হৃদয় পান্ডে
কিশোর গ্যাংয়ের হুমকি প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বর্তমান সময়ে সমাজে কিশোর গ্যাং কালচারের উত্থান উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। সাধারণত শহুরে এলাকাগুলোতে বেশি দেখা গেলেও এই সমস্যা এখন গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। ‘কিশোর গ্যাং’ বলতে কিশোর বয়সি ছেলেমেয়েদের এমন এক দলকে বোঝানো হয়, যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে এবং নিজেদের শক্তি প্রদর্শন ও ক্ষমতার দাপট দেখায়। কিশোরদের গ্যাং সংস্কৃতি একটি সামাজিক সংকট হিসেবে পরিগণিত হয়েছে, যা শুধু কিশোরদের নয়, বরং সমগ্র সমাজের জন্য একটি বিরাট হুমকি হয়ে উঠেছে।
এসব কিশোরের অধিকাংশই আসলে আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছে। তারা সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে অপরাধের পথে পা বাড়ায়। অনেকেই গ্যাংয়ের অংশ হয়ে শক্তি প্রদর্শন, প্রতিশোধ নেয়া বা নিজেদের গোষ্ঠীকে রক্ষা করতে চায়। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের সহিংস মানসিকতা গড়ে ওঠে, যা ভবিষ্যতে তাদের জীবনে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে কিশোর গ্যাং অপরাধ দমনের জন্য আইন ও প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও দেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়, তবে আইন কার্যকর না হওয়ায় এবং বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় কিশোর গ্যাং কালচার দমন করা বেশ কঠিন। অনেক সময় কিশোরদের অপরাধমূলক কাণ্ডে আইনমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ থাকে, যা কিশোরদের শাস্তি থেকে মুক্ত রাখে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুলিশ প্রশাসন বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে কিশোর গ্যাংদের দমন করতে চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং সংঘর্ষ প্রতিরোধের জন্য শহরগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তবে শুধু পুলিশি ব্যবস্থা নয়, বরং একটি নীতি ও সামাজিক সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিশোর গ্যাং কালচার প্রতিরোধের জন্য একটি সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশাসন এবং সামাজিক সংগঠনগুলো একসঙ্গে কাজ করতে পারে। প্রথমত, পরিবারের উচিত তাদের সন্তানদের প্রতি সঠিক যতœ এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করা।
সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য। কিশোর গ্যাং কালচার সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মশালা, আলোচনা সভা এবং প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা দরকার। তরুণদের সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য সামাজিক সংগঠনগুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে। এছাড়া গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো কিশোরদের মধ্যে ইতিবাচক মূল্যবোধ প্রচার করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। কিশোর গ্যাং কালচারের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে অন্য কিশোররা এ ধরনের কার্যকলাপে জড়িত হওয়ার আগে ভেবে দেখে। কিশোর গ্যাং কালচার একটি সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে, যা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা সমাধান করা সম্ভব নয়। এটি প্রতিরোধে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ এবং প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। কিশোরদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করা সম্ভব। কিশোর গ্যাং কালচারের সামাজিক প্রভাব, পারিবারিক সম্পর্ক এবং ভবিষ্যৎ জীবনের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তা আমাদের সবার সম্মিলিত উদ্যোগে প্রতিরোধ করতে হবে। সমাজে সুশাসন এবং নৈতিক মূল্যবোধের ওপর জোর দিলে এই সংকটের সমাধান সম্ভব।
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।
hridoypandey333@gmail.com