টাকা না ছাপিয়েই ৪ ব্যাংককে সহায়তা দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কাগজ ডেস্ক : ব্যাপক অনিয়মের কারণে, তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা বেসরকারি খাতের ৪ ব্যাংক- ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে নগদ অর্থ সহায়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টাকা না ছাপিয়েই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এ সহায়তা দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এ চারটি ব্যাংক অর্থ সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল সহায়তা চেয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১৫ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দেয়া হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
সম্প্রতি এ ৪ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে বৈঠক করে ব্যাংকগুলো কত টাকা জোগান পেলে সংকট থেকে বের হতে পারবে সেই তথ্য নিয়েছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। পরে প্রতিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন তিনি। তখন কোন ব্যাংককে কি পরিমাণ অর্থ সহায়তা দেয়া হবে, সে ব্যাপারে ধারণা দিয়েছেন গভর্নর।
ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান ব্যাংকগুলোর তারল্য সহায়তা নিয়ে গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারটি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, সভায় গভর্নর ব্যাংকগুলোকে জানিয়েছেন- উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারনে টাকা ছাপিয়ে সহায়তা করা হবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম এবং বিল ও বন্ড বাজারে বিক্রির নিজস্ব আয় থেকে ব্যাংকগুলোকে এ সহায়তা দেবে।
এদিকে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে- ৫ আগস্টের পর থেকে ব্যাংকগুলো এস আলম গ্রুপের এলসি খুলতে রাজি হচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে রমজানের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নিশ্চিত করতে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ভোজ্যতেল, চিনি ও আটা-ময়দার কোম্পানিগুলোর এলসি খুলতেও ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছেন গভর্নর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা চেয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (এফএসআইবিএল)।
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, বর্তমানে অন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার করার প্রক্রিয়াটি বেশ শ্লথগতির। আমরা পাঁচ থেকে সাতটি ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করেছি, আমাদের প্রস্তাবগুলো তারা তাদের বোর্ডের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠায়। অনুমোদন হলে একেকবারে মাত্র ৫০ থেকে ১০০ কোটি টাকা পাওয়া যায়। এভাবে গত আড়াই মাসে মাত্র ১ হাজার কোটি টাকার মতো পেয়েছে এফএসআইবিএল, যা ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানত তুলে নেয়ার চাপ মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ন্যাশনাল ব্যাংক সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার সহায়তা চেয়েছে বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বেসরকারি খাতের পুরনো এ ব্যাংকটিকে ৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিতে পারে বলে জানা গেছে।
অন্য ব্যাংক থেকে ন্যাশনাল ব্যাংক এখন পর্যন্ত ৮০০ কোটি টাকা ধার পেয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কিন্তু আমানতকারীদের টাকা তোলার চাপের কাছে এ তহবিল তেমন স্বস্তি দিতে পারেনি ব্যাংকটিকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা পেলে ন্যাশনাল ব্যাংক তিন মাসের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে উল্লেখ করে ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, দীর্ঘদিন একটা পরিবারের করায়ত্ত থাকায় ব্যাংকটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহুবিধভাবে অন্যায়-দুর্নীতি হয়েছে। গত ১৫ বছরে ব্যাংকের আসল মালিক-গ্রাহকদের স্বার্থ বাদ দিয়ে মুষ্টিমেয় শেয়ারহোল্ডাররা মালিক দাবি করে এসব করেছে। গ্রাহকদের আস্থা বাড়ানোই আমার প্রথম কাজ।
এদিকে বেক্সিমকোসহ বড় কয়েকটি শিল্প গ্রুপের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ আটকে আছে ন্যাশনাল ব্যাংকের। এসব গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ উদ্ধারের কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন কোন কোন ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে সেটেল করছি, যারা ১ থেকে ২ কোটি টাকার মতো ছোট অংকের ঋণ নিয়েছে। এরপর বড় বড় গ্রাহকদের সঙ্গে আমরা নেগোসিয়েশন (আলোচনা) শুরু করব।
তাদের ব্যবসা বন্ধ করে— আমরা টাকা আদায়ের পথে যাব না। বরং ব্যবসা সচল রেখে কীভাবে তারা ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে পারে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক তারল্য সংকটের কারণে আমানতকারীদের টাকা দিতে পারছে না। অনেক গ্রাহক দিনের পর দিন ঘুরেও ব্যাংকগুলো থেকে সামান্য পরিমাণ টাকাও পাচ্ছেন না।
তাদের মতে, আরো দুটি সংকটে থাকা ব্যাংক হচ্ছে- এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ইউনিয়ন ব্যাংক ও নাফিজ শারাফাতের মালিকানাধীন পদ্মা ব্যাংক, তবে এ দুই ব্যাংককে সহায়তার জন্য ডাকেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকও মারাত্মক তারল্য সংকটে পড়েছিল। তবে ব্যাংকটি এখন ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।