। সাধারণ মানুষের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে যেসব পরিবর্তন এবং নিশ্চিত করতেই হবে-
জবাবদিহিমূলক শাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি দূর করতে দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থার বিকল্প নেই।
দেশের প্রতিটি নাগরিক যেন স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ, সরকারের কাজের গঠনমূলক সমালোচনা, লেখার মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
জনগণের মৌলিক অধিকার এবং চাহিদা রক্ষা : প্রজাকল্যাণমূলক স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি রাষ্ট্র গঠনে সব নাগরিকের মৌলিক চাহিদা এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা প্রতিটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব, জনগণের প্রাপ্য। মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ, সংবিধানে উল্লেখিত ১৮টি মৌলিক চাহিদাগুলো রক্ষা করতে পারলেই একটি দেশের নাগরিক স্বনির্ভর ও স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান মৌলিক অধিকার ও চাহিদা রক্ষার অবস্থাচিত্র সন্তোষজনক নয়। ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ বৈষম্য বাড়ছেই। হত্যা, ছিনতাই, নির্যাতন, সন্ত্রাস আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছেই। নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। নারীরা অভিভাবকত্ব ও উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত। আইনের প্রয়োগ যথাযথ ও নিরপেক্ষ হচ্ছে না।
উৎপাদনকারীরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত। দরিদ্ররা আরো দরিদ্র হচ্ছে। কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার বাড়ছে।
এই ভয়াবহ সম্যসাগুলো সমাধান অনেক চ্যালেঞ্জিং। সদিচ্ছা ও নিরপেক্ষতা না থাকলে সমাধান সম্ভব নয়। পুরো প্রক্রিয়াটিকেই সংস্কার করতে হবে।
শক্তিশালী অর্থনীতির স্বনির্ভর দেশ বিনির্মাণ : বহির্বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত হতে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়া আবশ্যক। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলো একটি প্রক্রিয়া বা চলনশীল গতি, যার দ্বারা দীর্ঘকালীন মেয়াদে একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃত জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়। অপার সম্ভাবনা থাকার পরেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বাধা রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ ছাড়া দারিদ্র্য, অনুন্নত কৃষি, অধিক জনসংখ্যা, অদক্ষ জনগোষ্ঠী, দুর্নীতি, দেশের টাকা বিদেশে পাচার, শিক্ষার অনগ্রসরতা উল্লেখযোগ্য।
এই বিরাট জনসংখ্যাকে শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন করে দক্ষ ও কর্মমুখী শিক্ষা দিয়ে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। কাজের ক্ষেত্র বৃদ্ধি করতে হবে। দুর্নীতি রোধ করতে পারলে অনেককিছুই সহজ হয়ে আসবে। রপ্তানিপণ্যের বাজার বড় করে এই খাতে যতœবান হয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ আরো সুগম করতে হবে। বিদেশে প্রবাসীদের কাজের পরিবেশ সম্পর্কে খবরাখবর রেখে তাদের অসুবিধাগুলো দূর করে কাজের পরিবেশ নিরাপদ করে আরো দক্ষ কর্মী প্রেরণ করতে হবে।
ঋণখেলাপি রোধ, জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা এনে সব চ্যালেঞ্জ বাধা দূর করে, প্রতিহিংসামূলক ক্ষতিকর রাজনীতি ত্যাগ করে সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে আমাদের বাংলাদেশ বিশ্বে স্বনির্ভর, মর্যাদাপূর্ণ দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে- এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
শিক্ষার্থী, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া।
suraiyaa458@gmail.com