×

মুক্তচিন্তা

জাতিসংঘের সাফল্য, ব্যর্থতা ও কার্যকারিতা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২২, ১২:১৪ এএম

জাতিসংঘের সাফল্য, ব্যর্থতা ও কার্যকারিতা

১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর ৫১টি রাষ্ট্রের জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং পরে লুপ্ত লীগ অব নেশন্সের স্থলাভিষিক্ত হয়। বর্তমানে বিশ্বের ১৯৩টি দেশ ও দুটি পর্যবেক্ষণকারী দেশ জাতিসংঘের সদস্য। শক্তিধর দেশের উদ্যোগে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হলেও জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠাকালে সারা বিশ্বের মানুষ ও অধিকাংশ দেশগুলো এটাকে সমর্থন দিয়েছিল। সবার প্রত্যাশা ছিল একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার। হানাহানি, যুদ্ধ, ধ্বংস শেষ করে এবার বিশ্বে শান্তি বিরাজ করবে। সারা বিশ্বে এবার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের যে স্থায়ী সদস্য দেশগুলো ছিল তাদের ওপর সবার প্রত্যাশা ছিল বেশি। তারা পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করবে এবং পাশাপাশি অন্য ক্ষুদ্র বা অনুন্নত রাষ্ট্রগুলোকেও সহায়তা করবে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য দূর হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। অনেকে বলেন জাতিসংঘ তার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য পালনে অনেক ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে। প্রথমত, জাতিসংঘ উপনিবেশবাদের সমাপ্তি ঘোষণা করতে পেরেছে। রাষ্ট্রগুলোকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব দান করতে জাতিসংঘের ভূমিকা গৌরবোজ্জ্বল। ষাটের দশকে এশিয়া, আফ্রিকা মহাদেশের জাতীয়তাবাদের মুক্তিসংগ্রামকে জাতিসংঘ সহায়তা করেছে। যেসব জনগোষ্ঠী নিজেদের ভূখণ্ড, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছে, সেগুলোকে জাতিসংঘ নির্বিঘেœ সহায়তা করেছে। ফলে উপনিবেশবাদ থেকে বিশ মুক্ত হয়েছে। অনেক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের এই উদ্যোগ অনেক বেশি ইতিবাচক ও সার্বজনীন। জাতিসংঘ কর্তৃক শান্তি রক্ষা মিশন জাতিসংঘের একটি বড় সফলতা। শান্তি রক্ষা মিশনের মাধ্যমে জাতিসংঘ যুদ্ধে আক্রান্ত দেশগুলোকে সহায়তা করছে, বিভিন্ন আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক বিদ্রোহ দমনে সেই রাষ্ট্রগুলোকে শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা সহায়তা করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। তবে বর্তমান বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। জাতিসংঘকে অনেকেই কাগুজে বাঘ বলে থাকে, কারণ জাতিসংঘের অনেক কার্যাবলি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পঞ্চভূত বা পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের ভেটো পাওয়ারের কাছে অসহায় ও সীমাবদ্ধ। তাছাড়া জাতিসংঘ মূলত বৃহৎ শক্তিধর দেশের চাঁদায় পরিচালিত এবং কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে চাঁদা দানকারী দেশগুলোও মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ অনেক সময় বৃহৎ পাঁচ স্থায়ী সদস্যের কাছে অসহায়বোধ করে। তবে চলতি বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বব্যবস্থায় নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মার্কিনিদের একক আধিপত্য এখন বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে। আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের পুনঃজাগরণ ও পরাশক্তির ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় রাশিয়া মরিয়া হয়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুনিয়াজুড়ে তাদের একক আধিপত্য তৈরি, ন্যাটো সামরিক জোটের সম্প্রসারণ, ইউরোপের রাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সংস্কার এবং এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অংশীদারিত্বের নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। বিশ্বশান্তি ও সমৃদ্ধিকে এগিয়ে নেয়ার পথে এখন ভারত, চীন ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি সৌদি আরব, মেক্সিকো, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম রাশিয়ার বিরুদ্ধে একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে মানছে না, বিশ্বরাজনীতির গতি প্রকৃতিতে ও নতুন মেরুকরণ স্পষ্ট হচ্ছে বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, ইরান, ভেনিজুয়েলা, সিরিয়া ও কিউবা মার্কিন এবং পশ্চিমা শক্তির তথা ন্যাটো জোটের বিপরীতে। দুই পরাশক্তির ভারসাম্য ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের মাঝে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তি বিনির্মাণ প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে। এ ধরনের সংঘাতে পঞ্চশক্তির বাইরে গিয়ে জাতিসংঘ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না, এখানেই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার মূল ব্যর্থতা।

মো. জিল্লুর রহমান : গেণ্ডারিয়া, ঢাকা। zrbbbp@gmail.com

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা

জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা

ঢাকাসহ ১৭ অঞ্চলে দুপুরের মধ্যে ঝড়ের আভাস

ঢাকাসহ ১৭ অঞ্চলে দুপুরের মধ্যে ঝড়ের আভাস

তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তার বাসায় ইসরায়েলের হামলা

তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তার বাসায় ইসরায়েলের হামলা

প্রতারণা করে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে কারাদণ্ড

অধ্যাদেশ জারি প্রতারণা করে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে কারাদণ্ড

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App